অন্ধকারে বাংলাদেশ

জাতীয় গ্রিড বিপর্যয়ের পর বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে বাংলাদেশ। ত্রুটি সারতে কাজ চলছে জানালেও কখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, তা সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীও।

রিয়াজুল বাশারবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Nov 2014, 10:49 AM
Updated : 1 Nov 2014, 02:42 PM

শনিবার সকাল সাড়ে ১১টায় জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়ের পর সারাদেশ বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়ে। এরপর মেরামত কাজ চলার মধ্যেই বিকালে আবার গ্রিডে বিপর্যয় দেখা দেয়।

ফলে সন্ধ্যা নামার পর থেকে অন্ধকারে ডুবে যায় রাজধানী ঢাকাসহ গোটা দেশ। এর মধ্যে সামান্য পরিমাণ বিদ্যুৎ সরবরাহ হলেও তা চাহিদার তুলনায় নগন্য।

দেশের ইতিহাসে বড় বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের পর মানুষের মধ্যে উদ্বেগের পাশাপাশি নানা ধরনের গুজবও ছড়িয়ে পড়ে। এর কারণ তদন্তে একটি কমিটি করেছে কর্তৃপক্ষ।    

বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু সন্ধ্যায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা রিকভারির কাজ করছি। তবে সময় লাগবে।”

এর আগে বিকালে বিদ্যুৎ বিভাগ সন্ধ্যার মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আশা দেখিয়েছিল। কিন্তু মেরামতের মধ্যেই পুনরায় বিপর্যয় দেখা দিলে তা আর হয়নি।

বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, “আমরা দ্রুত রিকভারি করতে গিয়েছিলাম। ৭০০ পর্যন্ত (মেগাওয়াট) রিকভার করেছিলামও। এর মধ্যেই গ্রিড আবার ফেইল করে। দ্রুত এগোনোয় সমস্যা হয়েছে।

“এখন আমরা স্লোলি (ধীরে) এগোচ্ছি। ঢাকাতে আমরা বন্ধ রেখেছি। আমরা বাইরের সাইড থেকে চালু করে করে আসছি। এখন আর মিস করা যাবে না।”

বিদ্যুৎ সরবরাহ দিতে সময় লাগার কারণে দেশবাসীকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছেন বিদ্যুৎ সচিব মনোয়ার হোসেন।

বিদ্যুৎ না থাকায় হাসপাতালগুলোতে রোগীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় মোমবাতির দাম গেছে বেড়ে।

ছবি: সুমন বাবু/ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

ছবি: তানভীর আহমেদ/বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

অন্যদিকে জেনারেটরগুলো সচল রাখতে রাজধানীর পেট্রোল পাম্পগুলোতে ডিজেলের জন্য কন্টেইনার হাতে দেখা যাচ্ছে বিকাল থেকেই।

সকালে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় বাংলাদেশ ও ভারতের সরবরাহ লাইনে ত্রুটি থেকে সারাদেশে এই বিদ্যুৎ বিপর্যয় নেমে আসে বলে কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়। ওই লাইন দিয়ে ভারত থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করে বাংলাদেশ। 

কুষ্টিয়ার কর্মকর্তারা বলেন, ভেড়ামারার রামকৃষ্ণপুরে অবস্থিত ৫০০ মেগাওয়াট এইচভিডিসি ভারত-বাংলাদেশ ব্যাক টু ব্যাক বিদ্যুৎ সঞ্চালন কেন্দ্রে আকস্মিক বিপর্যয় ঘটে।

ব্যাক টু ব্যাক বিদ্যুৎ সঞ্চালন কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আলমগীর হোসেন বলেন, “বেলা ১১ টা ২৭ মিনিট ২৮ সেকেন্ডের সময় হঠাৎ করে এ কেন্দ্রে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ব্ল্যাক আউট হয়।”

লো-ভোল্টেজ বা অন্য কোনও কারণে এই বিপর্যয় ঘটে থাকতে পারে বলে ধারণার কথা জানান তিনি।

এরপর সারাদেশ থেকে বিদ্যুৎ না থাকার খবর আসতে থাকে।

পিডিবি চট্টগ্রাম অঞ্চলের জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) মো. মনিরুজ্জামান জানান, সকাল সাড়ে ১১টায় জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়ের পর থেকে চট্টগ্রামের কেন্দ্রগুলো থেকে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়।

একই সময় আশুগঞ্জ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নয়টি ইউনিটে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায় বলে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কারিগরি বিভাগের পরিচালক সাজ্জাদুর রহমান জানান।

ভেড়ামারায় আন্তঃদেশীয় গ্রিডের ওখান থেকেই সমস্যা হয়েছে কী- জানতে চাওয়া হলে বিদ্যুৎ সচিব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “না না না। না না না। টেকনিক্যাল ফল্টটা খতিয়ে দেখতে আমরা একটা কমিটি করেছি। কমিটি খতিয়ে দেখার আগে কথা বলা ঠিক না।”

বিকালে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির (পিজিসিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুম-আল-বেরুনির কাছে কারণ জানতে চাওয়া হলে তদন্ত কমিটি গঠনের কথা জানিয়ে তিনিও এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।

পিজিসিবির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিদ্যুৎ বিভ্রাট এর কারণ নিরূপন, দায়-দায়িত্ব নির্ধারণ এবং ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয় সেজন্য বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) এর নেতৃত্বে ৭ (সাত) সদস্যের একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এই কমিটিকে আগামী ৩ (তিন) কার্যদিবসের মধ্যে সচিব, বিদ্যুৎ বিভাগ, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি /বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের পর প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বেলা সোয়া ১টার দিকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “জাতীয় গ্রিড ফেইল করেছে। আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কিছু কিছু জায়গায় বিদ্যুৎ আসতে শুরু করেছে। পুরো সিকোয়েন্স ঠিক করতে আরও প্রায় ঘণ্টাখানেক লেগে যাবে।”

এরপর পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়ে, “বেলা ১১ টা ২৮ মিনিটে কারিগরি ত্রুটির কারণে জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রিডে সাময়িকভাবে বিপর্যয় ঘটে। ফলে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে সারাদেশে গ্রাহকগণকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না।

“দুপুর ১২ টা ২৬ মিনিটে জাতীয় গ্রিডে পুনরায় বিদ্যুৎ সংযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়। পর্যায়ক্রমে সকল বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদন শুরু করা হচ্ছে। আশা করা যায়, অতি অল্প সময়ের মধ্যে সমগ্র দেশে বিদ্যুৎ পুনরায় সংযোগ করা সম্ভব হবে।”

বিকাল সোয়া ৪টার দিকে পিজিসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ইতোমধ্যে কোথাও কোথাও বিদ্যুৎ আসতে শুরু করেছে। সন্ধ্যার মধ্যে সরবরাহ স্বাভাবিক করার লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।”

শনিবার ৬ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট চাহিদা থাকলেও বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহের কথা জানিয়েছিলেন বিদ্যুৎ সচিব মনোয়ার।

মেরামতের এক পর্যায়ে সরবরাহ ৭০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত উঠেছিল, কিন্তু এর পর বিপর্যয় দেখা দিলে তা ২০০ মেগাওয়াটে নেমে আসে। 

বিদ্যুৎ সচিব তখন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা অনেকগুলো এলাকা কভার করে ফেলেছিলাম। কিন্তু সিস্টেমটা আবার বিট্রে করেছে।

“আমরা অপেক্ষা করছি, কাজ করছি। আমরা সবাই আছি, কাজ করছি।”

দেশব্যাপী এর বিপর্যয়ের মধ্যেই কিছু স্থানে বিদ্যুৎ সরবরাহ চলছিল।

সিলেট বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ কেন্দ্র-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল হোসেন জানান, কুমারগাঁওয়ে অবস্থিত ২০ মেগাওয়াট কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ দিয়ে কয়েকটি এলাকায় কিছু সময় করে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।