ছবি তুলতে ডেকে নিয়ে অপহরণ

বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি সৌখিন ফটোগ্রাফার হিসাবে কাজ করে টুকটাক আয় করতেন বাঁধন রায়। এই শখ যে ফাঁদ হয়ে দাঁড়াবে কল্পনায়ও ভাবনায় আসেনি তার।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 Oct 2014, 07:01 AM
Updated : 31 Oct 2014, 08:04 AM

বুধবার এমনই এক ফাঁদে পড়ে অপহরণকারীদের শিকারে পরিণত হন বাঁধন। মুক্তিপণ হিসাবে চাওয়া হয় দুই লাখ টাকা। খোয়ান ক্যামেরা, মোবাইল ফোন।  

বাঁধন ধানমণ্ডিতে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র।

তার বাবা বিধান রায় জানান, বুধবার দুপুরে একটি অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন পায় বাঁধন। তাকে বলা হয় মোহাম্মদপুরের বছিলায় একটি জন্মদিনের অনুষ্ঠানের ছবি তুলতে পারবে কি না। কোনো কিছু না ভেবেই ছবি তুলতে রাজি হয়ে যায় সে।

“বিকালে বন্ধু জাহাঙ্গীরকে সঙ্গে নিয়ে অপহরণকারীদের দেওয়া ঠিকানায় যায় তারা। ওই বাসায় গেলে প্রথমে সঙ্গে থাকা ক্যামেরা ও মোবাইল ফোন কেড়ে অপহরণকারীরা। তারপর তাদের বেঁধে রেখে মুক্তিপণের জন্য দুই লাখ টাকা চেয়ে ফোন দেয়।”   

বিভিন্ন বাসা বাড়িতে গিয়ে টিউশনি করেন বিধান রায়।

তিনি জানান, ফোন পেয়েই ছেলের সন্ধানে বেরিয়ে পড়েন তিনি। পরিচয়ের সূত্র ধরে এক গোয়েন্দা কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করে ফোন ট্র্যাকিং করে জানতে পারেন অপহরণকারীদের অবস্থান মোহাম্মদপুরের বছিলায়।

অবস্থান জানার পর বিধান রায় ছুটে যান মোহাম্মদপুর থানায়। সব খুলে বলার পর ভোর ৪টার দিকে অভিযান শুরু হলেও উদ্ধারে ব্যর্থ হয় পুলিশ।

শিক্ষক বিধান বলেন, “অভিযান চলার মধ্যেই অপহরণকারীরা টাকা দেওয়ার জন্য তাগাদা দিতে থাকে। পরে কয়েকজনের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা জোগাড় করার কথা বললে সেটিই বিকাশের মাধ্যমে পাঠাতে বলে তারা। তবে বিকাশ কেন্দ্র খোলা না পেয়ে টাকা পাঠাতে ব্যর্থ হই।”

এর মধ্যেই গোয়েন্দা পুলিশের অপর একটি দল অভিযান শুরুর প্রস্তুতি নিলে নিজেদের সূত্র থেকে জানতে পারে অপহরণকারীরা বাঁধন ও জাঙ্গীরকে ছেড়ে দিয়েছে।

সকাল ৮টার দিকে ছেলের ফোন পেয়ে মুক্তির বিষয়ে নিশ্চিত হন বিধান রায়।

তিনি বলেন, “ছেলের কাছে শুনেছি যে ঘরে তারা আটকে রেখেছিল তার পাশের ঘরে পূর্বের কোনও টাকার ভাগাভাগি নিয়ে রাতেই কয়েকজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হচ্ছিল। সকালে এদেরই একটি গ্রুপ সুযোগ বুঝে তাদের ছেড়ে দিয়ে দ্রুত চলে যেতে বলে।”

এ ঘটনায় একটি মামলা করেছেন বলেও জানান বিধান রায়।

এদিকে সিআইডির কয়েকজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, একটি চক্র দীর্ঘদিন থেকে অনুষ্ঠানের ছবি তোলার নাম করে ডেকে এনে ক্যামেরা, মোবাইলসহ বিভিন্ন মূল্যবান জিনিস নিয়ে নেয়। পরে তাকে আটকে রেখে জিম্মি করে এবং কোন পতিতাকে জড়িয়ে ছবি তুলে মোটা অংকের টাকা আদায় করে থাকে।

মোহাম্মদপুর ও হাজারীবাগ এলাকায় গত কিছুদিনে এ ধরনের অন্তত চারটি ঘটনা ঘটেছে বলে সিআইডির ওই সূত্র জানিয়েছে।

হাজারীবাগ থানার ওসি মাইনুল ইসলাম জানান, পুলিশ সকালে বাঁধন এবং জাহাঙ্গীরকে নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েও কাউকে পায়নি। সেখানে কারা ছিল সে ব্যাপারে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।