‘এমন সৎ মানুষ আর জন্ম নেবে কিনা জানি না’

জাতীয় অধ্যাপক সালাহ্উদ্দীন আহমদ যেমন বরেণ্য ইতিহাসবিদ ছিলেন; তেমনি ব্যক্তিজীবনে ছিলেন সৎ, শুদ্ধতার প্রতীক, অতিথি পরায়ণ ও সাধারণের কাছে এক মানবিক গুণ সম্পন্ন মানুষ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Oct 2014, 07:31 PM
Updated : 30 Oct 2014, 07:31 PM

‘বরেণ্য ইতিহাসবিদ জাতীয় অধ্যাপক সালাহ্উদ্দীন আহমদ ধারণ ও আমাদের কিছু কথা: আলোচনা, কবিতাপাঠ ও আবৃত্তি’ অনুষ্ঠানে বৃহস্পতিবার এভাবে তার স্মৃতিচারণ করেন পরিচিতজনরা।

ইতিহাসবিদ সালাহ্উদ্দীন গত ১৯ অক্টোবর মারা যান। তিনি নব্বই পেরোলেও তার স্ত্রী হামিদা খানমের মৃত্যু ঘটে আগে।

স্ত্রীর মৃত্যুর পর সালাহ্উদ্দীন আহমদের সর্বক্ষণের সেবাসঙ্গী ছিলেন অমল কৃষ্ণ হাওলাদার, ২৭ বছর আগে যাকে অসীম মমতায় কাছে টেনে নিয়েছিলেন তিনি।

বনানীতে নিজের ফ্লাটে মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত এখন মধ্যবয়সী অমল ছিলেন তার ছায়াসঙ্গী।

এ শিক্ষকের অনেক পিএইচডি ডিগ্রিধারী ছাত্র যেমন রয়েছে, তেমনি দেশের নানা অর্জনে ভূমিকা রাখা শুভাকাঙ্ক্ষীও রয়েছে। পাঠদানে যেমন ছিলেন তীক্ষ্ণ, দক্ষ; তেমনি ইতিহাস চর্চায় ছিলেন শুদ্ধাচারী।

এর ফাঁকেও ব্যক্তি জীবন ছিল খুবই এক সাধারণ মনের ছোঁয়ায় ভরা।

রাজধানীর পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে আয়োজিত স্মরণসভায় আবেগাপ্লুত কণ্ঠে অমল তুলে ধরেন তার সঙ্গে কাটানো ২৭ বছরের অভিজ্ঞতা।

সালাহ্উদ্দীন আহমদ কিভাবে তাকে নিজের পরিবারের সদস্য করেছিলেন সেই কাহিনী উঠে আসে অমলের কথায়।

তিনি বলেন, “আমি জাতীয় জাদুঘরে একটি প্রকল্পে কাজ শুরু করেছি; তখন সবচেয়ে ছোট কর্মচারী ছিলাম। স্যার ছিলেন প্রকল্প পরিচালক। আমার প্রথম কর্মদিবসেই এ মহান ব্যক্তির সঙ্গে পরিচয়।”

শিক্ষক সালাহ্উদ্দীন পরম মমতায় প্রথম ঢাকা আসা তরুণ অমলের খোঁজ-খবর নেন। থাকা-খাওয়ার বন্দোবস্ত করেন।

“স্যার তখন স্কুটারে চলতেন। আমাকে তার বাসায় নিয়ে যাওয়ার জন্যে, আমার আসা-যাওয়ার পথ চেনানোর জন্যে স্যার নিজেও বাসে চড়লেন। তিনি অনেক বড় মনের মানুষ।”

সেই ১৯৮৭ সাল থেকে মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত সবসময়ই পাশে থেকে সেবা করে গেছেন অমল।

“স্যার ছিলেন ধর্ম-নিরপেক্ষ মানুষ। অত্যন্ত ভালো, সৎ মানুষ। তার অনেক ছাত্র এখন শিক্ষক, পিএইচডি করেছেন তার কাছে, দেশবরেণ্য অনেক লোক তার বন্ধু-বান্ধব; সব সময় তার খোঁজ নিয়েছেন।”

অশ্রুসিক্ত অমল বলেন, “১৯৮৭ সাল থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমি স্যারের সঙ্গে ছিলাম। ২৭ বছর তাকে আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি। এমন সৎ মানুষ জন্ম নেবে বলে আমি মনে করি না। এমন ভালো মানুষ আর আছে বলেও জানি না।”

অমলকে ‘ম্যানেজার’ বলে অভ্যাগতদের পরিচয় করিয়ে দিতেন স্যার। এমন ভালো মানুষের সেবা করার জন্যে সব সময়ই নিজেকে উজাড় করে দেওয়ার কথা তুলে ধরেন অমল।

“আমি আমার স্ত্রীকে ঢাকায় আনিনি। তাকে আনলে আলাদা বাসা নিয়ে থাকতে হবে; তখন স্যারের বাসায় দেখাশুনা করা যাবে না। আমি স্যারের দেখাশুনা করতে পেরেছি এজন্য,” বলেন তিনি।

সব বয়সীদের সম্মান করা, অতিথিদের খাওয়া-দাওয়া, বাসায় পৌঁছে দেওয়া সব কিছুই তিনি নজর রাখতেন বলে জানান অমল।

শেষ সময়ে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী সম্পাদনে ইতিহাসের এই অধ্যাপক দিন-রাত প্ররিশ্রম করে গেছেন বলে জানান অমল।

শিল্পিত নামের একটি সংস্থার আয়োজনে এ অনুষ্ঠানে ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আখতারুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন।