সম্পর্ক সম্প্রসারণে আগ্রহী আমিরাত: প্রধানমন্ত্রী

বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি নেয়ার পাশাপাশি দুই দেশের সহযোগিতামূলক সম্পর্কের ক্ষেত্র বাড়াতে  সংযুক্ত আরব আমিরাতের নেতারা আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Oct 2014, 03:03 PM
Updated : 30 Oct 2014, 03:03 PM

আমিরাত সফর নিয়ে বৃহস্পতিবার গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন শেখ হাসিনা।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, “সকল বিবেচনায় আমার আরব আমিরাত সফর অত্যন্ত সফল হয়েছে। দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন ইস্যুতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের নেতৃবৃন্দের সাথে আমার গঠনমূলক আলোচনা হয়েছে।

“এ সফরের ফলে সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশিদের জন্য শ্রম বাজার নতুন করে উন্মুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। এর পাশাপাশি সহযোগিতার অন্যান্য ক্ষেত্রেও দুদেশের ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।”

সহযোগিতার ক্ষেত্র সম্প্রসারণ এবং নতুন নতুন ক্ষেত্র চিহ্নিত করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “ব্যবসা, বিনিয়োগ, উচ্চ শিক্ষা, পর্যটন, অবকাঠামো উন্নয়ন, সংস্কৃতি, জ্বালানি, জলবায়ু পরিবর্তন, সমুদ্রভিত্তিক ব্লু ইকোনমি ইত্যাদি ক্ষেত্রে দুই দেশের পারস্পারিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে তারা একমত হয়েছেন।”

এর ফলে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক শুধু জনশক্তি রপ্তানিতে সীমাবদ্ধ না থেকে নতুন নতুন বিষয়ে ব্যাপ্তি লাভ করতে শুরু করেছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, সফরকালে সেদেশের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও এগিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে যেসব বিষয়ে আলোচনা ও মতৈক্য হয়েছে তার সারসংক্ষেপ যৌথ ইশতেহারে প্রতিফলিত হয়েছে।  

টানা দ্বিতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর মধ্যপ্রাচ্যে প্রথম সফরে শনিবার আবুধাবি পৌঁছান শেখ হাসিনা। তার সফরকালে সাজাপ্রাপ্ত আসামি হস্তান্তর চুক্তি এবং বাংলাদেশ থেকে নারীকর্মী পাঠানোর বিষয়ে চুক্তি হয়েছে।

সফরে দেশটির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে  তার হোটেলে এসে সাক্ষাত করেন দুবাইভিত্তিক বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় সমুদ্র বন্দর ব্যবস্থাপনা কোম্পানি দুবাই পোর্ট ওয়ার্ল্ডের চেয়ারম্যান সুলতান বিন আহমেদ সুলায়েম।

সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা বলেন, “বৈঠকে আমি ডিপি ওয়ার্ল্ডের চেয়ারম্যানকে পটুয়াখালীর পায়রায় একটি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের পরিকল্পনার কথা জানাই এবং এতে বিনিয়োগের জন্য আহ্বান জানাই।”

বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে টেকনাফ থেকে মীরসরাই পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভওয়ে নির্মাণের সিদ্ধান্তও ডিপি ওয়ার্ল্ডের চেয়ারম্যানকে অবহিত করেছেন বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

সফরের দ্বিতীয় দিন শেখ হাসিনার সঙ্গে তার হোটেলে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ আবদুল্লাহ বিন জায়েদ আল নাহ্ইয়ান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ থেকে সেদেশে শ্রমিক নিয়োগের প্রক্রিয়া সহজ করার আশ্বাস দেন। এজন্য ঢাকায় তাদের দূতাবাসে  আগামী বছরের শুরুতে একজন লেবার অ্যাটাশে নিয়োগ দেওয়া হবে বলে জানান।”

সফরের শেষ দিন সোমবার দুবাইতে আমিরাতের প্রধানমন্ত্রী ও দুবাইয়ের শাসক শেখ মুহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুমের সঙ্গে বৈঠক করেন শেখ হাসিনা।

ওই বৈঠকে ব্যবসা ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি, শিক্ষাক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ ও মেরিন ড্রাইভওয়ে নির্মাণসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয় বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

বৈঠকের পর দুই নেতার উপস্থিতিতে সাজাপ্রাপ্ত আসামি হস্তান্তর চুক্তি ও বাংলাদেশ থেকে নারীকর্মী পাঠানোর বিষয়ে চুক্তি হয়।  এছাড়া ঢাকায় আমিরাতের দূতাবাসের প্লট হস্তান্তরের জন্যও একটি চুক্তি হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই সফরে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে, যার লক্ষ্য দেশটিতে বাংলাদেশি নারীকর্মীদের নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিত করা। এই সমঝোতার আওতায় ১৪ পেশায় বাংলাদেশি ১ হাজার নারীকর্মী প্রাথমিকভাবে নেবে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি, পরে তা আরও বাড়বে।

এসব নারী শ্রমিকরা সরকারি খরচে আমিরাতে যাবেন বলে এক প্রশ্নের জবাবে জানান প্রধানমন্ত্রী।

“যারা যাবে তারা সম্পূর্ণ আমাদের নজরদারিতে যাবে। এখানে মেয়েরা যাবে তাদের একটা টাকাও খরচ হবে না। আমরা বিনা পয়সায় পাঠাব।”

দালালদের বিষয়ে সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “অনেক অনেক প্রলোভন দেখাবে, সুন্দর সুন্দর স্বপ্ন দেখাবে। বিদেশে যাওয়ার আগে যাচাই করে নেবেন।”

২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ গড়ার পরিকল্পনা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তাদের (আমিরাত নেতৃত্ব) সহায়তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানাই।

“আমার সরকারের নেতৃত্বে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক খাতে সফলতার জন্য তারা আমাকে অভিনন্দন জানান। পদ্মা সেতুর মত বৃহৎ প্রকল্প নিজস্ব অর্থায়নে আমরা বাস্তবায়ন করছি জেনে তারা প্রশংসা করেন।”

কোনো বৈঠকে যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে কোন আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাওয়া হলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “কেউ জানতেও চায়নি; আলোচনাও হয়নি।”