ঢিলেঢালা হরতালে বিক্ষিপ্ত বোমাবাজি, আটক কয়েকশ’

যুদ্ধাপরাধী মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির রায়ের প্রতিবাদে জামায়াতে ইসলামীর ডাকা তিন দিনের হরতালের প্রথম দিন গেছে বড় ধরনের গোলযোগ ছাড়াই।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Oct 2014, 02:19 PM
Updated : 30 Oct 2014, 02:31 PM

বৃহস্পতিবারের এই হরতালে দূরপাল্লার গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকলেও অভ্যন্তরীণ রুটে যানবাহন চলাচল করেছিল। ট্রেন, লঞ্চ ও বিমান চলাচল ছিল স্বাভাবিক।

সারাদেশে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থান এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও এর বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের হরতালবিরোধী মিছিলের মধ্যেই কয়েকটি জেলায় বিক্ষিপ্ত বোমাবাজি হয়।

সংঘর্ষের পর কয়েকশ’ জামায়াত নেতা-কর্মীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। জামায়াতের দাবি, গ্রেপ্তারের সংখ্যা ৬ শতাধিক। পুলিশের হামলায় দেড়শ’ জন আহত হয়েছে বলেও দলটি দাবি করেছে।

হরতালে রাজধানীতে একটি বাসে আগুন দেওয়া হয়।কয়েকটি হাতবোমাও ফাটানো হয়। এছাড়া মিছিল করতে গিয়ে কয়েকটি স্থানে পুলিশের ধাওয়ার মুখে পড়তে হয় জামায়াতকর্মীদের।

রাজশাহী, রংপুরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা। বগুড়ায় পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে হাতবোমা ছোড়া হয় জামায়াতের মিছিল থেকে। গাইবান্ধায় রাস্তা থেকে জামায়াত-শিবিরের ব্যারিকেড সরানোয় বাধা পেয়ে গুলি চালায় পুলিশ।

এছাড়া বরিশাল, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুরে হরতাল সমর্থকরা রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে ও বোমা ফাটিয়ে আতংক সৃষ্টির চেষ্টা করে।

বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতের আমির নিজামীর মৃত্যুদণ্ড দেওয়ায় পর বৃহস্পতি, রবি ও সোমবার হরতাল ডাকে দলটি।

হরতাল ডাকার পর বুধবারই রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর কাজলায় একটি গাড়ি পোড়ানো হয়। একই এলাকায় বৃহস্পতিবার হরতালের মধ্যে বোরাক পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেওয়া হয়।

সন্ধ্যার পর পল্টন মোড়ে পরপর পাঁচটি হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। তবে দোষীদের ধরতে পারেনি পুলিশ। এর আগে সকালে হাজারীবাগের একটি বাসার সামনে থেকে আটটি হাতবোমা উদ্ধার করে র‌্যাব।

লালবাগে মিছিলের চেষ্টার সময় এবং মিরপুরে একটি মেসে অভিযান চালিয়ে পুলিশ আটক করে আটজনকে।

পুলিশের বিরুদ্ধে দমন-পীড়নের অভিযোগ তুলে জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল শফিকুর রহমান এক বিবৃতিতে বলেছেন, “হত্যা, জুলুম, নির্যাতন, গণগ্রেফতার ও আহতদের চিকিৎসা বঞ্চিত করে ক্ষমতায় টিকে থাকা যাবে না। দেশের জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে সরকারের সকল জুলুম, নিপীড়নের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলবে।”

বিবৃতিতে তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে জামায়াত ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের ৬ শতাধিক নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে আহত হয়েছেন দেড় শতাধিক নেতা-কর্মী।

রাজশাহীতে সংঘর্ষ, ঝটিকা মিছিল

রাজশাহীতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জাড়ানো ছাড়াও জামায়াত-শিবির কর্মীরা শহরের বিভিন্ন স্থানে ঝটিকা মিছিল ও আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধের চেষ্টা করে।

হরতালে নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগে মহানগর জামায়াতের আমির আতাউর রহমান এবং বাগমারা উপজেলায় হরতালের সমর্থনে মিছিলের সময় ছয় জামায়াত-শিবির কর্মীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

রাজশাহীতে সড়কে আগুন জ্বালিয়ে গাড়ি চলাচল আটকানোর চেষ্টা

বোয়ালিয়া মডেল থানার ওসি খন্দকার নূর হোসেন জানান, সকাল ৭টার দিকে নগরীর হাদির মোড়ে এবং সকাল ৮টার দিকে নগরীর শালবাগান এলাকায় রাজশাহী-নওগাঁ সড়কে গাছ ফেলে ও আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ এবং বিক্ষোভ করে জামায়াত-শিবির কর্মীরা। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর উপস্থিতিতে সরে যায় তারা।

রাজপাড়া থানার ওসি মেহেদি হাসান জানান, সকাল সাড়ে ৭টার দিকে জামায়াত-শিবির কর্মীরা সিটি বাইপাসের ডিঙ্গাডোবা টুলটুলিপাড়া এলাকায় রাস্তায় পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে বিক্ষোভ করে।

খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গেলে জামায়াত-শিবির কর্মীরা পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট নিক্ষেপ করে। এ সময় রাস্তায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়।

এক পর্যায়ে শটগানের ফাঁকা গুলি ছুড়ে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় বলে জানান ওসি।

রংপুরে আহত ১০

বেলা ১২টার দিকে রংপুরে জামায়াতের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত মিঠাপুকুর উপজেলা সদরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জামায়াত-শিবিরের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

মিঠাপুকুর থানার ওসি রবিউল আলম জানান, কয়েকশ জামায়াত-শিবির নেতাকর্মী লাঠিসোটাসহ মিছিল নিয়ে উপজেলা সদরের বাসস্ট্যান্ডে এসে একটি ট্রাক ভাংচুর শুরু করলে পুলিশ বাধা দেয়।

“এসময় তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট ছুড়লে পুলিশ রবার বুলেট ও টিয়ার শেল ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।এসময় কয়েকজন আহত হয়।

পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে উপজেলা জামায়াতের সদস্য ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল বাসেত মারজানসহ তিন নেতাকে আটক করেছে।

বগুড়ায় পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে বোমা

সকালে শহরের পিটিআই মোড়ে হরতালের সমর্থনে জামায়াতের মিছিল থেকে দুটি হাতবোমা ছোড়া হয় বলে জানিয়েছেন সদর থানার ওসি ফায়জুর রহমান।

“জামায়াত-শিবিরকর্মীরা ককটেল নিক্ষেপ করলে পুলিশ টিয়ার শেল ছুড়ে তাদের হটিয়ে দেয়।”

গাইবান্ধায় গাড়ি ভাংচুর, গুলি

পলাশবাড়ী থানার ও সি মজিবুর রহমান জানান, জামায়াত-শিবির কর্মীরা রংপুর-ঢাকা মহাসড়কের পলাশবাড়ী উপজেলা সদরের মহেশপুর, ব্র্যাক মোড়, পলাশবাড়ী-গাইবান্ধা সড়কের পলাশবাড়ী হাসপাতাল মোড় এবং ঠুটিয়াপাকুর এলাকায় ঝটিকা হামলা চালিয়ে ১০টি ট্রাক ও ১টি বাস ভাংচুর করে।

“এসময়গাইবান্ধা থেকে পলাশবাড়ী আসার পথে জেলা পুলিশের সহকারি পুলিশ সুপার (বি-সার্কেল) জহুরুল ইসলামের গাড়ি ঠুটিয়াপুকুর এলাকায় জামায়াত-শিবিরের বেরিকেডের মুখে পড়ে।

“রাস্তা থেকে বেরিকেড সরাতে গেলে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা বাধা দেয়। এসময় পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে শটগানের গুলি ছুড়লেও কেউ হতাহত হয়নি।”

বরিশালে অবরোধ, অগ্নিসংযোগ

ভোর ৬টার আগে নগরীর কাউনিয়া বিসিক এলাকায় গাছ ফেলে রাস্তা অবরোধ করে শিবিরকর্মীরা। তারা নিজামীর মুক্তির দাবিতে শ্লোগান দেয় এবং রাস্তায় পেট্রোল ঢেলে অগ্নিসংযোগ করে।  

এছাড়া নগরীর নবগ্রাম রোড এলাকায় একটি ঝটিকা মিছিলের খবর পাওয়া গেছে।

চাঁদপুরে টায়ারে আগুন

চাঁদপুর থেকে কুমিল্লা, লক্ষ্মীপুর ও জেলার অভ্যন্তরের বিভিন্ন সড়কে সকাল থেকেই টায়ার জ্বালিয়ে অবস্থান নেয় হরতাল সমর্থকরা। তবে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর তৎপরতায় তারা বেশিক্ষণ রাস্থায় থাকতে পারেনি।

চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মো. আমির জাফর জানান, হরতালে নাশকতার চেষ্টাকালে পুলিশ ২ জনকে আটক করেছে।

নওগাঁয় বাস ভাংচুর

মহাদেবপুর থানার ওসি সাইফুল ইসলাম জানান, সকালে নিতপুর থেকে নওগাঁগামী একটি যাত্রীবাহী বাস উপজেলার শিবগঞ্জ মোড় এলাকায় পৌছলে শিবিরকর্মীরা ইট ছুড়ে বাসের কাচ ভাংচুর করে। 

“এসময় ধাওয়া করে উপজেলা ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি মেহেদী হাসানসহ চারজনকে আটক করা হয়”

এছাড়া সকালে সাড়ে ৮টায় জামায়াতে ইসলামী বিক্ষোভ মিছিল করে। পরে তুলসিগঙ্গা ব্রিজের কাছে নওগাঁ-বগুড়ার মহাসড়ক অবরোধ করে সমাবেশ করে তারা।

লক্ষ্মীপুরে হাতবোমার বিস্ফোরণ

লক্ষ্মীপুরের বিভিন্ন সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বোমা ফাটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা করেছে জামায়াত-শিবির কর্মীরা।

হরতালের সমর্থনে সকালে জেলা শহরের আলীয়া মাদ্রাসা, মিয়া রাস্তা, বাস টার্মিনালসহ বিভিন্ন স্থানে ঝটিকা মিছিল বের করে রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে, পেট্রোল বোমা ফাটায় হরতাল সমর্থকরা। এসময় পুলিশ ধাওয়া করে তাদের সরিয়ে দেয়।

জেলা সদর, রামগঞ্জ, রায়পুর, রামগতি ও কমলনগর থেকে নাশকতার চেষ্টাকালে জামায়াত-শিবিরের ১১ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন লক্ষ্মীপুরের এএসপি (হেড কোয়াটার) মো. নাসিম মিয়া।

এছাড়া হরতালে নাশকতা চেষ্টার অভিযোগে চট্টগ্রামে ১১, নোয়াখালীতে ৫০, কক্সবাজারে ৮, মানিকগঞ্জে ৮, যশোরে ৫৬,  সাভারে ৮, সুনামগঞ্জে ৫, জয়পুরহাটে ১৫, পঞ্চগড়ে ১১, ফরিদপুরে ১০ জনকে আটক করেছে পুলিশ, যাদের মধ্যে বেশির ভাগই জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী।