অপহৃত ব্যবসায়ী উদ্ধার, বেনাপোল বন্দর সচল 

ব্যবসার কাজে ঢাকায় এসে অপহৃত বেনাপোল বন্দরের সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান হবিকে রাজধানীর মানিকনগর এলাকা থেকে উদ্ধার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।

নিজস্ব প্রতিবেদকও বেনাপোল প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Oct 2014, 01:20 PM
Updated : 30 Oct 2014, 01:20 PM

বৃহস্পতিবার ভোরের দিকে মানিকনগরের একটি বাসা থেকে তাকে উদ্ধারের সময় ছয় অপহরণকারীকেও আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম।

এদিকে সহকর্মীকে উদ্ধারের খবর পেয়ে কাজে ফিরেছে বেনাপোল স্থলবন্দরের পাঁচটি সিঅ্যান্ডএফ সংগঠন। হবিকে উদ্ধারের দাবিতে তারা কাজ বন্ধ করে দিলে বুধবার দুপুর থেকে স্থলবন্দর কার্যত অচল হয়ে যায়।

ব্যবসার কাজে মঙ্গলবার সকালে বিমানে ঢাকায় আসার পর কমলাপুর এলাকা থেকে নিখোঁজ হন

৫৮ বছর বয়সী হবি। তিনি ৫ নম্বর পুটখালি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান।

এ ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে রাজধানীর মতিঝিল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও করা হয়।

তাকে উদ্ধারের পর বৃহস্পতিবার মহানগর পুলিশের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে যুগ্ম কমিশনার মনিরুল বলেন, অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের জন্যই ব্যবসার কথা বলে হবিকে বেনাপোল থেকে ঢাকায় আনা হয়। অপহরণকারীরা তার কাছে ৬০ লাখ টাকা দাবি করে। তাকে মারধরও করা হয়। 

ঘটনাস্থল থেকে দুই নারীসহ ছয় অপহরণকারীকে একটি পিস্তলসহ গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা। 

এই ছয়জন হলেন- মো. আবদুল মান্নান পলাশ (৩২), জি এম জুবায়ের আহমেদ (২২), মো. মজিবর রহমান (৪৪), মাহবুবুর রহমান জিসান (১৭), জান্নাতুল ফেরদৌস জ্যোৎসনা (৩২), বৃষ্টি আক্তার (১৭)। 

“পলাশ এই অপহরণের পরিকল্পনা সাজায়। জ্যোৎসনা তা বাস্তবায়ন করে। অন্যরা ছিল সহযোগী।”

পলাশ বেনাপোল থেকে অবৈধ অস্ত্র এনে ঢাকায় বিক্রি করতো বলেও এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান।

ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান (মিডিয়া) বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হবির গায়ে মারধরের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তার ডান হাতে ব্যান্ডেজ ছিল।”

পুলিশের সংবাদ সম্মেলনের আগে হাতে ব্যান্ডেজ, কপালে জমাট রক্তের দাগ নিয়েই লুঙ্গি ও ছেড়া গেঞ্জি গায়ে পুলিশ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সামনে আসেন হাবিবুর রহমান হবি। এ সময় তাকে খালি পায়ে খুঁড়িয়ে হাঁটতে দেখা যায়।

তিনি জানান, সিএন্ডএফ ব্যবসার সূত্র ধরে ২০০৬ সালে জ্যোৎসার সঙ্গে তার পরিচয়। জ্যোৎসনা সে সময় ভারত থেকে চামড়ার ব্যাগ আমদানি করতেন। কাস্টমসের ঝামেলা মেটাতে তাকে সহযোগিতা করতেন হবি। এ কারণে জ্যোৎসনা তাকে ডাকতেন ‘ভাইজান’ বলে।

আর পলাশ সম্পর্কে হবির মেয়ের জামাই জাহাঙ্গীরের দূরসম্পর্কের মামা। বাকিদের চিনতেন না বলে সাংবাদিকদের জানান হবি।

তার দাবি, জাহাঙ্গীরের সঙ্গে মিলে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করতেন পলাশ। মাস ছয়েক আগে ওই ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় হবি ও জাহাঙ্গীরের ওপর ক্ষিপ্ত হন পলাশ।

মূলত ওই বিরোধের জের ধরেই পলাশ অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের পরিকল্পনা করেন বলে হবির ধারণা।

তিনি বলেন, জ্যোৎসনা তার পূর্ব পরিচিত। টেলিফোনে ব্যবসার কথা বলে জ্যোৎসনাই তাকে কমলাপুরে আসতে বলেন। তারপর কৌশলে মানিকনগরের ওই বাসায় নিয়ে যান।

ওই বাসায় অপহরণকারীরা তাকে প্রচণ্ড মারধর ও অকথ্য ভাষায় গালাগাল করত। মুক্তিপণ চাইতে ফোনে পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে বাধ্য করত। 

উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান জানান, গোপনে খবর পেয়ে ভোরে ওই বাসায় অভিযান চালিয়ে হবিকে উদ্ধার করা হয়।

বেনাপোল কাস্টমস ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোয়ার্ডিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান স্বজন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, হবিকে উদ্ধারের খবর পাওয়ার পরপরই বৃহস্পতিবার বেনাপোল বন্দর ব্যবহারকারী পাঁচটি সংগঠনের নেতারা কর্মবিরতির কর্মসূচি পত্যাহার করে নেন। 

এরপর সকাল থেকেই পুরোদমে আমদানি-রপ্তানি কাজ শুরু হয় বলে বেনাপোল চেকপোস্ট কাস্টম কার্গো শাখার রাজস্ব কর্মকর্তা খায়রুল ইমাম জানান ।