নিজামীর রায়ের পর ৪ জেলায় সংঘর্ষ

যুদ্ধাপরাধের দায়ে দলের আমির মতিউর রহমান নিজামীর মৃত্যুদণ্ডের পর বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করেছে জামায়াতে ইসলামী। এর মধ্যে চারটি জেলায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছে দলটির নেতা-কর্মীরা। 

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Oct 2014, 04:11 PM
Updated : 29 Oct 2014, 04:11 PM

বুদ্ধিজীবী হত্যাসহ একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বুধবার দুপুরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল নিজামীকে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেওয়ার পর সারাদেশে ৭২ ঘণ্টার হরতাল ডাকে জামায়াত। 

এর মধ্যেই বিভিন্ন জেলায় জামায়াতের নেতা-কর্মীরা মিছিল বের করে। এসব মিছিলে তাদের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মীদের তৎপরতাই বেশি দেখা গেছে।

তবে দেড় বছর আগে নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুদণ্ডের রায়ের পর যেভাবে দেশজুড়ে তাণ্ডব চালিয়েছিল জামায়াতকর্মীরা, আমিরের রায়ের পর সেই মাত্রায় তৎপরতার দেখা যায়নি।

বুধবারের রায়ের পর প্রায় সারাদেশেই সতর্ক ছিল পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এর মধ্যেই চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় পুলিশের সঙ্গে জামায়াতকর্মীদের সংঘর্ষ ও হাতবোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে জামায়াত-শিবিরের কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে পুলিশসহ আহত হয়েছেন ২০ জন। রাজশাহীতে সংঘর্ষের সময় পুলিশ গুলি ছুড়ে শিবিরকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

সিলেটে শিবিরের সঙ্গে আওয়ামী লীগের পর পুলিশের সংঘাত বাঁধে। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে শিবিরকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। গুলি হয়েছে সেখানেও।   

চট্টগ্রাম: রায়ের পর দুপুরে সীতাকুণ্ডের বাড়বকুণ্ডে শিবিরকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ঘটে।

সীতাকুণ্ড থানার ওসি ইফতেখার হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বাড়বকুণ্ড বাজারে নাশকতা সৃষ্টির জন্য মিছিল বের করে শিবিরকর্মীরা। এসময় পুলিশ তাদের ধাওয়া করলে তারা ইট ছুড়লে পুলিশ ফাঁকা গুলি ছুড়লে শিবিরকর্মীরা পালিয়ে যায়।

চট্টগ্রাম নগরীতে হালিশহর ছোটপুল কাঁচাবাজার এলাকায় মিছিলের জন্য শিবিরকর্মীরা জড়ো হলে পুলিশ তাদের ধাওয়া করে।

“এসময় মো. বাপ্পী নামে শিবিরের এক নেতাসহ পাঁচজনকে আটক করা হয়,” বলেন নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (পশ্চিম) তানভীর আরাফাত।

গ্রেপ্তার বাপ্পী নগরীতে বিভিন্ন নাশকতার ঘটনায় জড়িত ছিল দাবি করে পুলিশ কর্মকর্তা তানভীর জানান, সে ইসলামী ছাত্রশিবিরের নীতি নির্ধারক পর্যায়ের নেতা।  

নগরীর চাক্তাই এলাকায় মিছিলের জন্য জড়ো হওয়ার চেষ্টা করলে সেখান থেকে শিবিরের সমাজকল্যাণ সম্পাদক সরোয়ার আলমসহ চারজনকে আটক করা হয় বলে জানিয়েছেন বাকলিয়া থানার ওসি মো. মহসিন।

সরোয়ার ও বাপ্পীর বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানায় নাশকতাসহ বিভিন্ন অভিযোগে ২০টিরও বেশি মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নগর পুলিশ একটি কমিটি করেছে।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) বনজ কুমার মজুমদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, “সরোয়ার ও বাপ্পী পলাতক আসামি। তাদের দীর্ঘদিন ধরে খুঁজছিল পুলিশ।”

এছাড়া সকালে শিবিরকর্মীরা চকবাজার দারুল উলুম মাদ্রাসার সামনে মিছিলের চেষ্টা করলে পুলিশ ধাওয়া করে সেখান থেকে ৭ জনকে আটক করে বলে নিশ্চিত করেছেন কোতোয়ালী থানার ওসি মহিউদ্দিন সেলিম।

রাজশাহী: দুপুরে নগরীর কোর্ট স্টেশন মোড়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় শিবিরকর্মীরা।

দুপুর ২টার দিকে আদালত চত্বর থেকে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের একটি মিছিল কোর্ট স্টেশন মোড়ে গিয়ে সমাবেশ করে।

দলের আমির মতিউর রহমান নিজামীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার প্রতিক্রিয়ায় বুধবার বিকালে রাজশাহী কোর্ট চত্বরে ইট হাতে বিক্ষোভ মিছিলে জামায়াতে ইসলামীর কর্মীরা।

সমাবেশ শেষে চলে যাওয়ার সময় তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট ছুড়লে পুলিশ কাঁদুনে গ্যাস ও শটগানের ফাঁকা গুলি ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে।

রাজপাড়া থানার ওসি মেহেদী হাসান জানান, পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট ছোড়ার পরই পুলিশ ফাঁকা গুলি ছুড়েছে।

এছাড়া বেলা ১টার দিকে নগরীর মতিহারের দেওয়ারপাড়া মোড়ে মিছিলের প্রস্তুতি নেওয়ার সময় পাঁচ জামায়াত-শিবিরকর্মীকে আটক করা হয়।

সিলেট:  বেলা পৌনে ২ টায় সিলেট নগরীর কোর্ট পয়েন্ট এলাকায় শিবিরের সঙ্গে আওয়ামী লীগের  সংঘর্ষের সময় ১০-১২টি মোটরসাইকেল ও অটোরিকশা ভাংচুর হয়। আহত হন অন্তত ৫ জন।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বন্দরবাজার এলাকা থেকে ঝটিকা মিছিল বের করে  জামায়াত-শিবির কর্মীরা। মিছিল থেকে বন্দরবাজারে পুলিশকে দিকে ঢিল ছোড়া হয়। কম সংখ্যক পুলিশ থাকায় কয়েকটি ফাঁকা গুলি ছুড়ে পিছু হটে যায় পুলিশ সদস্যরা।

পরে কোর্ট পয়েন্টে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজের নেতৃত্বে  আনন্দ মিছিলের প্রস্তুতির সময় তাদের ধাওয়া করে জামায়াত-শিবির কর্মীরা। এ সময় উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়।

ঘটনাস্থলে বিপুল সংখ্যক পুলিশ উপস্থিত হলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জামায়াত-শিবির কর্মীদের পাল্টা ধাওয়া দেয়। এ সময়জামায়াতকর্মীরা বন্দরবাজার এলাকার দিকে সরে যায়।

সংঘর্ষ চলাকালে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। অনেককেই দিগ্বিদিক দৌঁড়াতে দেখা যায়। তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবসায়ীরা দোকানপাট বন্ধ করে দেন।

সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার রহমত উল্লাহ বলেন, “পুলিশ শটগানের গুলি ছুড়ে জামায়াত-শিবির কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।”

সন্ধ্যায় মীরাবাজার এলাকা থেকে শিবির একটি ঝটিকা মিছিল বের করলে পুলিশ ধাওয়া করে ১২ জনকে আটক করে।

কোতোয়ালি থানার ওসি আসাদুজ্জামান বলেন, মিছিল থেকে কয়েকটি হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হলে পুলিশ শটগানের গুলি ছুড়ে তাদের হটিয়ে দেয়।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ:  বিকাল ৩টার দিকে জামায়াত-শিবিরকর্মীরা শিবগঞ্জ বাজারে ইসলামী ব্যাংকের সামনে সমাবেশ করতে চাইলে পুলিশ ফাঁকা গুলি ও কাঁদুনে গ্যাস ছুড়লে ১৫-২০ জন আহত হয়।

শিবগঞ্জ থানার ওসি আশিকুর রহমান জানান, জামায়াত শিবিরের ছোড়া হাতবোমার জবাবে পুলিশ রবার বুলেট ও টিয়ারসেল ছোড়ে। এতে সহকারী পুলিশ সুপার মতিউর রহমান, শিবগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) যুবায়ের আহমেদ আহত হন।

এছাড়া ভোলাহাট থানা পুলিশ জানায়, সকাল সোয়া ১১টার দিকে ভোলাহাট মোহবুল্লাহ কলেজের সামনে জামায়াত-শিবির কর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট ছুড়লে পুলিশ শটগানের গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এতে সানাউল (৩৫) নামে একজন পথচারী আহত হন।

বিকাল ৩টার দিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের নিমতলা এলাকায় জামায়াত-শিবিরের একটি মিছিল ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ।

(এই প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়েছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের চট্টগ্রাম ব্যুরো, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সিলেট প্রতিনিধি)