রায় ঘোষণা উপলক্ষে বুধবার সকাল থেকেই ট্রাইব্যুনালের বাইরে অবস্থান নেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড, মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ইসলামী ছাত্র সংঘের সভাপতি ও আল-বদর বাহিনীর প্রধান নিজামীর বিরুদ্ধে একাত্তরে ধর্ষণ, হত্যা ও গণহত্যাসহ ১৬টি অভিযোগের মধ্যে আটটি প্রমাণিত হয়েছে। এর চারটিতে তাকে মৃত্যুদণ্ড এবং অন্য চারটিতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল।
জামায়াতে ইসলামীর আমিরের বিরুদ্ধে ৮ নম্বর অভিযোগ হলো-ঢাকার গেরিলা যোদ্ধা শহীদ রুমি, বদি, জুয়েল ও আজাদকে হত্যার, যা আদালতে প্রমাণিত হয়েছে।
রুমিদের হত্যা সংক্রান্ত ঘটনায় এ রায় নিয়ে কথা বলতে গিয়ে প্রায়ই ভারী হয়ে আসছিল নাসির উদ্দিন ই্উসুফ বাচ্চুর কণ্ঠস্বর।
তিনি বলেন, “রুমি, বদি, জুয়েলকে ধরে যে ক্যাম্পে নেওয়া হয়েছিল সেখানে নিজামী প্রা্য়ই যেত। তখন নিজামী পাকিস্তানি ক্যাপ্টেনকে বলেছিল, রাষ্ট্রপতির সাধারণ ক্ষমার আগেই ওদের মেরে ফেলতে হবে।
“তাদের হত্যার পরে তাদের পরিবারও কাদঁতে কাঁদতে মারা যায়। আমরা বন্ধুরাও ঠিক থাকতে পারিনি ওই সময়। বাংলাদেশের মানুষও কেঁদেছে।”
রায়ে সন্তোষ জানিয়ে নাসির উদ্দিন ইউসুফ বলেন, “ওই ঘটনাসহ বুদ্ধিজীবী হত্যা ও অন্যান্য হত্যার ঘটনায় আজকে নিজামীর বিচার হয়েছে। এই বিচারে একটি এতিহাসিক রায় হয়েছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমি এই রায়ে সন্তুষ্ট।”
রুমীদের সঙ্গেই পাকবাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়ে হয়েছিলেন বিচ্ছু জালাল। পরে পালিয়ে বেঁচে আসেন তিনি।
রায়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় মুক্তিযুদ্ধে ঢাকার গেরিলা যোদ্ধা বিচ্ছু জালাল বলেন, “মৃত্যুদণ্ডটা নিজামীর প্রাপ্য ছিল। একাত্তরে আমরা ঢাকার গেরিলারা এবং সাধারণ মানুষ এই নিজামী- মুজাহিদদের আতঙ্কে ছিলাম।
“এ আতঙ্ক এবং তার অপরাধের হাত থেকে মানুষকে বাঁচাতে তাকে আমরা ওই সময়ে কয়েক বার হত্যার চেষ্টা করেছি। কিন্তু আমরা পারিনি। আজ আদালত রায়ের মাধ্যমে তাকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করল।"
মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ভাইস প্রেসিডেন্ট ইশমত কাদির গামা সকাল থেকেই ট্রাইব্যুনাল এলাকার বাইরে এসে রায়ের অপেক্ষায় ছিলেন।
ফাঁসির খবর শুনে উল্লাস প্রকাশ করে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে বলেন, “এ রায় বাঙালির অত্যন্ত প্রত্যাশিত রায় ছিল। এ রায়ের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে- স্বাধীনতা বিরোধী একটি চক্র অতীতে দেশ নিয়ে ষড়যন্ত্রে সক্রিয় ছিল।”
বর্তমানেও তারা বিভিন্ন জায়গায় সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে মন্তব্য করে তাদের প্রতিহত করার আহ্বান জানান তিনি।
রায়ের পর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের সভাপতি মেহেদী হাসান বলেন, “জাতির দীর্ঘদিনের আশা পূরণ হয়েছে। ফাঁসির রায়ের মাধ্যমে জাতির কিছুটা হলেও কলঙ্ক মোচন হয়েছে। এখন এই রায় বাস্তবায়ন করতে হবে।”