বুধবার এ মামলার বহু প্রতীক্ষিত রায় পড়া শুরু করার আগে ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম বলেন, “আমরা আমাদের বিবেক, আইন ও সংবিধান দ্বারা পরিচালিত হই। আমাদের ওপর কোনো নির্দেশ নেই।
“আমরা আপস এবং সমঝোতা করি না। তা করলে আইন ও সংবিধানের জন্যই করি।”
২০১০ সালের ২৫ মার্চ ট্রাইব্যুনাল গঠনের মধ্য দিয়ে যুদ্ধাপরাধের বহু প্রতীক্ষিত বিচার শুরুর পর এটি দশম রায়। আর এ মামলার আসামি নিজামী একাত্তরে ছিলেন জামায়াতের তখনকার ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের প্রধান, সেই হিসাবে পাকিস্তান বাহিনীকে সহযোগিতার জন্য গঠিত আলবদর বাহিনীরও প্রধান।
প্রথম দফা যুক্তিতর্ক শেষে গতবছর ১৩ নভেম্বর নিজামীর মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখা হলেও ট্রাইব্যুনাল-১ চেয়ারম্যান বিচারপতি এ টিএম ফজলে কবীর অবসরে গেলে এ আদালতের বিচার কার্যক্রমে কার্যত স্থবিরতা তৈরি হয়। নতুন চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম দায়িত্ব নেয়ার পর আসামিপক্ষের আবেদনে নতুন করে যুক্তিতর্ক শোনেন।
দ্বিতীয় দফা যুক্তিতর্ক শেষে গত ২৪ মার্চ আবারো মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখে ট্রাইব্যুনাল। রায় ঘোষণার জন্য ২৪ জুন তারিখও ঠিক করা হয়। কিন্তু সেদিন সকালে কারা কর্তৃপক্ষ নিজামীর অসুস্থতার কথা জানিয়ে চিঠি দিলে তা আবার ঝুলে যায়।
রায় স্থগিত হলে বিভিন্ন মহল থেকে সরকারকে জড়িয়ে সমালোচনা আসে, অনেকে হতাশাও প্রকাশ করেন।
যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ সাজার দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসা গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার রায় ঘোষণা না হওয়াকে ‘ষড়যন্ত্র ও অপকৌশল’ হিসাবে আখ্যায়িত করেন।
মুক্তিযোদ্ধা কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান ইসমত কাদের গামা তাৎক্ষণিকভাবে বলেন, “একজন আসামির অসুস্থতার কারণে একটি রায় পিছিয়ে যাবে, এটা মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, কোর্টের ভেতর প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যাবস্থা করে আসামিকে এনে আজ রায় দেয়া যেত।”
জামায়াতের জোটসঙ্গী বিএনপিরর স্থায়ী কমিটির সদস্য আ স ম হান্নান শাহ সে সময় এক অনুষ্ঠানে বলেন, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী সুষমা স্বরাজের ঢাকা সফরকালে হরতাল হতে পারে- এই আশঙ্কা থেকে ‘প্রতিবেশী দেশের পরামর্শে’ যুদ্ধাপরাধের মামলার রায় স্থগিত করা হয়েছে।
প্রথম দফায় রায় অপেক্ষমাণ রাখার সাড়ে ১১ মাস পর বুধবার এই রায় ঘোষণার আগে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম বলেন, “সবাই এ মামলার রায়ের অপেক্ষায় ছিল। আমরাও অপেক্ষা করেছি এই ভারডিক্ট কবে দিতে পারব। এই অপেক্ষার কারণে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মহল ও গণমাধ্যমে নানা কথা উঠে এসেছে।
“এসব কথা আমাদের আমলে নেওয়ার সুযোগ নেই। আমরা এর জবাব দিতে পারি না, জবাব দেওয়া উচিৎও হবে না।”
মন্তব্যকারীদের উদ্দেশ্যে এই বিচারক বলেন, “আমরা আদালত বলতে গেলে বোবার মতো থাকি। যারা মন্তব্য করেন, তাদের মনে রাখা উচিৎ, আমরা কোনো জবাব দিতে পারি না।”
তার বক্তব্যের পর ২০৪ পৃষ্ঠার রায়ের সংক্ষিপ্তসার পড়া শুরু করেন এ ট্রাইব্যুনালের সদস্য বিচারপতি মো. আনোয়ারুল হক। এরপর ট্রাইব্যুনালের অপর সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন রায়ের পর্যবেক্ষণ পড়েন। সবশেষে আসামির প্রাণদণ্ড ঘোষণা করেন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম।
রায়ে চারটি অভিযোগে নিজামীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে, চারটি অভিযোগে দেওয়া হচ্ছে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। বাকি আটটি অভিযোগে জামায়াত নেতা খালাস পেয়েছেন।