বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানকে স্মরণ

নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ঝিনাইদহে বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমানের ৪৩ তম শাহাদত বার্ষিকী পালিত হয়েছে।

ঝিনাইদহ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Oct 2014, 10:35 AM
Updated : 28 Oct 2014, 10:35 AM

তার বাড়ি মহেশপুর উপজেলার হামিদনগরে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী হামিদুর রহমান সরকারি ডিগ্রি কলেজ মঙ্গলবার সকালে শহীদের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হয়। এছাড়া দোয়া মাহফিল এবং কলেজ মাঠে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

১৯৭১ সালের ২৮ অক্টোবর রাতে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় পাক বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে তিনি শহীদ হন।

মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীরশ্রেষ্ঠ খেতাবে ভূষিত করে।  

অধ্যক্ষ রফি উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, বেলা ১১টার দিকে কলেজে বীরশ্রেষ্ঠের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হয়। এরপর হয় দোয়া মাহফিল। পরে কলেজ মাঠে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।

আলোচনা সভায় বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের স্মৃতি যথাযথভাবে সংরক্ষণের দাবি জানানো হয় বলে তিনি জানান।

অধ্যক্ষ রফি উদ্দিনের সভাপতিত্বে আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন ঝিনাইদহ-৩ আসনের সংসদ সদস্য নবী নেওয়াজ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসিমা খাতুন, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সাজ্জাদুল ইসলাম ও বীরশ্রেষ্ঠের পরিবারের সদস্যসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ।

হামিদুর রহমানের সংক্ষিপ্ত পরিচয়

হামিদুর রহমানের বাড়ি ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার খর্দ খালিশপুর গ্রামে, যার নাম এখন হামিদনগর। ১৯৪৫ সালে ভারতের ২৪ পরগনা জেলার চাপড়া থানার ডুমুরিয়া গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন তিনি। তার বাবার নাম আক্কাস আলি মন্ডল ও মায়ের নাম কায়দাছুন্নেছা।

১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর তিনি পরিবারের অন্যদের সঙ্গে এদেশে চলে আসেন।

১৯৭১ সালে ফেব্র“য়ারি মাসে ঈস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে সৈনিক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। এরপর জেড ফোর্সের অধীনে যুদ্ধে অংশ নেন।

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার ধলাইতে ছিল পাক বাহিনীর শক্তিশালী ঘাঁটি। ২৮ অক্টোবর রাতে মুক্তি বাহিনী ধলাই পাক সেনা ঘাঁটি আক্রমাণ করে।  উভয় পক্ষের মধ্যে তুমূল যুদ্ধ শুরু হয়।

পাক সেনাদের দুটি মেশিন গান পোস্ট থেকে অবিরাম গুলি বর্ষণের মুখে ধলাই পাক সেনা ঘাঁটি দখল কষ্ঠকর হয়ে পড়ে। প্রয়োজন হয় মেশিন গান পোস্ট দুটি ধবংস করার। এ দায়িত্ব দেওয়া হয় সিপাহী হামিদুর রহমানের উপর।

তিনি বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করতে করতে পাক সেনাদের মেশিন গান পোস্ট দুটি ধবংস করে দেন। তার গুলিতে ২ জন পাক সেনা নিহত হয়। এ সময় শত্র“দের গুলিতে তিনিও শাহাদত বরণ করেন।

সহযোদ্ধারা তার মরদেহ ভারতীয় এলাকায় নিযে যান। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আমবাশার হাজিমারাছড়া গ্রামের একটি মসজিদের পাশে জাতির এ শ্রেষ্ঠ সন্তানকে সামরিক মর্যাদায় দাফন করা হয়েছিল।

দীর্ঘ ৩৬ বছর পর সরকারের চেষ্টায় ২০০৭ সালের ১০ ডিসেম্বর হামিদুর রহমানের দেহাবশেষ ভারত থেকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। পরদিন ১১ ডিসেম্বর ঢাকার মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী গোরস্থনে পুনরায় রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তারে দাফন করা হয়। 

২০০৭ সালে খালিশপুরে সরকার বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী হামিদুর রহমান  গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণ করে। তার গ্রামে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী হামিদুর রহমানের নামে একটি প্রাইমারি স্কুল ও খালিশপুর কলেজ স্থাপন করা হয়েছে। কলেজটি সরকারিকরণ করা হয়। একটি রাস্তার নামকরণ করা হয় বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ হামিদুর রহমান সড়ক। 

ঝিনাইদহ স্টেডিয়ামের নামকরণও করা হয়েছে এ বীরশ্রেষ্ঠের নামে। খর্দ খালিশপুর গ্রামের নতুন নামকরণ করা হয়েছে হামিদনগর।

</div>  </p>