শনিবার দুপুরে জানাজার জন্য বায়তুল মোকাররমে গোলাম আযমের লাশ নেওয়ার পথে কফিনবাহী গাড়িতে জুতা ছোড়া হয়।
একাত্তরে হত্যা, ধর্ষণ, লুটতরাজের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধে ৯০ বছর কারাদণ্ডপ্রাপ্ত এই জামায়াত নেতার জানাজা শেষে বিকালে মগবাজারে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে।
মগবাজার থেকে বায়তুল মোকাররমে লাশ নেওয়ার সময় তার বিরোধিতা করে বিক্ষোভ করে কয়েকটি সংগঠন।
জাতীয় মসজিদে যুদ্ধাপরাধীদের ‘সর্দারের’ জানাজা ঠেকাতে বাংলাদেশ অনলাইন অ্যাকিভিস্ট ফোরাম (বোয়াএফ) এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে বায়তুল মোকাররমে যেতে চাইলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়।
এ সময় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন তারা। বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে এদেশের জন্মের বিরোধিতাকারীর জানাজা হতে পারে না দাবি করে তার বিরোধিতা করেন তারা।
এক পর্যায়ে গণজাগরণ মঞ্চ, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন, ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র মৈত্রী, কাজী আরেফ ফাউন্ডেশন, জাতীয় গণতান্ত্রিক লীগসহ আরও কয়েকটি সংগঠনের প্রায় তিন শতাধিক নেতাকর্মী তাদের সঙ্গে যোগ দেন।
এ সময় পুলিশের সঙ্গে তাদের ধস্তাধস্তি হতে দেখা যায়। এরইমধ্যে কিছু নেতাকর্মী পুলিশকে এড়িয়ে পল্টন মোড় ও এর আশপাশের এলাকায় অবস্থান নেন।
মুক্তিযুদ্ধকালীন জামায়াতের আমির গোলাম আযমের লাশবাহী গাড়ি পল্টন মোড় পেরিয়ে বায়তুল মোকাররমের দিকে ঘুরতেই অনলাইন অ্যাকিভিস্ট নেটওয়ার্কের মাহমুদুল হক মুন্সী ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে তার দিকে জুতা ছুড়ে মারেন বলে ব্লগার অমি রহমান পিয়াল জানান।
ওই ঘটনার আলোকচিত্রও ধারণ করেছেন পিয়াল।
এ সময় গোলাম আযমের লাশবাহী গাড়ির পাশে থাকা জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিলে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
পরে ছাত্র মৈত্রীর নেতারা জানান, যুদ্ধাপরাধীদের হোতার প্রতি ঘৃণা প্রকাশে তার কফিনবাহী গাড়িতে তারাও জুতা নিক্ষেপ করেছেন।
“যুদ্ধাপরাধী হিসেবে দণ্ডিত গোলাম আযমের জানাজা জাতীয় মসজিদে কিভাবে হয়? আমরা এর প্রতিবাদ জানাই। তার প্রতি ঘৃণা প্রকাশে আমরা জুতা মেরেছি,” বলেন ছাত্র মৈত্রীর নেতা তানভীর।
বায়তুল মোকাররমে গোলাম আযমের জানাজার বিরোধিতা করে এক অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার কেএম শফিউল্লাহ বলেন, “মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের অনেকেরই মৃতদেহ এ মাটির নিচে গেছে জানাজা ছাড়া। এই বুড়িগঙ্গাতেও অনেকের লাশ ভেসে যেতে দেখেছি; কাক-কুকুর ঠুকরে ঠুকরে খাচ্ছিল।
“গোলাম আযম একজন রাজাকার সর্দার; আপনারা স্লোগান তুলুন, রাজাকারদের কোন কবর এখানে হবে না, জানাজাও হবে না। কোন রাজাকারের অবশিষ্ট যেন এই মাটিতে না থাকে।”
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার সামনে কয়েকটি সংগঠনের কর্মসূচি থেকে বায়তুল মোকাররমে জানাজা না পড়িয়ে গোলাম আযমের মরদেহ পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেওয়ার দাবি জানানো হয়।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে জামায়াতে ইসলামীর আমির গোলাম আযম একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধীদের নেতৃত্ব দেন। শান্তি কমিটি, রাজাকার ও আলবদর বাহিনী গঠনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি, যেসব আধা সামরিক বাহিনীর সহযোগিতা নিয়ে পাকিস্তানি সেনারা এদেশে ব্যাপক হত্যা ও নির্যাতন চালায়।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ার জন্য মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতেও প্রকাশ্যে তদবির চালান এই জামায়াত নেতা।
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য গত জুলাইয়ে তাকে ৯০ বছরের কারাদণ্ড দেয় যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল। সেই সাজা ভোগের মধ্যেই বৃহস্পতিবার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান গোলাম আযম।
৯২ বছর বয়সী এই জামায়াত নেতার আরও ৮৯ বছর কারাভোগ বাকি ছিল।