ছেলেরা ফিরলে গোলাম আযমের দাফনের সিদ্ধান্ত

বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধীদের প্রতীক গোলাম আযমের দাফনের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে তার আইনজীবী তাজুল ইসলাম জানিয়েছেন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Oct 2014, 07:07 AM
Updated : 24 Oct 2014, 10:24 AM

শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গোলাম আযমের মগবাজারের বাসার সামনে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, তার ছেলেরা বিকালের মধ্যে দেশে পৌঁছাতে পারেন। এরপর তার দাফনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

তার পাঁচ ভাই দেশের বাইরে আছেন বলে আগের রাতে গোলাম আযমের ছেলে আব্দুল্লাহিল আযমী জানিয়েছিলেন।

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে ৯০ বছর কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির গোলাম আযম সাজা ভোগের মধ্যেই বৃহস্পতিবার রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ৯২ বছর বয়সী গোলাম আযমের আরও ৮৯ বছর কারাভোগ বাকি ছিল।

রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে শুক্রবার সকালে পরিবারের সদস্যদের কাছে তার লাশ হস্তান্তর করা হয়। এরপর থেকে মগবাজারে নিজের বাসার গ্যারেজে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত একটি লাশবাহী গাড়িতে তার মরদেহ রাখা হয়েছে।

আইনজীবী তাজুল সাংবাদিকদের বলেন, “তার (গোলাম আযমের) ছেলেরা দেশের বাইরে থাকেন। তারা বিকেলে মধ্যে পৌঁছাবেন। এর পরে পারিবারিকভাবে দাফন ও জানাজার সিদ্ধান্ত হবে।”

তবে গোলাম আযমের ‘শেষ ইচ্ছা’ অনুযায়ী মগবাজারের কবরস্থানে তাকে দাফনের প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

আগের রাতে আযমি সাংবাদিকদের বলেন, “বাবার শেষ ইচ্ছা ছিল মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী বা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী জানাজা পড়াবেন। কিন্তু তারা দুজনেই কারাগারে থাকায় জানাজা কে পড়াবেন, তা দলের নেতারা ও পরিবারের সদস্যরা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন।”

এ বিষয়ে তাজুল বলেন, “তার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী পরিবার যদি সিদ্ধান্ত নিতে চায় তবে আইনজীবীরা সরকারের কাছে আবেদন জানাবেন।”

জামায়াতের মুক্তিযুদ্ধকালীন আমির গোলাম আযম যুদ্ধারপরাধ মামলার বিচার শুরু থেকে বিএসএমএমইউ হাসপাতালে প্রিজন সেলে চিকিৎসাধীন ছিলেন। গত বছর যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে রায়ের পরও সেখানেই তাকে রাখা হয়।

ওই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে প্রসিকিউশন ও আসামি পক্ষের আপিলের শুনানির দিন ঠিক হওয়ার পর মারা গেলেন যুদ্ধাপরাধীদের ‘গুরু’।

১৯২২ সালের ৭ নভেম্বর ঢাকার লক্ষ্মীবাজারে নানাবাড়িতে জন্ম নেওয়া গোলাম আযমের পৈত্রিক বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিরগাঁওয়ে।

ছাত্রজীবন শেষে ১৯৫০ থেকে পাঁচবছর রংপুর কারমাইকেল কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান পড়ান গোলাম আযম। ওই সময়ই সাইয়্যেদ আবুল আলা মওদুদীর ইসলামী ভাবধারায় প্রভাবিত হয়ে জামায়াতে ইসলামীতে যোগ দেন গোলাম আযম।

ধর্মীয় উসকানি দেওয়ার জন্য পাকিস্তানের আদালত মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল মওদুদীকে, আর তার শিষ্য গোলাম আযমও একই অপরাধ করেন ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময়।

একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করে শান্তি কমিটি, রাজাকার ও আলবদর বাহিনী গঠনে নেতৃত্ব দেন গোলাম আযম। এসব আধা সামরিক বাহিনীর সহযোগিতা নিয়ে পাকিস্তানি সেনারা বাংলাদেশে ব্যাপক হত্যা ও নির্যাতন চালায়।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ার জন্য মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতেও প্রকাশ্যে তদবির চালান এই জামায়াত নেতা।

মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে ১৯৭১ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ ছেড়ে পাকিস্তানে যান গোলাম আযম। যুদ্ধে পাকিস্তানের পরাজয়ের পর সেখান থেকে চলে যান যুক্তরাজ্যে।

৭ বছর লন্ডনে অবস্থান করার পর ১৯৭৮ এ সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আমলে আবার বাংলাদেশে আসেন এই জামায়াত নেতা; তা-ও পাকিস্তানি পাসপোর্টে।