‘ভালো নয়’ সহস্রাধিক বিদ্যালয়

সরকারের নানা প্রচেষ্টা সত্ত্বেও দেশের ৩১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় নিজেদের বিচারেই ‘অকার্যকর’ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Oct 2014, 05:00 AM
Updated : 24 Oct 2014, 05:42 AM

এছাড়া শিক্ষার পরিবেশ, বিদ্যালয়ের অবকাঠামো, শিক্ষকদের দক্ষতা ও শিক্ষার্থীদের কৃতিত্বসহ সার্বিক বিচারে দুর্বল অবস্থানে রয়েছে ৯৫৭টি বিদ্যালয়।

বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) করা প্রাতিষ্ঠানিক স্বমূল্যায়ন প্রতিবেদনে এ চিত্র পাওয়া গেছে। সারা দেশের ১৮ হাজার ৫৯৮টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ১৮ হাজার ৪২৫টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের স্বমূল্যায়ন হয়েছে।

শিক্ষাসংক্রান্ত সাতটি সূচকে মোট ১০০ নম্বরের ভিত্তিতে গত বছর বিদ্যালয়গুলোর ওপর জরিপ চালিয়ে প্রতিবেদনটি তৈরি করে মাউশির পরিকল্পনা ও উন্নয়ন শাখা।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি (নায়েম) মিলনায়তনে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের উপস্থিতিতে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর।

মন্ত্রী ছাড়াও শিক্ষা সচিব মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম খান, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক ফাহিমা খাতুনসহ অন্যরা এসময় উপস্থিত ছিলেন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অগ্রগতি যাচাই, শিক্ষার মান উন্নয়নে চালু করা নতুন নতুন নিয়ম ও কৌশল বাস্তবায়নে স্কুলগুলোর সফলতা যাচাই করাই প্রতিবেদনের উদ্দেশ্য বলে জানান মাউশির গবেষণা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

১৯৯৮ সালে উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর অগ্রগতি যাচাইয়ে বার্ষিক সমীক্ষা চালানোর সিদ্ধান্ত হয়। টানা তিন বছর ধরে এই সমীক্ষা চালিয়ে আসছে মাউশি।

নতুন শিক্ষানীতি ও শিক্ষার সার্বিক মানোন্নয়নে মন্ত্রণালয়ের নতুন কৌশলের আলোকে পাঠদানসহ স্কুলের সার্বিক পরিস্থিতি মূল্যায়নে তথ্য চাওয়া হয়।

সাতটি সূচকে প্রাপ্ত পয়েন্টের ভিত্তিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে খুব ভালো (এ), ভালো (বি), মধ্যম পর্যায়ের (সি), দুর্বল (ডি) ও অকার্যকর (ই)- এই পাঁচটি শ্রেণিতে স্থান দেয়া হয়েছে। এছাড়া আগের বছরের তুলনায় বিদ্যালয়গুলোর উন্নতি-অবনতিও দেখানো হয় প্রতিবেদনে।

এতে দেখা যায়, মাত্র এক হাজার ২০টি স্কুল খুব ভালোভাবে চলছে। নয় হাজার ৯৮টি স্কুল ভালো করছে, সাত হাজার ৩১৯টি স্কুল মধ্যম মানের, ৯৫৭টি স্কুলের কার্যক্রম ভালো নয় এবং ৩১টি স্কুলের অবস্থা মোটেও ভালো নয়।

পিছিয়ে আছে রংপুর

স্ব-মূল্যায়ন প্রতিবেদনে রংপুর অঞ্চলের ১৩টি বিদ্যালয়কে ‘অকার্যকর’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে মাউশি। এই অঞ্চলে ৩০২টি বিদ্যালয়কে সার্বিক বিচারে দুর্বল বলে চিহ্নিত করা হয়।

বরিশাল অঞ্চলেও ১১টি বিদ্যালয়কে ‘অকার্যকর’ বলা হয়েছে প্রতিবেদনে। এছাড়া ২৩৮টি দুর্বল বিদ্যালয় রয়েছে বরিশালে।

এখানে খুব ভালো ২৩টি, ভালো ৫৭২টি ও মধ্যম পর্যায়ের ৭৬৫টি বিদ্যালয় রয়েছে।

ময়মনসিংহ অঞ্চলে তিনটি বিদ্যালয় ‘অকার্যকর’, ১১২টি দুর্বল, ১৩২টি খুব ভালো, ৯৫৮টি ভালো ও ৯১৩টি মধ্যম পর্যায়ের বিদ্যালয় রয়েছে।

ঢাকা অঞ্চলে দুটি ‘অকার্যকর’, ৭৬টি দুর্বল, ২৪৩টি খুব ভালো, এক হাজার ৩৪৯টি ভালো এবং ৭৪৬টি মধ্যম পর্যায়ের বিদ্যালয় রয়েছে।

রাজশাহী অঞ্চলে ৮৬টি দুর্বল, ১৭৯টি খুব ভালো, এক হাজার ৬১৫টি ভালো এবং এক হাজার নয়টি মধ্যম পর্যায়ের বিদ্যালয় রয়েছে। ‘অকার্যকর’ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে দুটি।  

চট্টগ্রাম অঞ্চলে ৮৯টি খুব ভালো, ৮৭৩টি ভালো, ৫৬৪টি মধ্যম পর্যায়ের ও ৪৭টি দুর্বল বিদ্যালয় রয়েছে। 

কুমিল্লা অঞ্চলে ১৫১টি খুব ভালো, ৭৬২টি ভালো, ৩৩২টি মধ্যম পর্যায়ের এবং ১৯টি দুর্বল বিদ্যালয় রয়েছে।
 

খুলনা অঞ্চলে ৯৬টি খুব ভালো, এক হাজার ৩৮৯টি ভালো, এক হাজার ১৪৭টি মধ্যম পর্যায়ের ও ৫১টি দুর্বল বিদ্যালয় রয়েছে।

সিলেট অঞ্চলে ৩৮টি খুব ভালো, ৪৯৪টি ভালো, ২৮৯টি মধ্যম পর্যায়ের এবং ২৬টি দুর্বল বিদ্যালয় রয়েছে।

সিলেট, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও খুলনা অঞ্চলে কোনো বিদ্যালয় ‘অকার্যকর’ হিসেবে চিহ্নিত হয়নি।

এগিয়ে কুমিল্লা অঞ্চল

স্ব-মূল্যায়ন প্রতিবেদনে নয় শিক্ষা বোর্ডের তালিকায় শীর্ষ রয়েছে কুমিল্লা অঞ্চল। সূচকে কুমিল্লা বোর্ডের ১২৬৪টি বিদ্যালয়ের মধ্যে এ, বি, সি শ্রেণিতে রয়েছে ১২৪৫টি বিদ্যালয়। আগের বছরেও শীর্ষ অবস্থানে ছিল এই অঞ্চল।

গত বছরের দ্বিতীয় অবস্থান ধরে রেখেছে খুলনা অঞ্চল। এখানকার ২৬৮৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এ, বি, সি শ্রেণিতে রয়েছে ২৬৩২টি।

একধাপ এগিয়ে তৃতীয় অবস্থানে এসেছে চট্টগ্রাম অঞ্চল। ১৫৭৩টি বিদ্যালয়ের মধ্যে এ অঞ্চলের ১৫২৬টিই রয়েছে এ, বি, সি শ্রেণিতে।  

তিন ধাপ এগিয়ে সপ্তম থেকে চতুর্থ অবস্থানে এসেছে রাজশাহী অঞ্চল। এ অঞ্চলের ২৮৯১টি বিদ্যালয়ের মধ্যে এ, বি, সি তে রয়েছে ২৮০৩টি।

গত বছরের তৃতীয় অবস্থান থেকে পিছিয়ে এবার পঞ্চম অবস্থানে চলে গেছে সিলেট অঞ্চল। ঢাকা অঞ্চলও একধাপ পিছিয়ে পঞ্চম থেকে ষষ্ঠ অবস্থানে গেছে।

ময়মনসিংহ অঞ্চল গত বছরের ষষ্ঠ অবস্থান থেকে পিছিয়ে সপ্তমে গেছে। রংপুর অঞ্চল নবম থেকে এগিয়ে অষ্টমে এসেছে।

তালিকায় সর্বশেষ অবস্থান বরিশাল অঞ্চলের। গত বছর অষ্টম অবস্থানে থাকলেও এবার একধাপ পিছিয়ে সর্বশেষে গেছে এই এলাকা।