সাত খুন: সমন্বয়হীনতায় ঝুলে আছে চূড়ান্ত প্রতিবেদন

নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর সাত খুনের ঘটনায় গঠিত প্রশাসনিক তদন্ত কমিটি এক মাসের মাথায় তদন্ত শেষ করার দাবি করলেও চূড়ান্ত প্রতিবেদন এখনো তৈরি করতে পারেনি।

নিজস্ব প্রতিবেদক বিডিনিউজ টেয়েন্টিফোর ডটকমবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Oct 2014, 07:39 PM
Updated : 23 Oct 2014, 07:39 PM

কবে নাগাদ তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হবে তাও বলতে পারছেন না কমিটির চেয়ারম্যান। আর কমিটির সদস্য সচিব বলছেন, কমিটির সদস্যদের মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণেই চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি করা যাচ্ছে না।

কাউন্সিলর নজরুল ইসলামসহ সাত খুনের ঘটনায় র‌্যাব ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ অন্যদের জড়িত থাকার অভিযোগ তদন্তে হাই কোর্টের নির্দেশে গত ৭ মে প্রশাসনিক তদন্ত কমিটি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

এই অপহরণ ও হত্যার সঙ্গে প্রশাসনের কোনো সদস্য বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সদস্যের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভূমিকা বা সংশ্লিষ্টতা ছিল কি না- গণতদন্তের মাধ্যমে তা উদঘাটন করতে বলা হয় কমিটিকে।

অপহৃত ব্যক্তিদের জীবিত উদ্ধারে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো অবহেলা বা গাফিলতি ছিল কি না- কমিটিকে তাও খতিয়ে দেখতে বলা হয়।

তদন্ত কমিটি গত ১৫ মে তাদের প্রথম এবং ৬ সেপ্টেম্বর সর্বশেষ অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দেয়।

কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম ও আইনজীবী চন্দন কুমার সরকারসহ সাতজনকে গত ২৭ এপ্রিল তুলে নেয়ার তিন দিন পর শীতলক্ষ্যা নদীতে তাদের লাশ পাওয়া যায়।

এরপর নজরুলের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম র‌্যাবের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুললে হাই কোর্ট তদন্তের নির্দেশ দেয়। আদালতের নির্দেশে র‌্যাব-১১ এর তিন কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারও করা হয়, যাদের মধ্যে ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরীর জামাতা তারেক সাঈদ মোহাম্মদও রয়েছেন।

সাত খুনের ঘটনায় র‌্যাব সদস্যদের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে প্রশাসনিক তদন্ত কমিটিকে তথ্য দিয়েছেন র‌্যাবের মহাপরিচালক মোখলেছুর রহমান।

প্রশাসনিক কমিটি প্রায় ৪০০ জনের সাক্ষ্য নিয়েছে জানিয়ে তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব আবুল কাশেম মহিউদ্দিন বলেন, “তদন্ত কাজ শেষের দিকে হলেও কমিটির সদস্যরা একযোগে বসতে না পরায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরিতে দেরি হচ্ছে।

“এই কমিটির সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন ছাড়াও আরো দুটি মন্ত্রিসভা কমিটিতেও আমাকে সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করতে হয়।”

কমিটির আরেক সদস্য ও আইন মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মোস্তাফিজুর রহমানকে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বের অতিরিক্ত হিসাবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের নিবন্ধকের দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে বলে জানান মহিউদ্দিন।

তিনি বলেন, “কমিটির অন্য সদস্যরাও বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরিতে কিছুটা সমন্বয়হীনতা দেখা দিয়েছে।”

কমিটির সদস্য ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দারও এই কমিটির বাইরে বেশ কয়েকটি কমিটিতে কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন।

তবে সাত খুনের তদন্ত শেষের দিকে এসেছে জানালেও তদন্ত কমিটির প্রধান শাহজাহান আলী মোল্লা সমন্বয়হীনতার বিষয়টি মানতে নারাজ।

বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “কবে নাগাদ চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হবে তা বলা যাচ্ছে না।”

গত ৯ সেপ্টেম্বর তদন্তের সর্বশেষ অগ্রগতি প্রতিবেদন দেয়ার পর আদালত পরবর্তী প্রতিবেদন দেওয়ার বিষয়ে নতুন কোনো নির্দেশনা দেয়নি।

চলতি মাসে অগ্রগতি প্রতিবেদন দেওয়া সম্ভব হবে না জানিয়ে শাহজাহান বলেন, “নভেম্বরেও চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া যাবে কি না তাও নিশ্চিত করে বলতে পারছি না।

“ভালো তদন্ত করতে হলে ঘটনার গভীরে যেতে হয়। আমরা সেই চেষ্টাই করছি। আর সব কিছু তো নির্ভর করছে পরিস্থিতির ওপর।

“সমন্বয়হীনতার জন্য তদন্ত প্রতিবেদন তৈরিতে দেরি হচ্ছে আমি এটা মনে করি না। এজহারভুক্ত প্রধান আসামিকেও (নূর হোসেন) তো আমরা পাচ্ছি না। কীভাবে চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি করব?” বলেন কমিটির প্রধান।

বর্তমানের ভারতের জেলে বন্দী নূর হোসেনের সাক্ষ্য ছাড়া কি তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হবে না- এমন প্রশ্নে শাহজাহান বলেন, “চেষ্টা করব তার সাক্ষ্য নিতে, তবে তাকে না পাওয়া গেলে তার সাক্ষ্য ছাড়াই চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হবে।”