‘গণতন্ত্রের বিশ্ব’ জয় করেছে বাংলাদেশ: হাসিনা

সিপিএ ও আইপিইউ-দুই আন্তর্জাতিক সংসদীয় ফোরামের শীর্ষ পদে বাংলাদেশের প্রার্থীদের বিজয়ে ‘গণতন্ত্রের বিশ্ব’ জয় হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Oct 2014, 04:13 PM
Updated : 23 Oct 2014, 09:01 AM

এই জয়ে বাংলাদেশের সংসদীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায় সৃষ্টি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ।

এর আগে কখনো কোনো দেশ একসঙ্গে আন্তর্জাতিক এ দুই ফোরামের শীর্ষ নেতৃত্বে আসেনি জানিয়ে ভারতের ডেপুটি হাই কমিশনার সন্দীপ চক্রবর্তী বলেছেন, এই বিজয় শুধু বাংলাদেশের নয়, এটা উপমহাদেশের গৌরব।

কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশনের (সিপিএ) নবনির্বাচিত চেয়ারপারসন শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) নতুন প্রেসিডেন্ট সাবের হোসেন চৌধুরীর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন অতিথিরা।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ হাসিনা বলেন, “এখানে গণতন্ত্রের জয় হয়েছে। গণতন্ত্রের জয় মানে জনগণের জয়। আমরা গণতন্ত্রের বিশ্ব জয় করে এসেছি।

“আত্মবিশ্বাস নিয়ে চললে আর লক্ষ্য স্থির থাকলে- অর্জন কঠিন না।”

দুই নির্বাচনে যারা বাংলাদেশের প্রার্থীদের সমর্থন দিয়েছেন, তাদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।

গত ৯ অক্টোবর ক্যামেরুনের রাজধানী ইয়াউনদে-তে কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশনের ৬০তম সম্মেলনে সরাসরি ভোটে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন। এরপর ১৬ অক্টোবর সুইজারল্যান্ডের রাজধানী জেনেভায় বিশ্বের ১৬৪টি দেশের আইনসভার সংগঠন ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের ১৩১তম সাধারণ অধিবেশনে ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী।

বুধবার বিকালে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন,  “এই নির্বাচনে জয়ী হয়ে বাংলাদেশ মর্যাদার আসন পেয়েছে।

“কেউ আর বাংলাদেশকে করুণা করতে পারবে না। বাংলাদেশ আপন মহিমায় এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশ কেন দরিদ্র থাকবে? বাংলাদেশ কেন ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে চলবে?”

নিজের রাজনৈতিক লক্ষ্যের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “আমি রাজনীতি করি বাংলাদেশের জনগণের জন্য, যে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে আমার বাবা জীবন দিয়েছেন।  আমি তো সব হারিয়েছি। সব হারিয়ে আমি একটা লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি।”

দারিদ্র্য বিমোচনে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা যেভাবে দারিদ্র্য কমাচ্ছি তাতে ২০২১ সালের মধ্যে আমরা বাংলাদেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করতে পারবো।”

বিএনপিবিহীন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৪০ শতাংশ ভোট পড়ায় বিভিন্ন মহলের সমালোচনার কথা মনে করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “অনেক কথা হয়েছে। অনেক সমালোচনা শুনতে হয়েছে।

“বাংলাদেশের মানুষ আস্থা-বিশ্বাস না রাখলে, এটা করতে পারতাম না।”

বক্তব্যের শেষদিকে হাসতে হাসতে তিনি বলেন, সংসদ নেতা নারী, উপনেতা নারী, বিরোধী দলীয় নেতা নারী, স্পিকার নারী-চার জনই নারী।

“জিতবো না কেন? এই জন্যই জিতেছি।”

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক দুই ফোরামে শিরীন শারমিন চৌধুরী ও সাবের হোসেন চৌধুরী নির্বাচিত হয়েছেন।

“সংসদীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে এটা এক নতুন অধ্যায় সৃষ্টি হলো। তা ধরে রাখতে হবে।”

বর্তমানে দেশে ‘গণতন্ত্র নেই’ বলে বিএনপির পক্ষ থেকে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা নাকচ করে পাল্টা প্রশ্ন করেন জাতীয় পার্টির নেতা রওশন।

“তাহলে আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশের নেতৃত্ব এলো কীভাবে? এ বিজয়ের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে- দেশে গণতন্ত্র রয়েছে, সুশাসন রয়েছে, মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে না। ছোটো খাটো কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটছে। তা সারা বিশ্বেই ঘটে।”

তরুণ প্রজন্মকে সঙ্গে নিয়ে দেশের গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে সবার সহযোগিতা চান রওশন।

ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়ার সভাপতিত্বে বিকাল সাড়ে  ৪টার দিকে এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শুরু হয়।  চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ স্বাগত বক্তব্য রাখেন।

কূটনীতিকদের মধ্যে ভারতের উপ-রাষ্ট্রদূত সন্দীপ চক্রবর্তী ও ব্রিটিশ হাই কমিশনার রবার্ট গিবসন, স্বতন্ত্র সাংসদ রুস্তম আলী ফরাজী, ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা, জাসদের সভাপতি তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান আনোযার হোসেন মঞ্জু বক্তব্য দেন।

জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সচিব আশরাফুল মকবুল ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তব্য দেন।

ডেপুটি স্পিকার, প্রধান হুইপ, সংসদ সচিবালয়ের সচিব সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী, সিপিএ চেয়ারপারসন ও আইপিইউ পেসিডেন্টকে আলাদা আলাদাভাবে ফুলের তোড়া দেন। 

পরে শিরীন শারমিন চৌধুরী ও সাবের হোসেন চৌধুরীকে ক্রেস্ট দেন ডেপুটি স্পিকার। আর  প্রধানমন্ত্রীর হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন চিফ হুইপ।

আলোচনা শেষে দেশের বরেণ্য শিল্পীদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা হয়।