চালকের দোষে নাটোরে দুর্ঘটনা: মন্ত্রী

নাটোরে দুর্ঘটনার জন্য দুই বাসের চালকদের দায়ী করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, যাতে ৩৪ জনের মৃত্যু ঘটে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Oct 2014, 11:47 AM
Updated : 22 Oct 2014, 01:36 PM

মহাসড়কে ওই দুর্ঘটনার দুদিন পর বুধবার ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আহ্বানে রাজধানীতে এক শোভাযাত্রায় সাংবাদিকদের প্রশ্নে চালকদের দায়ী করে মন্ত্রী বলেন, দুর্ঘটনাস্থলে সড়কে কোনও সমস্যা ছিল না।

গত সোমবার নাটোরের বড়াইগ্রামে দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে প্রাণ হারান ৩৪ জন। দুর্ঘটনা তদন্তে সড়ক মন্ত্রণালয়ে নির্দেশে জেলা প্রশাসন তিন সদস্যের একটি কমিটি করেছে।

ওই কমিটির প্রতিবেদন বৃহস্পতিবার পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন ওবায়দুল কাদের।

এই প্রসঙ্গে ‘ব্যক্তিগত মত’ প্রকাশ করে তিনি বলেন,  “যেখানে দুর্ঘটনা হয়েছে সেখানে রাস্তা ভাল ছিল। বেপরোয়া চালকদের জন্যই এ দুর্ঘটনা হয়েছে বলে আমি মনে করি। এটি আমার ব্যক্তিগত ধারণা।”

নাটোরে দুর্ঘটনা কবলিত বাস দুটির একটি কেয়া পরিবহনের, যেটি ঢাকা থেকে রাজশাহী যাচ্ছিল, অথৈ পরিবহনের অন্য বাসটি নাটোর শহর থেকে যাচ্ছিল গুরুদাসপুর উপজেলা সদরে।

দুর্ঘটনাস্থল রেজির মোড়ের বাসিন্দা জাকির হোসেন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, কেয়া পরিবহনের বাসটি একটি ট্রাককে অতিক্রম করতে গিয়ে অথৈ পরিবহনের বাসকে সামনে থেকে ধাক্কা দেয়।

অথৈ পরিবহনের এক বাসযাত্রীও একই কথা বলেছিলেন। দুর্ঘটনায় দুই বাসের সামনের অংশই দুমড়ে-মুচড়ে যায়। দুই চালকের মৃত্যুর কথা তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ জানালেও পরে জানা যায়, কেয়া পরিবহনের চালক বেঁচে যাওয়ার পর পালিয়ে গেছেন।

নাটোরের এই দুর্ঘটনা গাড়িচালকদের জন্য এক ধরনের ‘সতর্কবার্তা’ বলে মনে করেন মন্ত্রী।

“এ ঘটনা থেকে চালকদেরও শিক্ষা নিতে হবে। কারণ মনে রাখতে হবে, যিনি গাড়ি চালান তার জীবনও নিরাপদ নয়।”

দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনের বর্ণনা দিতে গিয়ে আবেগাপ্লুতও হয়ে পড়েন ওবায়দুল কাদের।

“এতগুলো লাশ দেখে রাতে খাওয়া-দাওয়া করতে পারিনি, ঘুমাতে পারিনি।”

দুর্ঘটনার পর ওই এলাকাবাসীর ভূমিকার প্রশংসা করে মন্ত্রী বলেন, “দুর্ঘটনা ঘটলেও সেখানে কোনও গাড়ি ভাংচুর হয়নি, অবরোধ হয়নি, তারা ভিন্ন ভূমিকা পালন করেছে।”

কাকরাইলে রাজস্ব ভবনের সামনে থেকে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনের শোভাযাত্রায় অংশ নিয়ে ওবায়দুল কাদের দুর্ঘটনা রোধে সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপ তুলে ধরেন।

“নাটোরের দুর্ঘটনা জাতীয় অনুভূতিতে নাড়া দিয়েছে, সড়ক দুর্ঘটনা এখন জাতীয় দুর্ভাবনা। জীবনের মূল্য তো টাকার অংকে দেওয়া যায় না।”

বাংলাদেশের মহাসড়কের ১৪৪টি স্থানকে দুর্ঘটনাপ্রবণ (ব্ল্যাকস্পট) চিহ্নিত করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমাতে এসব স্থান ঠিক করতে ১৬৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।

সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাসে সচেতনতা তৈরি করতে নতুন প্রজন্মের সাথে মতবিনিময় করা হবে বলেও জানান ওবায়দুল কাদের।

সড়ক নিরাপদ করার লক্ষ্যে জনসচেতনতা তৈরি করতে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলন শুরু করেন দুর্ঘটনায় স্ত্রী-সন্তান হারানো অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন। তিনি এই সংগঠনের চেয়ারম্যান।

‘জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবসে’ আয়োজিত শোভাযাত্রাটি কাকরাইলে শুরু হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়।