প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বুধবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “একজন কুখ্যাত সন্ত্রাসীকে রেইড করতে গিয়ে এই অ্যাক্সিডেন্টটা হয়েছে। দুর্ভাগ্যক্রমে গুলিটা লিমনের লেগে যায়। এটা একটা নিছক দুর্ঘটনা।”
২০১১ সালের ২৩ মার্চ ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার সাতুরিয়া গ্রামে র্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে আহত হন লিমন হোসেন। সে সময় উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী লিমনকে বাঁচাতে একটি পা কেটে বাদ দিতে বাধ্য হন চিকিৎসকরা।
ওই ঘটনায় লিমনকে সন্ত্রাসী হিসাবে উল্লেখ করে তার বিরুদ্ধে র্যাব দুটো মামলাও দায়ের করে, যা সাড়ে তিন বছর ঝুলিয়ে রাখার পর সম্প্রতি প্রত্যাহার করা হয়। অন্যদিকে লিমনকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ছয় র্যাব সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা করেন লিমনের মা হেনোয়ারা বেগম, যার নিষ্পত্তি আজো হয়নি।
লিমনের নামে মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে মঙ্গলবার এইচআরডব্লিউর এক বিবৃতিতে বলা হয়, “যে সব র্যাব সদস্য লিমনকে গুলি করেছিলেন, যাতে সে স্থায়ী পঙ্গু হয়ে যায়, তাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারের ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে ভুয়া অভিযোগ এনে যারা বিচার প্রক্রিয়াকে ভুল পথে চালিত করেছিল তাদেরও বিচার করা দরকার।”
লিমনের মামলা প্রত্যাহার হলেও দোষীদের বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নেবে কি না- এমন প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “র্যাব বলেছে, কুখ্যাত সন্ত্রাসীর সন্নিকটে লিমন থাকায় এই দুর্ঘটনা হয়েছে। লিমনকে উদ্দেশ্য করে তারা গুলি করেনি।”
কামালের ভাষায়, অভিযান চালাতে গেলে ‘দুর্ভাগ্যক্রমে দুই একজন ক্ষতিগ্রস্ত’ হয়ে যায়; লিমন সে রকমই একজন।
“লিমনের ঘটনায় তদন্ত হয়েছে, সেই তদন্ত দেখে যদি কেউ এর সঙ্গে জড়িত থাকে, যদি কেউ ইচ্ছাকৃত কোনো ভুল করে থাকেন- তার ব্যবস্থা হবে। আর যদি ইচ্ছাকৃত না হয়ে দুর্ভাগ্যক্রমে হয়ে থাকে তাহলে তা বিচার-বিশ্লেষণ করে দেখব।”
সংশ্লিষ্ট র্যাব সদস্যদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না- সাংবাদিকরা বার বার এ প্রশ্ন করলেও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী স্পষ্ট কিছু বলেননি।
নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনায় র্যাব সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি মনে করিয়ে দিয়ে কামাল বলেন- পুলিশ, র্যাব যেই হোক, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। আইন অনুযায়ী সবার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “হিউম্যান রাইটস ওয়াচ অনেক কথাই বলেছে। বাংলাদেশের পরিস্থিতিটাও আপনারা জানেন। র্যাবের অনেক সফলতা রয়েছে- তাও আপনারা জানেন।”
স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, সাধারণ পুলিশ বাহিনী যেখানে অপারগ, সেখানে র্যাবকে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে।
“কারণ তাদের সব ধরনের ইকুইপমেন্ট দিয়ে বিশেষ বাহিনী হিসাবে গড়ে তোলা হয়েছে।”
র্যাব ‘দেখার মতো ও উদাহরণ দেওয়ার মতো’ অনেক ভালো কাজ করছে দাবি করে কামাল বলেন, “একটা-দুইটা দুষ্কর্ম যদি তারা করে থাকে তার জন্য পুরো বাহিনী বন্ধ হয়ে যাবে, এটা হতে পারে না।”
সরকারকে ‘হুমকি’ দিয়ে আসা বিএনপির কোনো আন্দোলনই শেষ পর্যন্ত স্বার্থক হবে না বলে মনে করছেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কামাল।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে তিনি বলেন, রাজনৈতিক দল হিসাবে বিএনপি কর্মসূচি নিয়ে ‘নানা কথা’ বললেও জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া কোনো আন্দোলনই হবে না।
“আমরা মনে করছি জনগণ বিএনপির সঙ্গে নেই। তারা যতই আস্ফালন করুক, কোনো আন্দোলনই স্বার্থক হবে না।”
বিএনপি আন্দোলনের নামে ‘ধ্বংসযজ্ঞ’ চালালে সরকার ‘তার কাজ করবে’ বলেও মন্তব্য করেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “বিএনপির আন্দোলন চলতেই পারে। তবে আন্দোলনের মাধ্যমে ধ্বংস, জ্বালাও-পোড়াও, ভাংচুর, স্কুল-কলেজ বন্ধের চেষ্টা করবে- সেটা হতে পারে না।”