ঝুঁকিতে রয়েছে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, বাজার, একটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ কয়েকশ পরিবার।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার বড়কান্দি, কুন্ডেরচর ও পালেরচর ইউনিয়নের শত শত পরিবার তাদের ঘর বাড়ি ভেঙ্গে ও গাছপালা কেটে সরিয়ে নিচ্ছে নিরাপদ স্থানে। যাদের দূরে কোথাও যাওয়ার সুযোগ নেই তারা আশ্রয় নিয়েছে অন্যের ফসলী জমিতে, রাস্তার পাশে। সর্বস্ব হারানো মানুষের কাছে ২০ কেজি ভিজিএফ এর চাল ছাড়া কোনো সহায়তা পৌঁছেনি। অনেকেই খেয়ে না খেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
বর্ষার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নতুন করে ব্যাপকভাবে ভাঙন শুরু হয়েছে চরাঞ্চলের এ তিনটি ইউনিয়নের বিশাল এলাকায়। অক্টোবরের মাঝামাঝি সময় থেকে শুরু হয়ে ভাঙন এখন তীব্র আকার ধারণ কর। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জাজিরা উপজেলার বড়কান্দি ইউনিয়ন।
গত দুই সপ্তাহে এ ইউনিয়নের ছৈয়ালকান্দি, মাদবরকান্দি, কাদির সরদারকান্দি, মুন্সিকান্দি, মাঝিকান্দি, মলঙ্গীকান্দি, দীনমোহাম্মদ শেখকান্দি, মৃধাকান্দি, তাইজ উদ্দিন মাদবরকান্দি, কোতোয়াল কান্দি, কুড়িটাকার চর ও নওয়াপাড়া গ্রামের অন্তত দুইশ ৩০টি বসত বাড়ি পদ্মায় ভেঙ্গে গেছে।
গত ৩ অক্টোবর তিন দিন আগে নদীগর্ভে চলে গেছে ৬ নম্বর নাজিম উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কাদির সরদার কান্দি জামে মসজিদটি। আংশিক ঝুলে রয়েছে মসজিদ সংলগ্ন গণকবরস্থানটি। হুমকির মুখে রয়েছে নওয়াপাড়া রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়টিও।
বড়কান্দি ইউনিয়নের ছৈয়লকান্দি গ্রামের বৃদ্ধা আমেনা বেগম বলেন, “৭ থেকে ৮ বার সর্বনাশা পদ্মার ভাঙনের শিকার হয়েছি। বার বার নতুন নতুন স্থানে বসতি গড়েছি। এবারও অসময়ে পদ্মার ভাঙ্গনে সব ছিনিয়ে নিয়ে গেল। এখন শেষ সময়। শরীরে আর শক্তি পাই না। চোখেও দেখি না। এই বয়সে কোথায় গিয়ে দাঁড়াব জানি না “
৬ নম্বর নজিম উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র মো. ইমরান হোসেন বলেন, স্কুল ভেঙে যাওয়ায় চেয়ারম্যানের কাচারী ঘরে আমাদের ক্লাস হচ্ছে। অনেক সময় রোদ আর বৃষ্টিতে খোলা আকাশের নিচে বসেও লেখা পড়া করতে হয়।
এভাবে ভাঙন অব্যাহত থাকলে বড়কান্দি ইউনিয়ন পরিষদ, দুর্গারহাট, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ অনেক গ্রাম বিলীন হয়ে যাবে।”
ভাঙন মোকাবেলায় নদী শাসন করে একটি স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য দাবি জানান তিনি।
শরীয়তপুর জেলা প্রশাসক রাম চন্দ্র দাস বলেন, নদী ভাঙন কবলিত এলাকার সকল তথ্য প্রশাসনের কাছে রয়েছে। ইতোমধ্যে দুর্গতদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। ভাঙনে সব হারানো এসব মানুষদের পুনর্বাসনের জন্য জায়গা খোঁজা হচ্ছে, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।