২০১১ সালের ওই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দায়ীদের বিচারের মুখোমুখি করা উচিত বলে মনে করে সংস্থাটি।
মঙ্গলবার এইচআরডব্লিউর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে,“কর্তৃপক্ষ শেষ পর্যন্ত লিমনের বিরুদ্ধে দায়ের করা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক অভিযোগ প্রত্যাহার করেছে। কিন্তু তার ওপর হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি।”
বিবৃতিতে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিষয়ক পরিচালক ব্রাড অ্যাডামস বলেন, “যে সব র্যাব সদস্য লিমনকে গুলি করেছিলেন, যাতে সে স্থায়ী পঙ্গু হয়ে যায়, তাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারের ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে ভুয়া অভিযোগ এনে যারা বিচার প্রক্রিয়াকে ভুল পথে চালিত করেছিল তাদেরও বিচার করা দরকার।”
২০১১ সালের ২৩ মার্চ ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার সাতুরিয়া গ্রামে র্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে আহত হন লিমন হোসেন। সাতুরিয়া গ্রামের তোফাজ্জেল হোসেনের ছেলে লিমন সে সময় উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। জীবন বাঁচাতে চিকিৎসকরা তার এক পা কেটে বাদ দিতে বাধ্য হন।
ওই ঘটনার পর লিমনকে সন্ত্রাসী হিসাবে উল্লেখ করে অস্ত্র আইনে এবং সরকারি কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগে দুটি মামলা করে র্যাব। তবে ঘটনাটি গণমাধ্যমে এলে দেশজুড়ে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো র্যাবের সমালোচনা করে দোষীদের আইনের আওতায় আনার আহ্বান জানায়। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনও লিমনের পক্ষে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেয়।
এই পরিস্থিতিতে ২০১৩ সালের ৯ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় র্যাবের দায়ের করা মামলা দুটি প্রত্যাহার করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানায়। গত ১৬ অক্টোবর সরকারি কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের মাধ্যমে সব অভিযোগ থেকে মু্ক্ত হন লিমন।
অন্যদিকে ছেলেকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ছয় র্যাব সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা করেন লিমনের মা হেনোয়ারা বেগম। র্যাব সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগের কোনো সত্যতা মেলেনি জানিয়ে ঘটনার এক বছরের বেশি সময় পর চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় পুলিশ। পুলিশের ওই প্রতিবেদন নিয়ে লিমনের মা নারাজি জানান। বিষয়টি বর্তমানে ঝালকাঠি জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন।
নারায়ণগঞ্জে সাতখুনের ঘটনায় গ্রেপ্তার র্যাব কর্মকর্তাদের বিচারের মাধ্যমে ‘দায়মুক্তির’ সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালে বিশেষ বাহিনী হিসেবে যাত্রা শুরু করে র্যাব।
এরপর গত এক দশকে বিএনপি, সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও আওয়ামী লীগ সরকার- সব আমলেই এই বাহিনী ‘দায়মুক্তি’ নিয়ে কাজ চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছে বলে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে। আর তাতে গুরুতর ও ‘পদ্ধতিগত’ ক্ষমতার অপব্যবহার ঘটছে বলে অভিযোগ তাদের।
এই বাহিনীর বিলুপ্তির দাবি পুনর্ব্যক্ত করে ব্রাড অ্যাডামস বলেছেন, “র্যাব একটি ডেথ স্কোয়াড, যার সংস্কার সম্ভব নয়।”