ঢাকার রাস্তায় পৌনে দুই লাখ অবৈধ রিকশা

ঢাকার রাজপথের একটি বড় অংশ দখল করে চলছে প্রায় সোয়া দুই লাখ রিকশা, যার মধ্যে পৌনে দুই লাখেরই বৈধ নিবন্ধন নেই। 

রেজাউল হকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Oct 2014, 05:49 AM
Updated : 21 Oct 2014, 05:56 AM

ঢাকা সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ সেই ঊনিশশ আশির দশক থেকে নতুন লাইসেন্স দেওয়া বন্ধ রেখেছে। কিন্তু রাজধানীর রাস্তায় প্রতিদিনই নামছে নতুন নতুন রিকশা।

ঢাকা রিকশা ও ভ্যান মালিক ফেডারেশনের সদস্য মনজুর হোসেনের হিসাবে ঢাকায় প্রায় সোয়া দুই লাখ রিকশার জন্য রয়েছে ৬ হাজার গ্যারেজ। আর এই পেশায় যুক্ত আছেন প্রায় আট লাখ শ্রমিক।

ঢাকায় চলাচল করা বহু রিকশার পেছনে এই ফেডারেশন এবং মুক্তিযোদ্ধা সমন্বয় পরিষদ নামে আরেকটি মালিক সমিতির ক্রমিক নম্বর সম্বলিত নম্বরপ্লেট দেখা যায়, যদিও এর কোনো বৈধতা নেই। 

ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি/ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

এ বিষয়ে মনজুর বলেন, “এগুলো সমিতির সদস্য নম্বর, লাইসেন্স নম্বর নয়। এই নম্বরপ্লেট থাকার সুবিধা হলো রিকশা চুরি হলে সমিতির মধ্যস্থতায় অর্থের বিনিময়ে চুরি যাওয়া রিকশা ফেরত পাওয়া যায়।”

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তার সহকারী মো. গিয়াসউদ্দিন জানান, ঢাকায় বিতরণ করা রিকশার বৈধ লাইসেন্সের সংখ্যা ৮৭ হাজার ৮১১টি। এর মধ্যে ডিসিসি উত্তরে চলছে ২৮ হাজার ৮৩০টি বৈধ রিকশা।

প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মমতাজ উদ্দিন বলেন, “এরশাদ সরকারের সময় থেকেই ঢাকায় রিকশার নতুন লাইসেন্স দেওয়া বন্ধ। এখন অধিকাংশ রিকশারই কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই।”

গ্যারেজ মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সেই সময়ের এক একটি লাইসেন্স এখন রিকশাসহ বিক্রি হচ্ছে ১৫ হাজার টাকায়। আবার অনেকে এসব লাইসেন্স দৈনিক ভিত্তিতে ভাড়া দিচ্ছেন। অনেকে আবার একটি বৈধ লাইসেন্সের বিপরীতে রাস্তায় নামাচ্ছেন বহু রিকশা।

মিরপুরের ভাষানটেক আর দিয়াবাড়ীর কয়েকজন গ্যারেজ মালিক ও রিকশা চালকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুই ঈদ ও পহেলা বৈশাখের সময় ঢাকার রাজপথে রিকশা ও রিকশাশ্রমিকের সংখ্যা বেশ বেড়ে যায়। আর গ্রামে ফসল কাটা ও শস্য বোনার মৌসুমে এ সংখ্যা কমে যায়।

একবেলা রিকশা চালানোর জন্য একজন চালক গ্যারেজ মালিককে পুরো বেলার জন্য দেন ১০০ থেকে ১২০ টাকা। আর আধা বেলার জন্য দিতে হয় ৬০ থেকে ৮০ টাকা।

ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি/ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক জরিপে দেখা যায়, দেশে একজন রিকশাচালক দৈনিক গড়ে ৩৬৮ টাকা আয় করেন। মাসে গড়ে আয় হয় দশ হাজার টাকার মতো।

জয়পুরহাটের এক রিকশা শ্রমিক জানালেন, কার্তিকের মাঝামাঝি আর বর্ষার শুরুতে তার এলাকার শ্রমিকরা গ্রামে চলে যান ফসল কাটতে ও শস্য বুনতে। মাঝে তাদের হাতে কোনো কাজ না থাকলে তারা ঢাকায় আসেন রিকশা চালাতে।

গ্রামে কাজের অভাবে শহরে ভিড় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজপথে বাড়ে অবৈধ রিকশার সংখ্যা।

এদিকে ঢাকার ভিআইপি সড়কগুলোতে রিকশা চলাচল নিষিদ্ধ হলেও সুযোগ পেলেই চালকরা মূল সড়কে চলে আসেন, যা যানজটের অন্যতম কারণ বলে গাড়ি চালকদের অভিযোগ। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে বলা হয়, ভিআইপি সড়কে রিকশা চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আগের মতোই আছে। বিভিন্ন সড়কে অভিযান চালিয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে অবৈধ রিকশা উচ্ছেদও করা হয়।