পিয়াসের বাবা স্বাধীনতাবিরোধীদের নেতা ছিলেন: মুক্তিযোদ্ধা রেজা

বিতর্কিত টিভি আলোচক পিয়াস করিমের বাবার রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বক্তব্যের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে কুমিল্লার একজন মুক্তিযোদ্ধা বলেছেন, প্রয়াত টিভি আলোচকের বাবা এম এ করিম ছিলেন শহরের স্বাধীনতাবিরোধীদের নেতা।

সোশ্যাল মিডিয়া ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Oct 2014, 03:33 PM
Updated : 20 Oct 2014, 03:33 PM

কুমিল্লার মুক্তিযোদ্ধা বীর প্রতীক খেতাব পাওয়া বাহাউদ্দিন রেজা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “একাত্তরে যুদ্ধ করেছি আমরা, গুলি-ব্রাশফায়ারে মরে যাওয়ার ঝুঁকির মধ্যে যুদ্ধ করেছি আমরা, আইনমন্ত্রী তো যুদ্ধ করেন নাই; তাইলে উনি কিভাবে সার্টিফিকেট দিচ্ছেন পিয়াস করিমের বাবা এম এ করিম রাজাকার ছিলেন না?”

আনিসুল হক রোববার সাংবাদিকদের বলেন, পিয়াস করিম একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে প্রচারপত্র বিলি করার সময় পাকিস্তানি সেনা সদস্যদের হাতে ধরা পড়েছিলেন আর তাকে ছাড়াতেই তার বাবা অ্যাডভোকেট আব্দুল করিম শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান হতে ‘বাধ্য’ হন।

ফাইল ছবি

মন্ত্রীর বক্তব্যে প্রয়াত পিয়াস করিমকে নিয়ে আরেক দফা আলোচনার ঝড় ওঠে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেইসবুকে।

সেখানে একটি পেইজে পিয়াস করিমের বাবা আইনজীবী এম এ করিমের একাত্তরের ভূমিকা নিয়ে একটি ছোট্ট ভিডিও ক্লিপে মুক্তিযোদ্ধা রেজা বলেন, “এম এ করিমের রাজাকার হিসাবে ভূমিকার কারণে তার বাসায় গ্রেনেড হামলা চালানো হয় সে সময়।”

এই সূত্রে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম যোগাযোগ করে তার সঙ্গে।

কুমিল্লার বীরপ্রতীক খেতাব পাওয়া দুই জনের একজন বাহাউদ্দিন রেজা, যিনি একাত্তরে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা বা এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন। যুদ্ধ করেছেন ২ নম্বর সেক্টরের হয়ে, যার প্রধান ছিলেন মেজর খালেদ মোশাররফ এবং পরবর্তীতে মেজর এটিএম হায়দার।

তিনি বলেন, “একাত্তরে তো পিয়াস করিম ফিডার খাইতেন না। উনি তখন আমাদের চাইতে দুই/তিন বছর ছোট ছিলেন। এরকম বয়সী তো অনেকেই মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। পিয়াস করিমকে তো যুদ্ধে দেখা যায়ই নাই, বরং তিনি তার বাবার ফলোয়ার ছিলেন।

“আর উনার বাবা তো পাকিস্তানি সেনাদের আড্ডা দেওয়ার জন্য তার বাড়ি ব্যবহার করতে দিয়েছিলেন আর কুমিল্লায় যত স্বাধীনতাবিরোধী ছিল, তাদের নেতৃত্ব দিতেন।”

১৯৭১ সালে ২ নম্বর সেক্টরের অধীনে ঢাকা, ফরিদপুর ছাড়াও কুমিল্লা ছিল এর অন্তর্গত। এই সেক্টরের প্রধান সমন্বয় কার্যালয় ছিল ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের মেলাঘর।

বাহাউদ্দিন রেজা বলেন, “১৯৭১ এ পাকিস্তানি সেনাদের যেমন স্পাই ছিল, আমাদেরও তেমনি স্পাই ছিল। তো ওইখানে মেজর হায়দার আমাদের আট জন, যারা প্লাটুন কমান্ডার ছিলাম, আমাদের দায়িত্ব ছিল শহরের ১০টি স্থানে বম্বিং করা।

“ওই ১০টা স্থানের মধ্যে ২টা স্থান ছিল ২ জনের বাড়ি, যাদের বাড়ি পাকিস্তানি আর্মিদের আড্ডা-পরিকল্পনার স্থান। এই দুইটা বাড়ির একটা হল আদালত মোড়ে থাকা পিয়াস করিমের বাবার বাসা অ্যাডভোকেট এম এ করিমের বাসা এবং আরেকটা গায়ক আসিফ আকবরের বাবা অ্যাডভোকেট আকবর সাহেবের বাসা।”

বাহাউদ্দিন রেজা জানান, তারা সোনালী ব্যাংক, কমার্স ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ও গ্রেনেড ছোড়েন তখন কমান্ডারের নির্দেশে।

তিনি বলেন, “পিয়াস করিম মারা যাওয়ার পর টিভি টকশোতে তথাকথিত শিক্ষিত লোকেরা যখন বলেন তার বাবা রাজাকার ছিলেন না, পিয়াস করিম মহান ব্যক্তি ছিলেন, তখন মনে হইতেছিল টিভি আছাড় দিয়া ভাইঙ্গা ফেলি।

“একাত্তরে আমরা যুদ্ধ করলাম, এমনও হয়েছে আর ২ মিনিট এদিক ওদিক হলে ব্রাশ ফায়ারে মরে যেতাম।”