‘রায় পক্ষে পেতে’ আদালতে বোমার হুমকি

জেএমবি পরিচয়ে চট্টগ্রামের আদালত ভবন বোমায় দেওয়ার হুমকি যিনি দিয়েছিলেন, তিনি পেশায় একজন দোকানদার। জমি সংক্রান্ত মামলার রায় পক্ষে পেতে ওই কাণ্ড ঘটান বলে তিনি দাবি করেছেন। 

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Oct 2014, 09:11 AM
Updated : 20 Oct 2014, 07:12 PM

রোববার রাতে বন্দরনগরীর বাদুরতলা এলাকার বাসা থেকে ‘হুমকিদাতা’ নাসির মোহাম্মদকে (৪৪) গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ঘটনায় সহযোগিতার অভিযোগে তার শ্যালক সালাউদ্দিনকেও (২২) গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতের মাধ্যমে নিজেদের হেফাজতেও নিয়েছে পুলিশ।

পুলিশ বলছে, জেএমবি পরিচয়ে হুমকি দিলেও নাসিরের জঙ্গি সম্পৃক্ততা নেই। জমি সংক্রান্ত মামলায় ‘দিশেহারা’ হয়ে সে ওই কাজ করে।

গত মঙ্গলবার সকালে চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির নির্বাহী কমিটির সদস্য আইনজীবী মানস দাশের মোবাইলে ফোন করে জেএমবি পরিচয়ে বোমা হামলার হুমকি দেন নাসির। মানস দাশ বিষয়টি পুলিশ ও আইনজীবী সমিতির নেতাদের জানালে আদালত ভবন এলাকায় কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়।

ওইদিন তল্লাশী চলাকালে প্রায় ৫৮ লাখ ‍টাকাসহ গ্রেপ্তার হন ইলিয়াছ ভুঁইয়া নামের এক ব্যক্তি। চট্টগ্রাম আদালত ভবন এলাকায় ভূমি অধিগ্রহণ শাখার সার্ভেয়ার শহীদুল ইসলাম মুরাদকে দিতে ওই টাকা নিয়ে যাচ্ছিলেন বলে পুলিশের কাছে দাবি করেছেন ইলিয়াছ।

রোববার গ্রেপ্তারের পর সোমবার সকালে নাসিরকে চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়।

সেখানে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জমি নিয়ে একটা মামলা ছিল। মামলার রায়ের দিন ছিল মঙ্গলবার। সেজন্যই ফোন করে আমি জেএমবি বোমা মারবে বলেছিলাম।”

হুমকি দেওয়ার জন্য আইনজীবী মানস দাশকে কেন ফোন করেছিলেন জানতে চাইলে নাছির বলেন, “আমার আইনজীবী আবু বকর। আর মানস ‍দাশ আমার বাসার কাছেই থাকে। মাঝে মাঝে আমার দোকান থেকে মোবাইল বিল রিচার্জ করে। আমি দুজনকেই ফোন করেছিলাম।”

নাসির দাবি করেন, তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নন। তার ‘পরিবারের সবাই’ আওয়ামী লীগ সমর্থন করেন।

বাদুরতলা এলাকার মৃত দোস্ত মোহাম্মদের ছেলে নাসির ওই এলাকাতেই মোবাইলে বিল রিচার্জের ব্যবসা করেন। তিনি বাদুরতলা এলাকার হারেজ শাহ মাজারের খাদেম বলেও জানিয়েছে পুলিশ।

গোয়েন্দা পুলিশের এসআই সন্তোষ চাকমা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নাছিরের কোনো জঙ্গি সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। মঙ্গলবারের (১৪ অক্টোবর) মামলায় অন্য পক্ষ না আসায় রায় নাছিরের পক্ষেই গেছে।”

এসআই সন্তোষ বলেন, “ফোনে হুমকি দেয়ার পর ওইদিন আদালত এলাকায় গিয়েছিলেন নাছির। রায় পক্ষে পাওয়ায় পরদিন বুধবার বিএস সংশোধনীর একটি মামলাও তিনি করেন। তার জমি বিষয়ক জটিলতা এতে প্রায় সুরাহা হওয়ার পথে।”

নাছির বাদুরতলায় তার পৈত্রিক সম্পত্তি চার বছর আগে একটি ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানকে দেন। ওই প্রতিষ্ঠান কাজ শুরুর আগেই জমির মালিকানা দাবি করে অন্য একজন মামলা করেন।

“এ কারণে ওই ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান নাছিরের কাছে এক কোটি ৩০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করে। চার বছর ধরে মামলা চলার পরও সুরাহা না হওয়ায় দিশেহারা হয়ে নাছির এ কাজ করেন বলে দাবি করেছেন”, বলেন সন্তোষ।

এদিকে নাসির দুই আইনজীবীকে ফোনে ওই হুমকির কথা বললেও তাদের মধ্যে একজন বিষয়টি পুলিশকে না জানানোয় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।

সন্তোষ চাকমা বলেন, “নাছিরের আইনজীবী আবু বকর হুমকির বিষয়টি আমাদের জানাননি। কেন জানাননি বুঝতে পারছি না।”

অবশ্য আইনজীবী আবু বকরের দাবি, ঘটনার সকালে নাছিরের ফোন যখন এসেছিল তখন তিনি ঘুমিয়ে ছিলেন। পরে বিষয়টি তিনি আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদককে অবহিত করেন।

“মঙ্গলবার সকালে এক ব্যক্তি ফোন করে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় বলেন যে- তিনি জেল থেকে বেরিয়েছেন। তিনি জানতে পেরেছেন আজ (মঙ্গলবার) জেএমবি বোমা মেরে আদালত ভবন উড়িয়ে দেবে।

“সকালে ফোনটি যখন আসে তখন আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। সে নিজেকে নাছির বলে পরিচয় দেয়নি। তার কথাও ভালো বুঝতে পারিনি। পরে বিষয়টি আমি ‍আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদককে জানিয়েছি। ততক্ষণে দেখি আদালত এলাকায় পুলিশ ব্যাপক নিরাপত্তা নিয়েছে।”

সন্তোষ জানান, যে মোবাইল ফোন থেকে নাসির আদালত ভবন উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেন সেটি তার শ্যালক সালাউদ্দিন বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল এলাকার একটি নালায় ফেলে দিয়েছিলেন। সে কারণে তাকেও এ মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে।