অবৈধদের বিতাড়নে কঠোর হচ্ছে ভারত

পশ্চিমবঙ্গে বর্ধমানের একটি বাড়িতে বিস্ফোরণে ‘বাংলাদেশের জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা’ পাওয়ার পর অবৈধ বসবাসকারীদের সনাক্ত এবং তাদেরকে দেশ থেকে বিতাড়নে শিগগিরই অভিযান চালাতে যাচ্ছে ভারত।

নয়াদিল্লি প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Oct 2014, 05:23 PM
Updated : 19 Oct 2014, 07:06 PM

গোয়েন্দা সংস্থার একটি প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে একথা জানিয়েছেন।

তার ভাষ্য অনুযায়ী অবৈধভাবে বসবাসকারী বিদেশি নাগরিকরাই ভারতবিরোধী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি জড়িত বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

বিজেপি ক্ষমতায় যাওয়ার আগে ‘অবৈধ বাংলাদেশিদের’ ভারত থেকে বিতাড়নের কথা বলে এলেও সরকার গঠনের পর এনিয়ে কিছু বলছিল না।

বর্ধমানে গত ২ অক্টোবরের বোমা বিস্ফোরণের পর এখন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন বিজেপির ওই প্রচারে ভিত্তি দেবে। 

গত বছর ভারতের লোকসভায় সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সে দেশে ‘অবৈধ বাংলাদেশির’ সংখ্যা ৮৩ হাজার।

অন্য এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ভারতে বৈধভাবে গিয়ে ১ হাজার ৫৪১ জন বাংলাদেশি ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও থেকে গেছেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা বলেন, “ভারতে অনুপ্রবেশের সময় এসব বিদেশি নাগরিক বৈধ কাগজপত্র নিয়ে এলেও ভিসার মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ার পর তারা অবৈধভাবে বসবাস করছেন।” 

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা বলেন, “অবৈধভাবে বসবাসকারীদের এই সনাক্তকরণ ও বহিষ্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া।”

আসাম রাজ্যের বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী জেলা করিমগঞ্জের জ্যেষ্ঠ এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, তারা এমন অনেক ঘটনা পেয়েছেন, যেখানে বাংলাদেশ থেকে নাগরিকরা বৈধ কাগজপত্র নিয়ে ভারতে গিয়ে লুকিয়ে পড়েছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই পুলিশ কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যদিও আমরা সেইসব (তাদের নথিতে উল্লিখিত) জায়গায় অভিযান চালাই, তবু তাদেরকে সেখানে পাওয়া যায় না।”

ফাইল ছবি

ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দেশটির  ‘ফরেইনারস আইন, ১৯৪৬’-এর ৩(২) ধারা অনুযায়ী রাজ্য সরকারকে অবৈধভাবে বসবাসকারী বিদেশিদের সনাক্তকরণের এবং বহিষ্কারের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

বিশেষ করে আসামে অবৈধভাবে বসবাসকারী বিদেশিদের সনাক্তকরণ ও বহিষ্কারের প্রক্রিয়াটি আরও গুরুত্ব পাচ্ছে  ভারতের কাছে। আর এ লক্ষ্যে ওই রাজ্যের সরকার ইতোমধ্যেই ৫০০ ‘টাস্ক ফোর্স’ গঠন করেছে।  

অবৈধ বসবাসকারীদের সনাক্ত করতে আসামে বিশেষ ট্রাইব্যুনালও রয়েছে, যাদের দায়িত্ব হচ্ছে অবৈধ এসব বসবাসকারীকে চিহ্নিতকরণ ও নিজ দেশে ফেরত পাঠানো। এই প্রক্রিয়া সুষ্ঠু ও দ্রুততর করতে গত বছর চলমান ৩৬টি ট্রাইব্যুনালের সঙ্গে ৬৪টি ট্রাইব্যুনালের যুক্তের প্রস্তাব পাস হয়েছে।

এছাড়া রাজ্যের শক্তিশালী ছাত্র সংগঠন অল আসাম স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (এএএসইউ) সবসময়ই আসাম থেকে অবৈধ বসবাসকারীদের বিতাড়নের জোর দাবি জানিয়ে আসছে।

গত শতকের সত্তরের দশকে আসামে ‘বাংলাদেশি খেদাও’ আন্দোলন হয়, যা ১৯৮৫ সালে ‘আসাম চুক্তি’র মধ্য দিয়ে শেষ হয়।  এএএসইউ নতুন করে সেই আন্দোলনেই হাওয়া দিচ্ছে।