জাতীয় অধ্যাপক সালাহ্উদ্দীন আহমদের মৃত্যুর খবরে তার বনানীর বাসায় ছুটে আসা ছাত্র ও শুভানুধ্যায়ীদের কণ্ঠে ঘুরেফিরে যে কথাগুলো এসেছে তার সারমর্ম দাঁড়ায়- একজন উন্মুক্ত চিন্তার মানুষকে হারাল বাংলাদেশ।
রোববার ভোর ৬টার দিকে বনানীতে নিজের বাসায় মারা যান ইতিহাসবিদ সালাহ্উদ্দীন আহমদ; বয়স হয়েছিল নব্বই।
খবর পেয়ে সকালে বনানীর বাসায় ছুটে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সর্বজন শ্রদ্ধেয় এই শিক্ষকের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও।
শ্রদ্ধা নিবেদনের পরিক্রমা দীর্ঘ হয়েছে অসংখ্য অনুসারী আর অনুরাগীর ভিড়ে।
শ্রদ্ধা জানাতে এসে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, সবার শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি ছিলেন এই জাতীয় অধ্যাপক। এমন সুস্থ মনের, উন্মুক্ত চিন্তার মানুষ আর দ্বিতীয়টি জীবিত নেই।
“উনার মনে ছিল না কোনো কুসংস্কার; সাম্প্রদায়িকতা এ শব্দটাই তার মধ্যে ছিল না। সমাজের জন্য উচ্চ চিন্তা, অসাম্প্রদায়িক সমাজের জন্য চিন্তা- সবকিছুই তার লেখা ও জীবনে ছিল। উনার কোনো শত্রু কোনও দিনই হয়নি, উনার ব্যবহার এত মধুর।”
বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী সম্পাদনায় এ ইতিহাসবিদের ভূমিকার কথাও তুলে ধরেন মুহিত।
জাতীয় অধ্যাপক হিসেবে ইতিহাসবিদ সালাহ্উদ্দীন পরিণত বয়স পেয়েছেন উল্লেখ করে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, “উপমহাদেশের খ্যাতিমান ইতিহাসবিদ ছিলেন অধ্যাপক সালাহউদ্দীন। মানুষ হিসেবে ছিলেন অসাধারণ। দেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে তার ভূমিকার হাত ধরে তা এগিয়ে নিতে পারলে শান্তি পাবেন এ শিক্ষক।”
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেন, তিনি তার বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে শিক্ষার্থীদের সনদ বিতরণ করেছিলেন। তিনি ছিলেন আপাদমস্তক একজন মানবতাবাদী লোক।
“সমাজের ভালোর জন্য কী করা যায়, কারও ভালো করার জন্যে সব সময় চেষ্টা করেছেন। বলতে গেলে- হি ওয়াজ এ হিউম্যানিস্ট।”
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, “তিনি ছিলেন এমন অমায়িক ব্যক্তি, যেমন আর দ্বিতীয়টি দেখিনি। ইতিহাসসহ সব শাখাতেই তার বিচরণ। অসাধারণ ব্যক্তিত্ব ছিলেন তিনি।”
নাট্যব্যক্তিত্ব পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, মুক্তিযুদ্ধ থেকে ফিরে তিনি যে ক’জন গুণী ব্যক্তির সান্নিধ্য পেয়েছেন তার মধ্যে অন্যতম ছিলেন অধ্যাপক সালাহ্উদ্দীন আহমদ।
“তিনি বিশ্বাস করতেন শুদ্ধতায়। তার অনুপস্থিতি আমাদের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে।”
দুপুরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সর্বস্তরের জনগণের শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সালাহ্উদ্দীন আহমদের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে। বাদ আসর জানাজা শেষে বনানী গোরস্তানে তাকে শায়িত করা হয়।
১৯২৪ সালে ২৪শে সেপ্টেম্বর ফরিদপুর শহরে জন্ম সালাহ্উদ্দীনের। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে বিএ অনার্স এবং এমএ করার পর যুক্তরাষ্ট্রের পেনসেলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ এবং লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন তিনি।
জগন্নাথ কলেজ দিয়ে শিক্ষকতার শুরু করা এই শিক্ষাবিদের বিচরণ ঘটেছে রাজশাহী, জাহাঙ্গীরনগর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক হিসাবেই শিক্ষকতায় ইতি টানেন।