রোববার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় পরিদর্শনের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী বলেন, “শিক্ষক নিয়োগের জন্য আলাদা কমিশন থাকা উচিত। এজন্য ব্যবস্থা নিতে হবে।”
সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) পাশাপাশি শিক্ষক নিয়োগের জন্য পৃথক কমিশন গঠন প্রসঙ্গে সরকার প্রধান বলেন, “একটি মূল কমিশন থাকতে পারে। সাথে আরেকটা কমিশন থাকবে, যারা শিক্ষক নিয়োগ দেবে।”
তবে শিক্ষক নিয়োগের জন্য নতুন করে কমিশন গঠনের ক্ষেত্রে জটিলতা থাকবে বলেও মনে করেন প্রধানমন্ত্রী।
“একটি পরিবর্তন আনতে গেলে অনেক জটিলতা দেখা দেয়,” বলেন তিনি।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন বৈষম্যের কথা তুলে ধরেন।
নতুন পে-কমিশন হলে বেতন বৈষম্যের সমাধান হবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজের গুরুত্ব তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “সমাজকে গড়ে তোলার ভিত্তিটা এই জায়গা থেকেই গড়ে ওঠে। যেভাবে শিক্ষা দেওয়া হবে সেভাবেই ভবিষ্যতের কর্ণধাররা গড়ে উঠবে।”
শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তার কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী।
“প্রশিক্ষণ খুব দরকার। পরিবর্তনশীল বিশ্বের সাথে মানিয়ে চলতে প্রশিক্ষণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ,” বলেন তিনি।
শিক্ষার্থীদের জন্য খেলাধুলা ও সংস্কৃতি চর্চার ওপর গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, শিশুদের জন্য খেলাধুলা ও সংস্কৃতি চর্চা একান্ত প্রয়োজন।
এজন্য রাজধানীর বাইরের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য আরো সুযোগ সৃষ্টি করার নির্দেশ দেন তিনি।
পার্বত্য অঞ্চল, দ্বীপ, চর ও দেশের দক্ষিণাঞ্চলে স্কুল ভবন নির্মাণের তাগাদা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ওই সব জায়গায় সমতলের নিয়ম চলবে না। সেখানে বিশেষ নিয়ম করতে হবে।”
ছাদের পানি নিষ্কাশনের জন্য ব্যবস্থা রেখে প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনের নকশা করার ওপর গুরুত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “দোতলা করলে, একবারের করা উচিত। না হলে আমাদের দেশের চালা ঘরের মতো ছাদ করা উচিত, যেন পানিটা সরতে পারে।
“ক্রস ভেন্টিলেশন থাকতেই হবে। কারণ এক সাথে অনেক শিক্ষার্থী বসবে।”
শিক্ষা ব্যবস্থা আধুনিকায়নের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আগামীতে আমাদের ছেলে-মেয়েদের হাতে ডিজিটাল ডিভাইস তুলে দেব। তখন আর বই নিয়ে ছোটাছুটি করতে হবে না। তবে বইয়ের প্রয়োজন আছে।”
বিনামূলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বছরের শুরুতেই যে পুস্তক দেওয়া হচ্ছে- সেগুলোর মান নিয়ে যারা প্রশ্ন তুলছেন, তাদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “প্রাথমিক পর্যায়ের বইয়ে তো আমি খারাপ কিছু দেখছি না। আমরা তো শুরু করেছি। আগে তো দেওয়াই হতো না।”
“কারণ শিক্ষাই হলো দারিদ্র্যমুক্ত হওয়ার চাবি কাঠি।”
শিক্ষানীতিতে ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে তিনি বলেন, “ধর্মীয় শিক্ষা ছাড়া পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা হয় না। আর ধর্মীয় শিক্ষা থাকলে কাউকে বিভ্রান্তও করা যায় না।”
নিরক্ষরতা দূর করতে ছাত্রলীগের সদস্যদের উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
নিজ উদ্যোগে ‘স্কুল ফিডিং’ চালাতে এলাকার বিত্তশালী, জনপ্রতিনিধি, স্কুল কমিটি ও অভিভাবকদের নিয়ে একটি তহবিল গঠনের পরামর্শ দেন তিনি।
অনুষ্ঠানে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী আখতার হোসেনসহ ওই মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।