এশিয়া-ইউরোপ যোগাযোগ বাড়াতে জোর হাসিনার

এশিয়া ও ইউরোপের বন্ধন মজবুত করতে বাণিজ্য সম্পর্ক এবং দুই অঞ্চলের মানুষের যোগাযোগ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Oct 2014, 07:01 PM
Updated : 16 Oct 2014, 07:05 PM

ইতালির মিলানে বৃহস্পতিবার দশম আসেম শীর্ষ সম্মেলনে বক্তব্যে এই আহ্বান জানিয়ে এক্ষেত্রে ইউরোপকে এগিয়ে আসার পরামর্শ দেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, “দুই মহাদেশের মধ্যে মিথষ্ক্রিয়া ও সংযোগ যত বাড়বে, তত বেশি অংশীদারিত্ব গড়ে উঠবে, যার ফল ভোগ করবে উভয় অঞ্চলই।”

এশিয়া-ইউরোপ আন্তঃমহাদেশীয় ফোরামের এই সম্মেলনে নবীনতম সদস্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী দুই অঞ্চলের ঐতিহাসিক সম্পর্কের কথা তুলে ধরে ভবিষ্যতে সম্পর্ক আরও দৃঢ় হওয়ার আশা পোষণ করেন।   

এশিয়া ও ইউরোপের  পারস্পরিক নির্ভরশীলতা বাড়ার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, গত কয়েক বছরে এই দুই মহাদেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ দুই ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে।  এছাড়া এশিয়ার দেশগুলোতে মোট বিদেশি বিনিয়োগের এক-চতুর্থাংশ ইউরোপের। 

“এর মাধ্যমে এমন একটি পরিবেশ তৈরি হয়েছে যাতে নিজেদের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহায়তা আমরা আরও বাড়াতে পারব।”

শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের পণ্য সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয় ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোয়। আমি জানি, এশিয়ার দেশই এখন ইইউ-এর সঙ্গে বড় বাণিজ্য চুক্তির ব্যাপারে আলোচনা চালাচ্ছে।

“বাণিজ্য পরিবেশ যত বেশি অনুকূল থাকবে, দুই মহাদেশের মধ্যে তত বেশি প্রযুক্তিগত সহযোগিতা বাড়বে, পাশাপাশি দুই অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে মানুষের সংযোগও বাড়বে। আর এর মধ্য দিয়েই এশিয়া-ইউরোপ যোগাযোগ বাড়ানোর যে কথা বলা হচ্ছে, তা বাস্তবে রূপ নেবে।”

লাওসের রাজধানী ভিয়েনতিয়েনে আসেমের গত সম্মেলনে বাংলাদেশ আন্তঃমহাদেশীয় এই ফোরামের সদস্য হয়। বর্তমানে ৫১টি দেশ এর সদস্য।

ইতালিতে দশম সম্মেলনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানের ফাঁকে শেখ হাসিনা ইউরোপের সর্ববৃহৎ অর্থনীতির দেশ জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মের্কেলের সঙ্গে বৈঠক করেন। এছাড়া ইতালি, সুইডেন ও গ্রিসের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও বৈঠক করেন তিনি। আলোচনা করেন চীনের প্রধানমন্ত্রী লি খা ছিয়াংয়ের সঙ্গেও। 

সম্মেলনে বক্তব্যে শেখ হাসিনা বাংলাদেশে তার সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে বিনিয়োগ করতে ইউরোপের দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, আঞ্চলিক যোগাযোগের উন্নয়নে বাংলাদেশ বড় ধরনের অবকাঠামো ও যোগাযোগ পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। 

“আঞ্চলিক যোগাযোগের বৃদ্ধির প্রেক্ষাপট বিবেচনায় রেখে দেশজুড়ে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হয়েছে, যাতে সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে পারেন।”

দারিদ্র্য বিমোচন, নারীর ক্ষমতায়ন এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্যগাথাও অন্য দেশগুলোর কাছে তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

শিক্ষার প্রসারকে বৈশ্বিক উন্নয়নের ‘এজেন্ডায়’ গুরুত্বের সঙ্গে স্থান দিতে বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধানদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা করতে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোকে সহায়তা করতে উন্নত দেশগুলোর প্রতি এই আন্তর্জাতিক ফোরামেও আহ্বান জানান বাংলাদেশের সরকার প্রধান।

জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা ও ঝুঁকি কমিয়ে আনতে স্বল্প সামর্থ্য নিয়েও বাংলাদেশের সাড়ে ৩৮ কোটি ডলারের তহবিল গঠনের কথা উল্লেখ করেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় পর্যাপ্ত অর্থায়ন, স্থানীয়ভাবে মানিয়ে নিতে সক্ষম প্রযুক্তি এবং সক্ষমতা ও প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে সহযোগিতার প্রয়োজন হয়েছে।

জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবেলাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আন্তঃমহাদেশীয় সহযোহিতা বাড়ানোর গুরুত্ব তুলে ধরেন তিনি।  

“আমরা যদি বৈশ্বিক ইস্যুগুলোয় সহযোগিতা জোরদার করতে পারি, তাহলেই আমরা স্থিতিশীল ও সামগ্রিক বৈশ্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পারব।”