জঙ্গিবাদবিরোধী টাস্কফোর্স গঠনের দাবি

ভারতের পশ্চিববঙ্গের বর্ধমানে বোমা বিস্ফোরণে বাংলাদশি জঙ্গিদের সম্পৃক্ততা নিয়ে কথা উঠার মধ্যে এই অঞ্চলে জঙ্গি তৎপরতা মোকাবেলায় আন্তঃদেশীয় টাস্কফোর্স গঠনের পরামর্শ দিয়েছেন একটি আলোচনা সভার বক্তারা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Oct 2014, 06:13 PM
Updated : 16 Oct 2014, 07:40 PM

জঙ্গিবাদকে কার্যকরভাবে মোকাবেলা না করা গেলে অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশও মধ্যপ্রাচ্যের মতো জঙ্গিবাদে অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে বলেও সতর্ক করেন তারা।

বৃহস্পতিবার রাজধানীতে ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও জঙ্গিবাদ দমন: সরকার ও নাগরিক সমাজের করণীয়’ বিষয়ে আলোচনা সভায় এসব বিষয় তুলে ধরেন তারা।

বর্ধমানের বিস্ফোরণের প্রসঙ্গ তুলে ধরে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, “গ্রেনেড বিস্ফোরণের ঘটনা তদন্তের পর বাংলাদেশ ও ভারতে জঙ্গিবাদী তৎপরতার বিষয়টি গোয়েন্দাদের কাছে আরো স্পষ্ট হয়েছে, যা নিয়ে আমরা অনেক দিন ধরে সতর্ক করে আসছিলাম।”

গত ২ অক্টোবর বর্ধমানের একটি বাড়িতে বোমা তৈরির সময় বিস্ফোরণে শামীম ওরফে শাকিল আহমেদ এবং স্বপন ওরফে সুবহান মণ্ডল নামে দুই ব্যক্তি নিহত হন, যারা জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)-এর একটি শাখার সদস্য ছিল বলে ভারতীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলো বলছে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে তাদের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য ভারত সরকারের কাছে চেয়েছে।

শাহরিয়ার কবির বলেন, “বাংলাদেশ থেকে জামায়াতি-জঙ্গিরা ভারতে গিয়ে পারিবারিক সম্পর্ক গড়ে তুলছে, অবৈধ পরিচয়পত্র সংগ্রহ করছে। পাকিস্তান, মধ্যপ্রাচ্য ও পশ্চিমা দেশগুলো থেকে অর্থ সংগ্রহ করে পশ্চিমবঙ্গকে অস্ত্র উৎপাদনের কুটির শিল্পে পরিণত করেছে।

“মাদ্রাসপড়ুয়া ও গ্রামাঞ্চলের লাঞ্ছনাপীড়িত, দরিদ্র মুসলিম তরুণ-তরুণীদেরকে জিহাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ করছে যা- শুধু দক্ষিণ এশিয়ার জন্য নয়, সারা বিশ্বের জন্যই উদ্বেগের।”  

পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক আহমেদ হাসান ইমরানের মধ্যস্ততায় সারদা গ্রুপের অর্থ বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীসহ ধর্মীয় মৌলবাদী সংগঠনগুলোর কাছে এসেছে বলে গণমাধ্যমের খবরের কথা তুলে ধরেন তিনি।

ইমরান এক সময় ভারতের জামায়াতে ইসলামীর সহযোগী ছাত্র সংগঠন সিমির নেতা ছিলেন এবং বাংলাদেশের জামায়াত-প্রভাবিত নয়াদিগন্ত পত্রিকার ভারত প্রতিবেদক ছিলেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

এই প্রেক্ষাপটে জঙ্গিবাদ দমনে আন্তঃদেশীয় টাক্সফোর্স গঠনের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে শাহরিয়ার কবির কলেন, ২০০৯ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ধরনের একটি প্রস্তাব দিলেও পাকিস্তানের বিরোধিতার কারণে এর বাস্তবান সম্ভব হয়নি।

“বর্তমান পরিস্থিতির আলোকে প্রতিবেশী দেশের অংশগ্রহণে এ ধরনের টাস্কফোর্স গঠনের প্রয়োজনীয়তা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে।”

সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মুনতাসির মামুন বলেন, “আমাদের দেশে যখন জঙ্গিবাদকে প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছিল তখন প্রতিবেশী দেশ এ নিয়ে কোনো তৎপরতা দেখায়নি। এখন ভারত সরকারের উচিত জঙ্গিবাদ নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়া।

“পাকিস্তান আসতে না চাইলেও সরকারের উচিত ভারত ও নেপালকে নিয়ে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে যৌথ টাস্কফোর্স গঠন করা।”

প্রবীণ সাংবাদিক কামাল লোহনীর সভাপতিত্বে ধানমণ্ডির ডব্লিউভিএ অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।

এতে আরো বক্তব্য রাখেন ইনস্টিটিউট অব কনফ্লিক্ট, ল অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা মো. আব্দুর রশীদ।

জঙ্গিবাদের সমস্যা মোকাবেলায় সরকারের পাশাপাশি নাগরিক সমাজেরও আগিয়ে আসা প্রয়োজন বলে মত দেন তিনি।

সভায় মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস ও চেতনা ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে সরকারের বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।

তিনি বলেন, এসব পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে বদ্ধভূমি ও সম্মুখযুদ্ধের স্থানগুলোকে সংরক্ষণ করা। স্বাধীনতাবিরোধী ও রাজাকারদের অপকর্ম মানুষ যাতে ভুলে না যায়, সেজন্য সরকারি ভাবে ঘৃণাস্তম্ভ নির্মাণ।

পাশাপাশি যুদ্ধকালীন সময়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা মিত্রবাহিনীর স্মরণে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ। মুক্তিযোদ্ধাদের চূড়ান্ত তালিকা প্রস্তুত এবং প্রত্যেক মুক্তিযোদ্ধার কবরকে একই আকৃতি দেয়ার উদ্যোগ।

এছাড়া সরকারি কর্ম কমিশন বা বিসিএস পরীক্ষায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে ১০০ নম্বর রাখার পরিকল্পনার কথাও উল্লেখ করেন তিনি।

এর মধ্যে স্বাধীনতাপূর্ব ২৩ বছরের ইতিহাসের জন্য ৫০ নম্বর থাকবে এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে থাকবে বাকি ৫০ নম্বর।