চট্টগ্রামে যানজট নিয়ে গোলটেবিল বৈঠক

চট্টগ্রামের ক্রমবর্ধমান যানজট নিরসনে ফ্লাইওভার নির্মাণের পাশাপাশি মাস্টার প্ল্যানে সুপারিশকৃত বিকল্প রাস্তা নির্মাণ, উন্নত সড়ক ব্যবস্থাপনা ও সড়ক সম্প্রসারণের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন নগর বিশেষজ্ঞরা।

চট্টগ্রাম ব্যুরো বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Oct 2014, 04:14 PM
Updated : 16 Oct 2014, 04:14 PM
বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে ‘সড়ক ও যোগাযোগ ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে এই মতামত দেন তারা।

নগরীর মুরাদপুর এলাকা থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত ফ্লাইওভার নির্মাণ উপলক্ষে বিশেষজ্ঞ মতামত নিতে এই গোলটেবিলের আয়োজন করে চট্টগ্রাম উন্নয়ন সংস্থা (সিডিএ)।

গোল টেবিলে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন জেলা ও নগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, নগর বিশেষজ্ঞরা।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, “চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে শহরে আসার জন্য যে রাস্তাটার তার সবটুকু জায়গা গাড়ি চলাচলের জন্য ব্যবহার করা যাচ্ছে না রাস্তার উপর রিকশা, হকার ও যত্রতত্র বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠানো ইত্যাদি কারণে।

তিনি বিশেষজ্ঞ মতামতের সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেন, “এই গুরুত্বপূর্ণ সড়কের প্রশস্ততা যদিও ১২০ ফুট ডিভাইডার বাদ দিলে প্রতি অংশে থাকে ৫০ থেকে ৫৫ ফিট। তার উপর রাস্তায় হকার ও যত্রতত্র বাস থামার কারণে গাড়ির চলাচলের জন্য রাস্তা থাকে খুব কম।”

তিনি চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদ কার্যক্রমকে স্বাগত জানিয়ে মোশাররফ বলেন, “এর ফলে চট্টগ্রামের লক্ষ মানুষ উপকৃত হবে।”  

এসময় গণপূর্ত মন্ত্রী বিমানবন্দর থেকে চট্টগ্রাম শহরে দ্রুততম সময়ের মধ্যে আসার জন্য চীনের আর্থিক সহায়তায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের কথাও জানান।

খুব শিগগির মুরাদপুর থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজের উদ্বোধন হবে বলে গোলটেবিল বৈঠকে জানান তিনি।

বিশিষ্ট নগরবিদ প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া তার মতামত দিয়ে বলেন, “যানজটের জন্য ফ্লাইওভার কোন সমাধান না। যতক্ষণ পর্যন্ত গণপরিবহন ব্যবস্থার উন্নতি না হচ্ছে ততোক্ষণ পর্যন্ত এই সমস্যার সমাধান হবে না।

“যানজট নিরসনে ১৯৯৫ সালে প্রণীত মাস্টারপ্ল্যানের অধীন ডিটেইল এরিয়া প্ল্যানে করা ১৮ টি সুপারিশের মধ্যে সবগুলোই গুরুত্বারোপ করেছে ট্রাফিক ম্যানেজম্যান্টের ওপর।”

বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারের উপর করা সম্প্রতি একটি সার্ভের কথা উল্লেখ করে বিশিষ্ট নগরবিদ প্রকৌশলী আলী আশরাফ বলেন, “পিক আওয়ারে এই ফ্লাইওভার দিয়ে মাত্র ৩০৮ টি যান চলাচল করে। বাকি সব যানবাহন চলে নিচ দিয়ে।”

ফ্লাইওভার যানজটের কোন সমাধান না মন্তব্য করে তিনি বলেন, “দক্ষিণ কোরিয়ার সিউল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় এখন ফ্লাইওভার ভেঙ্গে তারা এখন টানেল বানাচ্ছে।

“বহ্দ্দারহাট থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত প্রস্তাবিত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সমস্যা হচ্ছে যদি এই একটি রাস্তার উপর বিমানবন্দর থেকে শহরে আসাটা নির্ভরশীল হয়ে যায় তাহলে যেকোন রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় এই রাস্তা বন্ধ হয়ে গেলে পুরো ট্রাফিক ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়বে।”

তবে ভবিষ্যতে যখন গাড়ির সংখ্যা বাড়বে তখন ফ্লাইওভারগুলো কাজে আসবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, “মুরাদপুর এমনিতে একটা জলাবদ্ধতাপ্রবণ এলাকা। ফ্লাইওভার নির্মাণের সময় জলাবদ্ধতার কারণে যাতে কোনও জনদুর্ভোগ না বাড়ে তার জন্য রাস্তাটা উঁচু করতে হবে আর পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নত করতে হবে।”

গোলটেবিলে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজম নাছির উদ্দিন, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল আলম চৌধুরী, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ প্রশাসক এমএ সালাম, জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আবদুল জলিল মন্ডল।