শহীদ মিনারে যাচ্ছে না পিয়াসের মরদেহ

বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিবাদের মুখে ‘বিতর্কিত’ টিভি আলোচক পিয়াস করিমের মরদেহ ‘শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য’ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেয়ার পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছে তার পরিবার।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Oct 2014, 08:39 AM
Updated : 16 Oct 2014, 07:50 PM

অবশ্য এ ব্যাপারে অনুমতি না দেওয়ার বিষয়টি বুধবারই বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

প্রয়াতের ভাই লোটাস করিম বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিসিশন আমরা জানি না। তবে আমরা পারিবারিকভাবে আর [পিয়াস করিমের মরদেহ শহীদ মিনারে নিতে] চাচ্ছি না।”

বিদ্যমান পরিস্থিতিতে পিয়াস করিমকে নিয়ে যাতে আর ‘আলোচনা-সমালোচনা বা অমর্যাদা’ না হয়, সে জন্যই পারিবারিকভাবে এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানান তিনি।

“উনাকে মর্যাদা দেওয়ার জন্যেই শহীদ মিনারে নেওয়ার কথা ভেবেছিলাম; কিন্তু মর্যাদা যদি ঠিকভাবে দেওয়া না হয়, সমস্যা- আফটার অল সুবিধার জন্যে আর নিতে চাচ্ছি না। উনার আত্মার মাগফেরাত কামনা করে কোরআন শরিফ পড়ে দাফন করতে চাচ্ছি।”

তিনি জানান শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে হাসপাতালের হিমঘর থেকে পিয়াসের মরদেহ ধানমন্ডির বাসায় আনা হবে। আত্মীয় স্বজন দেখার পর মরদেহ শ্রদ্ধা জানানোর জন্যে বেলা ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে রাখা হবে ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন প্রাঙ্গণে।

জুমার নামাজের পর বায়তুল মোকাররমে পিয়াস করিমের জানাজা শেষে বনানী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে বলে জানান তার ভাই।

শহীদ মিনারের ‘বিকল্প হিসাবে’ ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশনে মরদেহ নেওয়ার সিদ্ধান্ত কিনা জানতে চাইলে লোটাস বলেন, “বিকল্প হিসেবে ঠিক না; শহীদ মিনারটা কখনোই আমাদের পারিবারিকভাবে সিদ্ধান্ত ছিল না, উনার কিছু শুভাকাঙ্খীর অনুরোধে আবেদন করেছিলাম। এ নিয়ে এতো আলোচনা-সমালোচনা হবে বুঝতে পারিনি। পরে যখন দেখলাম এ নিয়ে এতো কথাবার্তা, তখন সরে আসলাম।”

এর আগে বৃহস্পতিবার বিকাল ৩ টায় নিজ কর্মস্থল ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে পিয়াস করিমের শোকসভার আয়োজন করা হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার রাতের মধ্যে বিদেশে অবস্থানরত স্বজনরা দেশে পৌঁছাবেন বলেই আশা করছেন লোটাস করিম।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পিয়াস করিম সোমবার মারা যান। তিনি টেলিভিশন অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবেই বেশি পরিচিত ছিলেন।

গণজাগরণ আন্দোলন এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তার বক্তব্য বিতর্কের সৃষ্টি করে। এজন্য গণজাগরণ আন্দোলনকারীরা ‘যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষের’ ব্যক্তি হিসেবে তার মরদেহ শহীদ মিনারে নেওয়ার বিরোধিতা করে।

পিয়াস করিমের লাশ বুধবার শহীদ মিনারে রাখার কথা বলা হলে সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটগুলোতে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে; বিভিন্ন ছাত্র ও সাংস্কৃতিক সংগঠন তা প্রতিরোধের ঘোষণা দেয়।

এরই মধ্যে মরদেহ শহীদ মিনারে রাখতে প্রয়াতের স্ত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আমেনা মহসীন স্বাক্ষরিত একটি আবেদন মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়।

পিয়াস করিমের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে শুক্রবার দিনব্যাপী শোক দিবসের কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি, যার মধ্যে সেদিন সকাল সাড়ে ১০টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পিয়াস করিমের প্রতি ‘শেষ শ্রদ্ধা’ জানানোর কথাও বলা হয়।

এদিকে গণজাগরণ মঞ্চসহ বিভিন্ন সংগঠন পিয়াস করিমের মরদেহ শহীদ মিনারে নেওয়া প্রতিহত করার ঘোষণা দেয়। তার কফিন শহীদ মিনারে নেওয়া ঠেকাতে সেখানে ‘পথচিত্র’ অঙ্কন করেন একদল চারুশিল্পী।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক আমজাদ আলী বুধবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড নামের একটি সংগঠন বৃহস্পতি ও শুক্রবার শহীদ মিনারে অনুষ্ঠান করার জন্য আগেই অনুমতি চেয়েছিল। কর্তৃপক্ষ তাদেরই অনুমতি দিয়েছে।

পিয়াস করিমের পরিবারের করা আবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রক্টর বলেন, “আমাদের অনুমোদন না নিয়েই তারা লাশ শহীদ মিনারে আনার কথা মিডিয়ায় জানিয়েছেন। এখানে অনুমোদন দেওয়ারও কিছু নেই, দায়-দায়িত্ব নেওয়ার কিছু নেই।"