পিয়াসের লাশ শহীদ মিনারে নিতে অনুমতি দেয়নি কর্তৃপক্ষ

বিতর্কিত টিভি আলোচক পিয়াস করিমের মরদেহ ‘শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য’ শুক্রবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাখার অনুমতি দেয়নি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Oct 2014, 08:52 AM
Updated : 15 Oct 2014, 06:42 PM

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক আমজাদ আলী বুধবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড নামের একটি সংগঠন বৃহস্পতি ও শুক্রবার শহীদ মিনারে অনুষ্ঠান করার জন্য আগেই অনুমতি চেয়েছিল। কর্তৃপক্ষ তাদেরই অনুমতি দিয়েছে।

পিয়াস করিমের পরিবারের করা আবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রক্টর বলেন, “আমাদের অনুমোদন না নিয়েই তারা লাশ শহীদ মিনারে আনার কথা মিডিয়ায় জানিয়েছেন। এখানে অনুমোদন দেওয়ারও কিছু নেই, দায়-দায়িত্ব নেওয়ার কিছু নেই।"

পিয়াসের ভাই লোটাস করিম অবশ্য জানিয়েছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলোর প্রতিবাদের মুখে ‘নিরাপত্তা না পেলে’ তারা শহীদ মিনারে কফিন নেওয়ার পরিকল্পনা বাদ দেবেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমাদের পরিকল্পনা হলো- শুক্রবার হাসপাতাল থেকে বের করে মরদেহ বাসায় নেওয়া হবে, শুভাকাঙ্ক্ষী ও আত্মীয়-স্বজনরা দেখবেন। এরপর বায়তুল মোকাররমে নিয়ে যাব, জানাজা শেষে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হবে।”

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পিয়াস করিম সোমবার মারা যান, যিনি টেলিভিশন অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবেই বেশি পরিচিত ছিলেন। গণজাগরণ আন্দোলন এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তার বক্তব্য বিতর্কের জন্ম দেয়।

এ কারণে পরিবারের পক্ষ থেকে পিয়াস করিমের লাশ বুধবার শহীদ মিনারে রাখার কথা বলা হলে সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটগুলোতে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে; বিভিন্ন ছাত্র ও সাংস্কৃতিক সংগঠন তা প্রতিরোধের ঘোষণা দেয়।

পরে পিয়াসের প্রবাসী স্বজনদের দেশে ফিরতে বিলম্বের কারণে দাফন পিছিয়ে গেলে পরিবারের পক্ষ থেকে নতুন করে আবেদন করা হয়।  

পিয়াস করিম (ফাইল ছবি)

পিয়াসের স্ত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আমেনা মহসীন স্বাক্ষরিত ওই আবেদন মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয় বলে লোটাস করিম জানান।

পিয়াস করিমের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে শুক্রবার দিনব্যাপী শোক দিবসের কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি। দলের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সেদিন সকাল সাড়ে ১০টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পিয়াস করিমের প্রতি ‘শেষ শ্রদ্ধা’ জানানোর বিষয়টিও রয়েছে।

এদিকে গণজাগরণ মঞ্চসহ বিভিন্ন সংগঠন ‘যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষের’ব্যক্তি হিসেবে পিয়াস করিমের মরদেহ শহীদ মিনারে নেওয়া প্রতিহত করার ঘোষণা দেয়। তার কফিন শহীদ মিনারে নেওয়া ঠেকাতে সেখানে ‘পথচিত্র’ অঙ্কন করেন একদল চারুশিল্পী।

শহীদ মিনারের উত্তর পাশের সিঁড়ির আগে তারা লিখে দেন- ‘কোন পাকি দালালের লাশ বইবে না পবিত্র শহীদ মিনার, লাশ নিয়ে যা পাকিস্তান।’ এছাড়া শহীদ মিনারে টানানো একটি ব্যানারে লেখা ছিল- ‘রাজাকার পুত্র পিয়াস করিমের লাশের ভার বইবে না শহীদ মিনার/ রুখে দাঁড়াও বাংলাদেশ’।

এই প্রেক্ষাপটে লোটাস করিম বুধবার সকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শহীদ মিনারের বিষয়ে আমরা যদি ওরকম নিরাপত্তা না পাই, আমরা নিয়ে যাব না। আমরা চাই না কোনো রকম অবমাননা হোক।”

অনুমতি না পেলেও পিয়াস করিমের লাশ শহীদ মিনারে নেওয়া হলে বা এ নিয়ে জটিলতা হলে কি করবেন জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক আমজাদ আলী বলেন, “যেহেতু আমাদের নিজস্ব ফোর্স নেই, তখন আমরা আইনশৃঙ্ক্ষলা বাহিনীকে জানাব। তারা তাদের মতো ব্যবস্থা নেবে।”

মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের সভাপতি মেহেদী হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে জানান, বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তাদের পথ নাটক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান রয়েছে। আর শুক্রবার রয়েছে সমাবেশ।

“আমরা অনুষ্ঠানের অনুমতি পেয়েছি। সরকার বীরাঙ্গনাদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ায় ধন্যবাদ জানিয়ে এবং শহীদ মিনারের পবিত্রতা রক্ষায় আমাদের এই আয়োজন।”

অনড় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ

পিয়াস করিমের মরদেহ ‘শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য’ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আনা হলে তা প্রতিরোধের ঘোষণায় অনড় রয়েছে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ।

বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনে আগামী শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে শহীদ মিনারে অবস্থানের কথা জানায় সরকার সমর্থক ছাত্র সংগঠনগুলোর এই জোট।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জাসদ ছাত্রলীগের সভাপতি সামছুল ইসলাম সুমন বলেন, “তথাকথিত বুদ্ধিজীবী পিয়াস করিমের মুত্যুর পর স্বাধীনতাবিরোধী একটি চক্র হঠাৎ করে তার মরদেহ শহীদ মিনারে আনার জন্য উঠে-পড়ে লেগেছে।

“তার বাবা এম এ করিম ছিলেন স্বাধীনতাবিরোধীদের নেতা। তিনি নিজেও স্বাধীনতাবিরোধীদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে পাকিস্তানের দালালি করেছেন।”

সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম, ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি বাপ্পাদিত্য বসু, সাধারণ সম্পাদক তানভির রুসমত, বাংলাদেশ ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি মঞ্জুর রহমান মিঠু, বাসদ ছাত্রলীগের সভাপতি মনিরুজ্জামান জুয়েল উপস্থিত ছিলেন।