বর্ধমান বিস্ফোরণে ‘জেএমবিযোগ’, সীমান্তে সতর্কতা

পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানে একটি বাড়িতে বিস্ফোরণের ঘটনায় বাংলাদেশি জঙ্গি সংগঠনের সংশ্লিষ্টতার কথা ওঠার পর সীমান্তে সতর্কতা জারি করেছে ভারত।

>> আইএএনএস ওবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Oct 2014, 07:29 PM
Updated : 7 Oct 2014, 06:26 PM

সোমবার কলকাতায় পুলিশের মহাপরিচালক জিএমপি রেড্ডি ও বিশেষ মহাপরিদর্শক (সিআইডি) দময়ন্তী সেনের উপস্থিতিতে এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়।

বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে রেড্ডি বলেন, “নাশকতার যে কোনো ধরনের চেষ্টার বিষয়ে সব থানাকে সতর্ক করা হচ্ছে।”

গত ২ অক্টোবর বর্ধমানের খাগড়াগড়ে ওই বিস্ফোরণের ঘটনায় দুইজন নিহত হন, যারা নিষিদ্ধ সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) একটি শাখার সদস্য বলে ভারতীয় গোয়েন্দোদের সন্দেহ।

বর্ধমান, হাওড়া ও শিয়ালদা স্টেশনকেও সতর্কতার আওতায় আনা হয়েছে বলে ভারতের পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের মহা ব্যবস্থাপক আর কে গুপ্ত জানান, যিনি নিজেও ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

সদ্য শেষ হওয়া দুর্গা পূজাকে ঘিরে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী আগে থেকেই সীমান্তে বাড়তি সতর্কতা বজায় রেখেছে।

বিএসএফের এক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা আগে থেকেই উচ্চ সতর্কতায় আছি।”

পশ্চিমবঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ ছাড়াও নেপাল ও ভুটানের সীমান্ত রয়েছে। ভারতের এ রাজ্যের সীমান্ত ঘেঁষে রয়েছে আসাম, সিকিম, বিহার, ঝাড়খণ্ড ও ওড়িশা রাজ্য।

বিস্ফোরণের ওই ঘটনায় এ পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে ভারতীয় পুলিশ। ভারতীয় জনতা পার্টি ও ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী) ইতোমধ্যে ওই ঘটনার তদন্ত দেশটির ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সিকে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে।

সোমবার টেলিগ্রাফের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্ধমানের যে বাড়িতে বোমা বানানোর সময় বিস্ফোরণ ঘটে সেখানে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের একটি কার্যালয় ছিল।

ওই ঘটনায় শামীম ওরফে শাকিল আহমেদ এবং স্বপন ওরফে সুবহান মণ্ডল নামে দুই ব্যক্তি নিহত হন যারা বাংলাদেশের জেএমবির একটি শাখার সদস্য বলে ভারতীয় গোয়েন্দারা মনে করছেন।

আনন্দবাজারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, শাকিলের বাড়ি নদিয়ার করিমপুরের বারবাজপুরে, সুবহানের বাড়ি পূর্ব মেদিনীপুরে ও আব্দুলের বীরভূমের মহম্মদবাজারে।

ঘটনার দিনই শাকিলের স্ত্রী গুলশনা বিবি ওরফে রাজিয়া বিবি এবং হাকিমের স্ত্রী আমিনা বিবিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বিস্ফোরণে নিহত স্বপন মণ্ডলের স্ত্রী আকিনাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ।

ঘটনাস্থলে ২৫টি গ্রেনেড, ১০টি হাতবোমা এবং অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট, আইরন অক্সাইড, হাইড্রোজেন পার অক্সাইডসহ প্রচুর পরিমাণ বিস্ফোরক তৈরির উপাদান পাওয়া গেছে ভারতীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে।

ভারতীয় কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিস্ফোরণের পর গ্রেপ্তার দুই নারীর একজন নিরাপত্তা বাহিনীকে জানিয়েছেন, তারা গত তিন মাসে চার দফায় ‘কাউসার’ ও ‘রাসিক’ নামে দুই বাহকের মাধ্যমে বাংলাদেশে বোমা পাঠিয়েছেন। ওই দিনও বাংলাদেশে পাঠানোর জন্য বোমা বানাতে গিয়েই বিস্ফোরণ ঘটে।

ভারতীয় শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তারা এ বিষয়ে বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) ও ডিজিএফআইকে অবহিত করেছেন বলে হিন্দুস্তান টাইমসের এ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

ভারতীয় কর্মকর্তারা জানান, ওই ঘটনায় গ্রেপ্তার আব্দুল হাকিম নামে একজন বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তবে জিজ্ঞাসাবাদে মুখ খোলেননি তিনি।

যে ভবনে ওই বিস্ফোরণ ঘটেছে তার মালিক হাসান চৌধুরী এবং আমিনাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছে তারা। আমিনার বাবা মুর্শিদাবাদের একটি গ্রাম পঞ্চায়েতের নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে লড়েছেন। তাছাড়া ওই ভবনে তৃণমূল কংগ্রেসের একটি অফিসও রয়েছে।

মমতা বন্দোপ্যাধ্যায় নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে গত ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে সহিংসতা সৃষ্টিকারী জামায়াতের নেতাদের আশ্রয় প্রশয় দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

এমনকি তৃণমূল থেকে নির্বাচিত এমপিদের বিরুদ্ধেও জামায়াত ও উগ্র ইসলামপন্থি নেতাদের সহযোগিতার অভিযোগ রয়েছে।