পালিয়ে বিয়ে ঠেকাতে আইন শিথিল!

আইনসিদ্ধ বয়স হওয়ার আগেই ঘর ছেড়ে পালিয়ে বিয়ের প্রবণতার কারণে মেয়েদের বিয়ের বয়স দুই বছর কমানোর বিষয়টি সামনে এসেছে বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Oct 2014, 10:46 AM
Updated : 2 Oct 2014, 02:35 PM

বৃহস্পতিবার রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “এ বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আমরা আলোচনা করছি। বিয়ের বয়স কমাতে গ্রামাঞ্চল থেকে প্রধানমন্ত্রী চাপে আছেন।”

বর্তমান আইনে বাংলাদেশে মেয়েরা বিয়ের যোগ্য হয় ১৮ বছর বয়সে, জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদ অনুযায়ী ওই বয়সেই শৈশব শেষ হয়।

সম্প্রতি লন্ডনে কন্যাশিশু সম্মেলনে যোগ দিয়ে বাল্যবিয়ের হার কমিয়ে আনার বিষয়ে নিজের অঙ্গীকারের কথা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বাংলাদেশে বিয়ের বয়স পরিবর্তনের অর্থ দাঁড়াবে এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা সরে আসা।

বাল্যবিয়ের হারের দিক দিয়ে ভারতীয় উপমহাদেশে বাংলাদেশে রয়েছে সামনের  কাতারে, যা মাতৃমৃত্যুর হার বৃদ্ধিরও অন্যতম কারণ।

সম্প্রতি বাল্যবিয়ে বন্ধের জন্য দুই বছর কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রেখে নতুন আইন করার প্রস্তাবে সায় দিয়েছে সরকার।

তবে ওই প্রস্তাবে অনুমোদনের সময় সামাজিক বাস্তবতার নিরিখে বিয়ের বয়স কমানো যায় কি না- তা পর্যালোচনা করতে বলেছে মন্ত্রিসভা।

গ্রীষ্মপ্রধান দেশগুলোতে ছেলেমেয়েরা কম বয়সে বয়োপ্রাপ্ত হয়- এই বাস্তবতা বিবেচনা করে আইন মন্ত্রণালয়কে প্রস্তাবটি পর্যালোচনা করতে বলা হয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি খাত উন্নয়নে চলমান এইচপিএনএসডিপি কর্মসূচি নিয়েও আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন প্রতিমন্ত্রী। বিভিন্ন দাতা সংস্থা এবং এনজিওর প্রতিনিধিরাও এতে অংশ নেন।

জাহিদ মালেক বলেন, কন্যা শিশুদের শিক্ষা ও ক্ষমতায়নে জোর দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে ‘ঘর ছেড়ে পালানোর’ প্রবণতা বন্ধ করতেই মেয়েদের বিয়ের আইনসিদ্ধ বয়স কমিয়ে আনার বিষয়টি আলোচনায় এসেছে।

ফাইল ছবি

তবে সুশীল সমাজসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যে বিস্মিত সেভ দ্য চিলড্রেনের কর্মকর্তা ড. ইশতিয়াক মান্নান বলেন, মেয়েদের বিয়ের বয়স কমালে তা হবে ‘খুবই ভুল’ পদক্ষেপ।

তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “‘এটা নিয়ে যদি শুধু আলোচনাও হয় তবুও দেশে ও বিশ্বজুড়ে ভুল বার্তা যাবে।”

ইশতিয়াক মান্নানের মতে, বাল্য বিয়েতে স্বাস্থ্য সমস্যা ছাড়াও ‘বড় ধরনের সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা’ তৈরি হয়।

“কম বয়সে বিয়ে হলে ছেলে-মেয়েরা মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকবে না। ফলে এতে পরিবারে অসন্তোষ তৈরি হয়ে সহিংসতা ও নানা ধরনের সমস্যা তৈরি করবে।

“এটা কীভাবে আলোচনার টেবিলে আসে তা ভেবেই আমি বিস্মিত হই। মাতৃমৃত্যু ও প্রতিবন্ধীতার ক্ষেত্রে বাল্যবিয়ের ভূমিকা রয়েছে। এ ধরনের বিয়েতে অনেক ক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়ের আগেই সন্তান হয় এবং সারাজীবন অপুষ্টিতে ভোগে।”

স্বাস্থ্য সচিব মো. নিয়াজ উদ্দিন মিয়া অনুষ্ঠানে বলেন, মেয়েদের বিয়ের বয়স কমানোর প্রস্তাবটি তাদের নয়, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের।

“এটা আমাদেরও চিন্তার বিষয়। বিষয়টি নিয়ে আমাদেরও চিন্তা করতে হবে। স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ, উন্নয়ন অংশীদারদের সঙ্গে আমাদের বসতে হবে। মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৬ না ১৮ থাকা উচিত সে বিষয়ে সুপারিশ পাঠাতে হবে।”