সংবাদ সম্মেলনে আসছেন প্রধানমন্ত্রী

আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর মন্তব্য নিয়ে তোলপাড়ের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র সফরের অভিজ্ঞতা জানাতে সংবাদ সম্মেলনে আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।   

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Oct 2014, 06:07 AM
Updated : 2 Oct 2014, 06:38 PM

শুক্রবার বিকাল ৪টায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হবেন।

প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং থেকে বলা হয়েছে, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৬৯তম অধিবেশনে যোগ দিতে শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক যুক্তরাষ্ট্র সফর নিয়েই এ সংবাদ সম্মেলন।

তবে স্বাভাবিকভাবেই এ সংবাদ সম্মেলনে আগ্রহের কেন্দ্রে থাকবে লতিফ সিদ্দিকী প্রসঙ্গ। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রীর দায়িত্ব চালিয়ে আসা এই জ্যেষ্ঠ আওয়ামী লীগ নেতার বিষয়ে সরকারের ভাষ্য সাংবাদিকরা সরকারপ্রধানের মুখ থেকেই শুনতে চাইবেন। 

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৬৯তম অধিবেশনে যোগ দিতে গত ২২ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছান শেখ হাসিনা। সফর শেষে লন্ডন হয়ে তিনি দেশে পৌঁছান বৃহস্পতিবার সকালে।

১০ দিনের এই সফরে সাধারণ পরিষদে ভাষণ দেয়ার পাশাপাশি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে প্রথম বৈঠক হয় শেখ হাসিনার। এছাড়া বেলারুশের প্রধানমন্ত্রী মিখাইল মিয়াসনিকোভিচ, নেপালের প্রধানমন্ত্রী সুশীল কৈরালার সঙ্গেও দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।

এরই মধ্যে তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক বিশ্ব সম্মেলনে সরকারের পক্ষ থেকে ‘গ্লোবাল আইসিটি এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড’ পুরস্কার নেয়ার জন্য মেক্সিকো যাওয়ার পথে নিউ ইয়র্কে যান তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী। গত ২৮ সেপ্টেম্বর সেখানে প্রবাসীদের এক অনুষ্ঠানে তিনি হজ এবং প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে নিয়ে মন্তব্য করলে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা।  

নিউ ইয়র্কে স্থানীয় টাঙ্গাইল সমিতির এক অনুষ্ঠানে লতিফ বলেন, “আমি কিন্তু হজ আর তাবলিগ জামাতের ঘোরতর বিরোধী। আমি জামায়াতে ইসলামীরও বিরোধী।”

তার বক্তব্যের ভিডিও ক্লিপ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।

ওই ভিডিওতে তাকে বলতে দেখা যায়, “এ হজে যে কত ম্যানপাওয়ার (জনশক্তি) নষ্ট হয়। এই হজের জন্য ২০ লাখ লোক আজ সৌদি আরবে গেছেন। এদের কোনো কাজ নাই। কোনো প্রডাকশন নাই, শুধু ডিডাকশন দিচ্ছে। শুধু খাচ্ছে আর দেশের টাকা বিদেশে দিয়ে আসছে।”

অনুষ্ঠান তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে ও তার তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, “কথায় কথায় আপনারা জয়কে টানেন কেন। ‘জয় ভাই’ কে?

“জয় বাংলাদেশ সরকারের কেউ নয়। তিনি কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ারও কেউ নন।”

হজ নিয়ে লতিফের বক্তব্যের প্রতিবাদে তার অপসারণ ও গ্রেপ্তারের দাবিতে পূজা-ঈদের পর কর্মসূচির হুমকি দিয়েছে বিএনপি। তাকে ১৫ অক্টোবরের মধ্যে গ্রেপ্তার করা না হলে ২৬ অক্টোবর হরতালের ঘোষণা দিয়েছে ‘সম্মিলিত ইসলামী দলসমূহ’ নামে একটি জোট।

মঙ্গল ও বুধবার দিনভর গুঞ্জন চলার পর বুধবার ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফ বলেন, “বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এ ধরনের বক্তব্যকে কখনো সমর্থন করে না। এই বক্তব্যের কারণে প্রধানমন্ত্রী তাকে মন্ত্রিসভা থেকে তাৎক্ষণিক অব্যাহতি দিয়েছেন।”

আওয়ামী লীগ নেতা হানিফ প্রধানমন্ত্রীর ওই সিদ্ধান্তের কথা সাংবাদিকদের জানালেও এ বিষয়ে সরকারের আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা এখনো আসেনি।

এরইমধ্যে ঢাকা ফেরার পথে বৃহস্পতিবার সকালে সিলেটে এক ঘণ্টার যাত্রাবিরতি করেন প্রধানমন্ত্রী। বিমানবন্দরে কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে তিনি বৈঠকও করেন।

ওই বৈঠকের পর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ সাংবাদিকদের বলেন, “হজ নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্যের জন্য লন্ডনে অবস্থানকালেই লতিফ সিদ্দিকীকে মন্ত্রিসভা থেকে অব্যাহতির নির্দেশ দিয়েছেন বলে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন। এখন দল থেকেও তাকে অব্যাহতি দেয়া হবে।”

সমালোচনার মধ্যে থাকা আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লতিফ সিদ্দিকী মঙ্গলবার বিবিসি বাংলাকে বলেন, তিনি কোনো ধরনের চাপের মুখে পদত্যাগ করবেন না। তবে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী সব কাজ করবেন।

লতিফ সিদ্দিকীর বিষয়ে সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে শেখ হাসিনার ৫১ সদস্যের মন্ত্রিসভা থেকে নয় মাসের মধ্যে এই প্রথম কেউ বাদ পড়লেন। সেক্ষেত্রে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে কে আসছেন- তা নিয়েও শুরু হয়েছে গুঞ্জন।

ঢাকায় শাহজালাল বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে উপস্থিত তিনজনের মধ্যে সাহারা খাতুন থাকায় সেই গুঞ্জন আরো জোর পায়। শেখ হাসিনার গত সরকারে সাহারাই ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব ছিলেন।