মাদকবিরোধী সভায় তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী

মাদক ও মানবপাচার বিরোধী এক মতবিনিময় সভায় অংশ নিয়ে সরকারের করা ইয়াবা ব্যবসায়ীদের তালিকার সমালোচনা করলেন খোদ সেই তালিকায় থাকা কয়েকজন।

কক্সবাজার প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Oct 2014, 04:02 PM
Updated : 2 Oct 2014, 11:18 AM

বুধবার বিকালে জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে ওই সভার প্রধান অতিথি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ  সচিব  মো. মোজাম্মেল হক খানের উপস্থিতিতে সরকারদলীয় এক নেতা ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত এক শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ীর পক্ষে সাফাইও গেয়েছেন।   

সভায় উখিয়া-টেকনাফের সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি, খোরশেদ আরা হক, জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আহমদ হোসেন, কক্সবাজার পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মুজিবুর রহমান, টেকনাফ উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহমদ অংশ নেন।

এদের মধ্যে সরকারদলীয় সাংসদ বদির বিরুদ্ধে আত্মীয়-স্বজন নিয়ে ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।

আর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ১২শর বেশি সদস্যের ‘ইয়াবা সিন্ডিকেট’ এর যে তালিকা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযানে নেমেছে তাতে নাম রয়েছে টেকনাফ উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহমেদের।

সভায় আওয়ামী লীগ নেতা আহমদ হোসেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত জাহেদ হোসেন জাকুকে ‘নিরীহ’ বলে দাবি করেন।

এ বছরের ৪ মে র‌্যাব ও বিজিবির সঙ্গে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন টেকনাফ থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি জাকু, যার নামও রয়েছে সরকারের তালিকায়।

আহমদ হোসেন বলেন, “জাকু ও ফরিদ বন্দুকযুদ্ধে নিহত হলেও তার প্রকৃত অর্থে ইয়াবা ব্যবসায়ী নন। তাদের ঘটনাটি তদন্ত এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকা যাচাই-বাছাই করতে হবে।”

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাকে ‘হয়রানিমূলক’ আখ্যায়িত করে তালিকাভুক্ত জাফর আহমেদ বলেন, “স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণায়ের তালিকায় অধিকাংশই নিরীহ। তালিকাটি কেবল ব্যক্তিবিশেষকে হয়রানির উদ্দেশ্যে করা হয়েছে।”

হয়রানি করতেই তাকে এবং সাংসদ আবদুর রহমান বদিকে তালিকায় রাখা হয়েছে বলে দাবি করেন জাফর।

তালিকায় নিজের নাম থাকার বিষয়ে সংসদ সদস্য বদি বলেন, “ইয়াবা ব্যবসায়ীদের টাকাতেই তৈরি হয় তালিকা। আর ওই টাকার জোরে জনপ্রতিনিধিদের নাম সেই তালিকায় লেখা হয়।”

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাটি যাচাইয়ের জন্য নতুন করে কমিটি গঠনের দাবি জানান এ বছর সর্বোচ্চ করদাতার সম্মাননা পাওয়া এই সাংসদ।

তবে যত বড় গডফাদার হোক না কেন তাকে অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে বলে সভায় বলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মোজাম্মেল হক খান।

তিনি বলেন, “মাদক ও মানবপাচারের কারণে সমাজে অঘটন ঘটছে। এর বিরোধী সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।

“এই অপকর্মে যত বড় গডফাদার জড়িত থাকুক, একদিন তাদের আইনের হাতে ধরা পড়তে হবে। তাকে রক্ষার কোনো উপায় নেই।”

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. রুহুল আমিনের সভাপতিত্বে সভায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ন সচিব ছিদ্দিক উল্লাহ ভূইয়া, শেখ আবদুল আহাদ, পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মোশারফ হোসেন, কোস্ট গার্ডের কমান্ডার শহিদুল ইসলাম, পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার নাথ, বিজিবি ১৭ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল খন্দকার সাইফুল ইসলাম, ৪২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবুজার আল জাহিদসহ প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।