‘জাতিসত্ত্বার কবি’ নূরুল হুদার জন্মবার্ষিকী উদযাপন

বাংলাদেশে সমকালীন বাংলা কবিতার পথ চলা যাদের হাত ধরে, তাদের অন্যতম কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। দেশের কবিকূলের কাছে ‘জাতিসত্ত্বার কবি’ নামেই পরিচিত এ চিরতরুণ কবির ৬৫ বছরে পা দিলেন মঙ্গলবার।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Sept 2014, 06:32 PM
Updated : 30 Sept 2014, 06:44 PM

শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে এক কবিতা পাঠ ও আনন্দ আয়োজনের মধ্যে দিয়ে উপলক্ষটি জাতীয় পর্যায়ে উদযাপন করলেন কবির সুহৃদ ও শুভাকাঙ্খী দেশের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বরেণ্য জনেরা।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই কবিকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা। এরপর মূল অনুষ্ঠানটির উদ্বোধন ঘোষণা করেন অধ্যাপক হারুনুর রশীদ।

এরপর নূরুল হুদার নতুন কবিতার বই ‘ছায়া লিখি’, কবি কামরুল ইসলামের নতুন বই ‘মা ও মনপাখি’ এবং কবির জন্মবার্ষিকীর স্মারকগ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।

মোড়ক উন্মোচনের পরে নিজের বই থেকে পড়ে শোনান কবি। তিনি স্বরচিত একটি কবিতাও আবৃত্তি করেন, “মানুষেরা ভুলে গেছে, মানুষের ভাষা/ মানুষ নকল করে নেকড়ের স্বর/….

কবিকে শুভেচ্ছা জানিয়ে, স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য রাখেন তার সমসাময়িক ও তরুণ কবি-সাহিত্যিক, প্রকাশকরা।

প্রধান অতিথি সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর কবির সঙ্গে বন্ধুত্বের কথা স্মরণ করে বলেন, “আজকে আমাদের বন্ধু করি নূরুল হুদার ৬৫তম জন্মদিন। এখানে এসে আমার মনে হল আমার ৬৫ তো করা হল না, আগেই ছেড়ে এসেছি।৭০-এ গিয়ে একসঙ্গে করার চেষ্টা করব।”

রাজনীতিতে নাম লেখানোর আগে অভিনেতা হিসেবে খ্যাতিমান আসাদুজ্জামান নূর বলেন, “আমার বিদ্যা হল পরজীবী বিদ্যা। নাট্যকার লিখেন, আমি মুখস্থ করে ঝেড়ে দেই। কোনো মৌলিক সৃষ্টিশীলতা আমার মধ্যে নেই। তবে আমি কবিতা পড়ি।

“কবি নূরুল হুদা হলেন একজন আগ্রাসী কবি, সর্বগ্রাসী কবি। এই মাটি এবং পৃথিবীর এমন কোনো বিষয় নেই, যা তিনি গ্রাস করেননি। আমি কবিতা পড়ি, লিখতে পারি না। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমি তার কবিতা পড়েছি। পড়ে আমার তা-ই মনে হয়েছে। কবি নুরুল হুদা তার যাত্রা শুরু করেছেন মাটি কামড়ে, মাটি থেকেই কখনো আকাশে উঠেছেন, কখনো স্বপ্ন দেখেছেন, কিন্তু আবারো মাটিতেই ফিরে এসেছেন।”

অনুষ্ঠানে কবি নূরুল হুদাকে শুভেচ্ছা জানান সাংসদ কবি কাজী রোজী, আজিজুর রহমান আজিজ, মতিন বৈরাগী, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব রণজিৎ বিশ্বাসসহ আরো অনেকে।

প্রত্যেকেই কবি নূরুল হুদার প্রতিটি কবিতায় একইসঙ্গে সৃষ্টি ও ধ্বংসের বহুমাত্রিক সহাবস্থানের কথা তুলে ধরেন নিজ বক্তব্যে। তাদের স্মৃতিচারণে উঠে আসে বন্ধুত্বের বিভিন্ন পর্যায়ের নানা স্মৃতি।

নূরুল হুদার কবিতা লেখা, কবিতা লেখা ছেড়ে দেয়া, হোমিওপ্যাথি চর্চা, আবার কবিতা লেখায় ফিরে আসা- সব কথাই ঘুরে ফিরে আসে সুহদদের স্মৃতিচারণে।

অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন কবি আতা সরকার,ছায়ানটের ট্রাস্টি মফিদুল হক, কবি হাসান হাফিজ, ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুল মান্নান, জাতীয় জাদুঘরের ট্রাস্টি কবি আজিজুর রহমান আজিজ,ভাষাবিজ্ঞানী ড. সিরাজুল হক খান, অন্যপ্রকাশের কর্ণধার মাজহারুল ইসলাম, রেডন পাবলিকেশন্সের কর্ণধার সৈয়দ জাকির হোসাইনসহ আরো অনেকে।

অনুজ কবি মোহাম্মদ সাদেক বলেন, “অনেক কবি খালি কবিতা লেখেন, অনেক কবি আরো কবি তৈরি করেন। কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা কবি তৈরি করেন, সেটা আমরা যারা তার অনুজ কবি তারা জানি।”

স্মৃতিচারণে অনেকেই স্মরণ করেন কবির সেই কবিতা, “যতোদূর বাংলা ভাষা, ততোদূর বাংলাদেশ/ দরিয়ানগরে জন্ম, পৃথিবীর সর্বপ্রান্ত আমার স্বদেশ…..”। ১৯৮১ সালে ‘আমরা তামাটে জাতি’ বইয়ে লিখেছিলেন এ পংক্তিগুলো।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি এবং উদযাপন পর্ষদের আহ্বায়ক হাবিবুল্লাহ সিরাজী। শুভেচ্ছা জ্ঞাপন বক্তব্যের শেষ হলে কবিতাপাঠের আসর, কেক কাটা ও চা-পর্বের মধ্যে দিয়ে শেষ হয় আয়োজনটি।