‘সিরিয়ায় ছিলেন হামদান, ঢাকায় আসেন মুজাহিদ সংগ্রহে’

মধ্যপ্রাচ্যের জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে আটক ব্রিটিশ নাগরিক সামিউন রহমান ওরফে ইবনে হামদান ‘মুজাহিদ’ সংগ্রহে ঢাকায় অবস্থান করছিলেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Sept 2014, 12:09 PM
Updated : 31 Oct 2014, 10:49 AM

সোমবার ভোররাতে রাজধানীর কমলাপুর থেকে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই ব্রিটিশ নাগরিককে আটক করা হয়। পরে আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে তিন দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ।

গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, গত বুধবার জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে গ্রেপ্তার মো. আসিফ আদনান ওরফে জুলকারনাইন ও মো. ফজলে এলাহী তানজিলের কাছ থেকে হামদানের খোঁজ পান তারা।

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র আদনান সাবেক এক বিচারপতির ছেলে। আর তানজিলের বাবা সাবেক যুগ্ম সচিব।

মনিরুল ইসলাম বলেন, “প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হামদান স্বীকার করেছে, আইএস ও নুসরা ব্রিগেডের জন্য মুজাহিদ সংগ্রহ করতে সে বাংলাদেশে অবস্থান করছিল।”

পুলিশের দাবি, গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত হামদান সিরিয়ায় নুসরা ব্রিগেডের জন্য কাজ করেন। এতে অংশ নিতে এক বন্ধুকে নিয়ে ব্রিটেন থেকে তুরস্ক হয়ে সিরিয়া যান তিনি। ‘জিহাদে’ অংশ নিতে ইচ্ছুক এমন ‘কর্মী’ সংগ্রহের জন্য তিনি মরক্কোও সফর করেন।

সিরিয়ায় প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ বিরোধী সশস্ত্র লড়াইয়ে থাকা জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে অন্যতম ইসলামিক স্টেট (আইএস) ও নুসরা ফ্রন্ট। আইএস সম্প্রতি সিরিয়া ও ইরাক সীমান্তবর্তী বিশাল এলাকা দখলে নিয়ে সেখানে খেলাফত প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়। আর ইসলামী আইন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে থাকা আল-নুসরা ফ্রন্টের সঙ্গে আল-কায়েদার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর খবর।

মনিরুল ইসলাম বলেন, আল-কায়েদার নেতা আয়মান আল জাওয়াহিরি সম্প্রতি এক ভিডিওবার্তায় সংগঠনের ভারতীয় শাখা গঠনের ঘোষণা দেয়ার পর তার প্রতি আকৃষ্ট হন আদনান ও তানজিল।

“রিমান্ডে তারা ‘আল-কায়েদা ইন ইন্ডিয়ান সাব কনটিনেন্ট-(একিউইউআই)’ এর কার্যক্রম সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেয়। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতেই হামদানকে গ্রেপ্তার করা হয়। সে চেয়েছিল বাংলাদেশ থেকে জিহাদি দল তৈরি করে একিউইউআই’র আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক স্থাপন করতে।

“এদেশে তারা রক্তপাত ঘটিয়ে ইসলামী শাসন কায়েমের জন্য নাশকতা চালাতে চেয়েছিল। তাদের কিছু মেসেজ পুলিশ সংগ্রহ করেছে।”

পিস টিভির এক উপস্থাপকের ফেইসবুক ফ্যান পেইজের সূত্র ধরে বাংলাদেশ থেকে সিরিয়ায় ‘জিহাদে’ অংশগ্রহণে ইচ্ছুকদের সঙ্গে হামদান যোগাযোগ করেন বলে জানান তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর তথ্য অনুযায়ী, ইরাক ও সিরিয়ায় ৩১ হাজার ‘যোদ্ধা’ নিয়ে  লড়াই চালাচ্ছে আইএস।

আইএসের এই ‘যোদ্ধাদের’ মধ্যে বিশ্বের অন্তত ৮০টির বেশি দেশের ১৫ হাজারের বেশি নাগরিক রয়েছেন বলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা জানিয়েছেন।

আইএস জঙ্গিদের হয়ে তিন হাজারেরও বেশি ইউরোপীয় লড়ছে বলে সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সন্ত্রাস দমন বিভাগের প্রধান জিল ড্য কারচভ জানিয়েছেন।

তিনি বিবিসিকে বলেছেন,  আইএস এর দখল অভিযানে যাওয়া ইউরোপীয়র সংখ্যা তিন হাজারেরও বেশি। এদের কেউ ফিরে এসেছে, আবার কেউ যুদ্ধক্ষেত্রে নিহত হয়েছে।

এ প্রেক্ষাপটে আইএস ও অন্যান্য জঙ্গি গোষ্ঠীতে নাগরিকদের যোগ দেয়া ঠেকাতে জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোকে ব্যবস্থা নেয়ার তাগাদা দিয়ে গত বুধবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে একটি প্রস্তাব পাশ হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের উত্থাপিত ওই প্রস্তাবে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী যোদ্ধা’ ঠেকাতে জঙ্গি গোষ্ঠীর সদস্য সংগ্রহ, সংগঠিত হওয়া, যাতায়াত, অস্ত্র সংগ্রহ ও অর্থ সংগ্রহ বন্ধে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।

৩ দিনের রিমান্ড

বিকালে হামদানকে মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে ১০ দিনের হেফাজতে চান গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক আসলামুল হক।

শুনানি শেষে মহানগর হাকিম আসাদুজ্জামান নূর তার তিন দিনের হেফাজত মঞ্জুর করেন।

শুনানিতে আসামিপক্ষে কোনো আইনজীবী দাঁড়াননি।

আদালতে উপস্থিত সাংবাদিকদের হামদান বলেন, “পাঁচদিন আগে আমাকে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অথচ বলা হচ্ছে কালকে আটক করা হয়েছে।”