যেটা সত্যি সেটাই বলেছি: র‌্যাবের ডিজি

নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর সাত খুনের ঘটনায় র‌্যাব সদস্যদের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে প্রশাসনিক তদন্ত কমিটিকে তথ্য দিয়েছেন এই বাহিনীর মহাপরিচালক মোখলেছুর রহমান।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Sept 2014, 09:13 AM
Updated : 29 Sept 2014, 05:55 PM

সোমবার বেলা আড়াইটা থেকে বিকাল ৪টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত সচিবালয়ে তদন্ত কমিটির প্রধান শাহজাহান আলী মোল্লার কক্ষে র‌্যাব প্রধানকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বেরিয়ে এসে মোখলেছুর সাংবাদিকদের বলেন, “বাহিনীর প্রধান হিসাবে আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করাই বাঞ্ছনীয়। তারা যা যা জানতে চেয়েছেন সব কিছুই বলেছি।যেটা সত্যি সেটাই বলেছি।”

কোন কোন বিষয়ে কথা বলেছেন- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে র‌্যাব মহাপরিচালক বলেন, “যেহেতু কমিটি জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সেহেতু সব বিষয়ই গুরুত্বপূর্ণ, সব বিষয়েই বলেছি।”

তার দাবি, “র‌্যাবের স্বচ্ছতা আছে। র‌্যাব যেটা সত্য সেটাই করে। র‌্যাব আইন, ন্যায় ও সত্যের পথে সব সময় থাকে- এটা আমি বলেছি।”

এর আগে র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জিয়াউল আহসানকেও জিজ্ঞাসাবাদ করে এই কমিটি।

র‌্যাব প্রধানকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে শাহজাহান আলী বলেন, “এই হত্যা মামলায় র‌্যাব সদস্যরা আসামি, তাদের কয়েকজন গ্রেপ্তারও আছেন। তাই সংস্থার প্রধান হিসাবে তিনি (মোখলেছুর) কতোটুকু জানেন সে বিষয়ে আমরা কথা বলেছি।”

ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে- সে বিষয়ে র‌্যাব মহাপরিচালকের ‘পরামর্শ’ নেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

তদন্ত কমিটির প্রধান বলেন, “এই হত্যার ঘটনা নিয়ে গণমাধ্যমে যেসব খবর এসেছে, সাক্ষীরা যা বলেছেন, আমরা যেসব তথ্য পেয়েছি তার ভিত্তিতে র‌্যাব প্রধানের সঙ্গে আলোচনা করেছি।”

সাত খুনের ঘটনা আগে থেকেই র‌্যাব সদর দপ্তর জানত কি না- এমন প্রশ্নে শাহজাহান বলেন, চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এ বিষয়ে উল্লেখ করা হবে।

চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিলের কোনো সুনির্দিষ্ট দিন-তারিখ না জানিয়ে তদন্ত কমিটির প্রধান বলেন, “জিজ্ঞাসাবাদ শেষের পথে। শিগগিরই চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়া হবে।”

এ মামলার প্রধান আসামি নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা নূর হোসেনকে না পেলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ ছাড়াই চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

‘নিখুঁত সত্য’ বের করতে তদন্ত কাজে দেরি হচ্ছে মন্তব্য করে শাহজাহান বলেন, “সময় মতো সবই দেখতে পাবেন, আমরা বসে নেই।”

গত ৩০ এপ্রিল লাশ উদ্ধারের ছবি

সাত খুনের ঘটনায় র‌্যাব ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ অন্যদের জড়িত থাকার অভিযোগ তদন্তে হাই কোর্টের নির্দেশে গত ৭ মে এই তদন্ত কমিটি করে সরকার।

নারায়ণগঞ্জে অপহরণ ও হত্যার ওই ঘটনায় প্রশাসনের কেউ বা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সদস্যের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভূমিকা বা সংশ্লিষ্টতা ছিল কি না- গণতদন্তের মাধ্যমে তা উদঘাটন করতে বলা হয়েছে কমিটিকে।

অপহৃত ব্যক্তিদের জীবিত উদ্ধারে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো অবহেলা বা গাফিলতি ছিল কি না- কমিটিকে তাও খতিয়ে দেখতে বলেছে আদালত।

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, তার বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন, গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম, আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার ও তার গাড়িচালক ইব্রাহীম গত ২৭ এপ্রিল অপহৃত হন। পরে শীতলক্ষ্যা নদী থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

অপহরণের ঘটনার পরপরই নজরুলের পরিবারের পক্ষ থেকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা নূর হোসেনকে প্রধান আসামি করে একটি মামলা করা হয়। নূর হোসেন র‌্যাবকে ছয় কোটি টাকা দিয়ে হত্যা করিয়েছেন বলে নজরুলের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম অভিযোগ করেন।

শুরুতে অভিযোগ অস্বীকার করে সংবাদ মাধ্যমে বক্তব্য দিলেও অপহৃতদের লাশ উদ্ধারের পর লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যান নূর হোসেন। পরে দুই সহযোগীসহ তিনি পশ্চিমবঙ্গে গ্রেপ্তার হন।

র‌্যাবের বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ ওঠার পর র‌্যাব-১১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, মেজর আরিফ হোসেন এবং লেফটেন্যান্ট কমান্ডার এমএম রানাকে বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া হয়। গ্রেপ্তার হওয়ার পর কয়েক দফায় জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডে নিজেদের ‘দোষ স্বীকার’ করে আদালতে তারা জবানবন্দিও দেন।

সাত খুনের ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া এই তিন কর্মকর্তাসহ মোট দশজন আদালতে দোষ স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আর ঘটনার সাক্ষী হিসেবে র‌্যাবের নয় সদস্যসহ মোট ১২ জনের আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।

এই সাত খুনের ঘটনায় নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাংসদ শামীম ওসমান ও মেয়র সেলিনা হায়াত আইভীসহ প্রায় চারশ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে তদন্ত কমিটি। চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়ার আগে আরো তিন-চার জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে বলে মহিউদ্দিন জানিয়েছেন।