সহকর্মীর ‘চক্রান্তে’ সোহেল হন বস্তাবন্দি

বস্তার ভেতর থেকে উদ্ধার পাওয়া মো. সোহেল মিয়া দাবি করেছেন, অর্থ আত্মসাতের উদ্দেশ্যে এক সহকর্মী তাকে মারধরের পর বস্তাবন্দি করে বুড়িগঙ্গায় ফেলে দিয়েছিল।

কামাল হোসেন তালুকদারবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Sept 2014, 05:10 PM
Updated : 28 Sept 2014, 06:26 PM

আমিন নামে যে সহকর্মীর বিরুদ্ধে রাজমিস্ত্রি সোহেল অভিযোগ করেছেন, তাকে এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি বলে পুলিশ জানিয়েছে। 

গত ১৮ সেপ্টেম্বর বুড়িগঙ্গা নদীতে ভাসমান একটি বস্তার ভেতরে জীবিত অবস্থায় পাওয়া যায় সোহেলকে।

অচেতন অবস্থায় তাকে মিটফোর্ড হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে চিকিৎসার পর তার জ্ঞান ফিরলেও কথা বলতে পারছিলেন না এই যুবক।

এরপর সুস্থ হয়ে গত ২৪ সেপ্টেম্বর বাড়ি ফেরার আগে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে সোহেল বলেন তার এই অবস্থার কারণ। 

পটুয়াখালীর সদরের ভায়রা গ্রামের সোহেল কেরানীগঞ্জের আগানগরে থাকেন। সেখানে একটি মেসে থেকে বিভিন্ন স্থানে রাজমিস্ত্রির কাজ করেন তিনি।

সোহেল  বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সহকর্মী আমিনের কাছে টাকা জমা রাখতেন তিনি। গত তিন মাসে তার ২০ হাজার টাকা জমে।

ঘটনার এক সপ্তাহ আগে বাড়ি যাওয়ার পরিকল্পনা করে জমানো ওই টাকা আমিনের কাছে চেয়েছিলেন সোহেল।

টাকা দেওয়ার কথা বলে আমিন ১৭ সেপ্টেম্বর সোহেলকে জিনজিরা বাজারে নিয়ে যান। তাকে বলা হয়, একজনের কাছে টাকা পাবেন আমিন, সেটা নিয়েই সোহেলকে দেওয়া হবে।

“রাত ৮টার জিনজিরা বাজারে যাই। এই কথা সেই কথা বলে রাত ১১টা বেজে যায়। হঠাৎ আমার আশপাশে কয়েকজন যুবক দেখতে পাই। তারাসহ আমিন আমাকে মারতে শুরু করে। কেউ একজন পেছন থেকে আমার মাথায় আঘাত করলে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।”

মো. সোহেল মিয়া

পরদিন সকাল সাড়ে ৬টার দিকে কামালবাগের কাছে নদীতে সাদা রঙের একটি প্লাস্টিকের বস্তা ভাসতে দেখে স্থানীয়রা তা তীরে এনে খুলে সোহেলকে পায়।

আগানগরের মেসে আমিনও থাকতেন এবং একইসঙ্গে কাজ করতেন জানিয়ে সোহেল বলেন, “আমিনের ট্রাংক থাকায় তার কাছে টাকা জমাতাম।”

আমিনের বাড়ি শরীয়তপুরে বলে জানান তিনি।

মামলা নিয়ে থানার ঠেলাঠেলি

সোহেলকে মারধরে করে হত্যার উদ্দেশ্যে বস্তায় ভরে নদীতে ফেলার অভিযোগ এনে গত ২২ সেপ্টেম্বর কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় একটি মামলা করেন সোহেলের বাবা জালাল উদ্দিন।

তবে এই মামলা করতে গিয়ে প্রশাসনিক জটিলতায় হয়রানিতে পড়ার অভিযোগও করেন তিনি।

জালাল বলেন, “চকবাজার থানায় মামলা করতে গেলে সেখান থেকে কেরানীগঞ্জ থানায় পাঠানো হয়। কেরানীগঞ্জ থানায় গেলে সেখান থেকে বলা হয়- মামলা হবে চকবাজার থানায়। পরে কেরানীগঞ্জ থানায় মামলা করা হয়।”

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহ আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দেখা যায় যে, কামালবাগের ওই অংশে (সোহেলের উদ্ধারস্থল) পানি কামরাঙ্গীর চর থানার আওতায়, আর তীর চকবাজার থানা এলাকায়।

“এ ঘটনায় হয় মামলা হবে চকবাজারে, না হয় কামরাঙ্গীরচর থানায়। তবে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায়ও মামলা হতে পারত। কারণ ঘটনার শুরু হয়েছে আগানগর এলাকা থেকে,যা দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার অধীন।”

তবে সোহেলের স্বজনরা মামলা করতে এলে তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়নি বলে দাবি করেন কেরানীগঞ্জ মডেল থানার এই পুলিশ কর্মকর্তা।

“আমাদের থানায় আগে আসেনি সোহেলের স্বজনরা। থানায় আসার সঙ্গে সঙ্গে মামলা নিয়েছি আমরা।”

চকবাজার থানার ওসি আজিজুল হকও দাবি করেন, তার থানায় মামলা করতে যাননি সোহেলের স্বজনরা।

তদন্তের অগ্রগতি জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তা শাহ আলম বলেন, সোহেল আগানগরের যে মেসে থাকতেন, সেখানে অনেক মেস রয়েছে। তবে আমিন নামে কেউ থাকতেন কি না, কেউ জানাতে পারেনি।

সোহেলকে নিয়ে ঘটনাস্থলগুলো পরিদর্শন করলে তদন্তের অগ্রগতি আসবে বলে আশা করছেন তদন্ত কর্মকর্তা সোহেল।