জালিয়াত সচিব: ব্যবস্থা নেই ২০ দিনেও

দুর্নীতি দমন কমিশনের সুপারিশ পাওয়ার ২০ দিনেও জালিয়াতি করে মুক্তিযোদ্ধা সনদ নেওয়া সচিবদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি সরকার।

শহীদুল ইসলামবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Sept 2014, 12:38 PM
Updated : 28 Sept 2014, 12:38 PM

সরকারি চাকরিবিধি অনুযায়ী এদের বিরুদ্ধে আদৌ ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না, তাও স্পষ্ট করছে না জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

অবশ্য যারা এই জালিয়াতি শনাক্ত করেছে সেই দুর্নীতি দমন কমিশন বলছে, তাদের কাজ শেষ। সুপারিশ বাস্তবায়নের দায়িত্ব সরকারের।

‘জালিয়াতি’ করে সনদ নেওয়া পাঁচ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দুদকের সুপারিশ গত ৯ সেপ্টেম্বর হাতে পায় জনপ্রশাসন এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

দুদকের সুপারিশ অনুযায়ী গত ১৪ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য সচিব নিয়াজ উদ্দিন মিয়া, সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) সচিব এ কে এম আমির হোসেন এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব মোল্লা ওয়াহিদুজ্জামানের (বর্তমানে প্রতিমন্ত্রী মর্যাদায় বেসরকারিকরণ কমিশনের চেয়ারম্যান) মুক্তিযোদ্ধার সনদ ও গেজেট বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়।

এছাড়া মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব কে এইচ মাসুদ সিদ্দিকী (বর্তমানে ওএসডি) এবং একই মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব (ওএসডি) আবুল কাসেম তালুকদারের মুক্তিযোদ্ধার সনদ ও গেজেট বাতিলের সিদ্ধান্ত আসে জাতীয় মুক্তিযুদ্ধ কাউন্সিলের ওই সভায়।

পরবর্তীতে গত ২২ সেপ্টেম্বর ওয়াহিদুজ্জামানের সনদ স্থগিত করে অন্য চার জনের সনদ ও গেজেট বাতিল করে আদেশ জারি করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

চাকরিবিধি অনুযায়ী এই পাঁচ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থাসহ ফৌজদারী মামলা করার কথা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের।

গত ১৮ সেপ্টেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, তারা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের চিঠির অপেক্ষায় আছেন।

গত ২২ সেপ্টেম্বরই ওয়াহিদুজ্জামানের সনদ স্থগিত এবং অন্য চারজনের সনদ ও গেজেট বাতিল করে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

এই চিঠি পাওয়ার পর রোববার জনপ্রশাসন সচিব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নতুন কোনো অগ্রগতি নেই। এই মুহূর্তে আর কিছু বলতে পারছি না।”

জালিয়াত চার সচিবকে শোকজ করা হবে কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “সিদ্ধান্ত হোক, পরে জানাব।”

আর দুদক কমিশনার এম সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বল এখন তাদের (জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়) কোর্টে। আমরা আমাদের কাজ শেষ করেছি।”

পাঁচ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকারের কাছে সুপারিশ করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “সরকার এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে আমাদের কিছু করার নেই।”

দুদকের সুপারিশ অনুযায়ী মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় তাদের দায়িত্ব পালন করেছে জানিয়ে চুপ্পু বলেন, এখন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় তাদের দায়িত্ব পালন না করলে এটা তাদের ব্যাপার। এতে তাদের কিছু করারও নেই।

তবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, দুদকের সুপারিশসহ পাঁচ কর্মকর্তাকে নিয়ে একটি সারসংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানোর জন্য তৈরি করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বর্তমানে বিদেশ সফরে রয়েছেন। জাতিসংঘে তার সফরসঙ্গীদের মধ্যে নিয়াজউদ্দিন মিয়াও রয়েছেন।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এর আগে বলেছিলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এদের বিরুদ্ধে মামলা না করলে তারা মামলা করবেন।

অবশ্য এখনও এ ধরনের কোনও উদ্যোগ দেখা যায়নি।