মধ্যবর্তী নির্বাচনের সম্ভাবনা নেই: প্রধানমন্ত্রী

মধ্যবর্তী নির্বাচন এবং সংসদের বাইরে থাকা বিএনপির সঙ্গে সংলাপের সম্ভাবনা সরাসরি নাকচ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সুমন মাহবুব নিউ ইয়র্ক থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Sept 2014, 04:14 AM
Updated : 27 Sept 2014, 12:51 PM

নিউ ইয়র্কের স্থানীয় সময় শুক্রবার বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রবাসী বাংলাদেশি এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, “কিসের মধ্যবর্তী নির্বাচন? এমন কি সমস্যা হয়েছে যে মধ্যবর্তী নির্বাচন? কার জন্য মধ্যবর্তী নির্বাচন? অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী জিয়াউর রহমানের দলকে ক্ষমতায় আনতেই মধ্যবর্তী নির্বাচন?”

নিউ ইয়র্কের বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে এই সংবাদ সম্মেলনে আরেক প্রবাসী সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে বিএনপির সঙ্গে সংলাপের সম্ভাবনা নাকচ করে তার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী পাল্টা প্রশ্ন রাখেন।

বিরোধী দলের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দল সংলাপে বসবে কি না- এই প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, “সংলাপটা আবার কী? সংলাপ কার সাথে? বিরোধী দল? কে বিরোধী দল? সংসদীয় গণতন্ত্রে কারা বিরোধী দল? এর ডেফিনেশন কি?”

“যারা বাইরে আছে.. আমি কি করবো?”

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেওয়ায় জাতীয় পার্টি এখন বিরোধী দল হিসাবে রয়েছে।

বিএনপির মতো একটি রাজনৈতিক দলের সংসদের বাইরে থাকা নিয়ে প্রবাসী সাংবাদিকদের বক্তব্যের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, “বাইরে আছে তো, বাইরে আছে। আমি কি করবো? নির্বাচন করে নাই- তো করে নাই। রাজনীতিতে কেউ ভুল সিদ্ধান্ত নিলে তার খেসারত তাকেই দিতে হবে।”

সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে মানবতাবিরোধী অপরাধে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সাজা কমে আমৃত্যু কারাদণ্ড হওয়ার পর সরকারি দলের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর আঁতাতের যে অভিযোগ উঠেছে তাও উড়িয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী।

এই প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা পাল্টা প্রশ্ন করেন, “আঁতাত হলে বিচার হয়?

“মৃত্যুদণ্ড হবে কি না- সে সিদ্ধান্ত নেবে বিচার বিভাগ। আমাদের বিচার বিভাগ স্বাধীন। বিচার বিভাগে তো হস্তক্ষেপ করতে পারি না।”

“রায় কি আমি দিয়েছি?”-উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে এ প্রশ্ন ছুড়ে শেখ হাসিনা বলেন, “বিচার করছে আমাদের সরকার। আওয়ামী লীগ সরকার। আর কি কেউ বিচার করেছে? বিচার তো করেনি। মন্ত্রী বানিয়েছে। পতাকা দিয়েছে। যারা পতাকা দিয়ে মন্ত্রী বানিয়ে প্রতিষ্ঠিত করেছে- আগে তাদের বিচার করেন।”

জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য অভিযুক্ত। ১৯৭১ সালে ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের পেছনে তার মুখ্য ভূমিকা ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বিএনপি নেতৃত্বাধীন সরকারে তিনি কৃষি ও শিল্প মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে গণহত্যা, লুটপাট, ধর্ষণে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সহাযোগিতার অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুজাহিদ বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের সমাজকল্যাণমন্ত্রী ছিলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, “আগে বিএনপিকে ধরেন। আগে তাদেরও যুদ্ধাপরাধীদের সমান বিচার হওয়া উচিত।”

সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এক জনসভায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রীকে পাসপোর্ট-ভিসা তৈরি রাখতে বলেছেন।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে শেখ হাসিনা বলেন, “আমি ভিসা নিতে যাবো কেন? আমার জন্ম টুঙ্গীপাড়ার মাটিতে। উনার জন্ম তো ইন্ডিয়ার শিলিগুড়িতে। শিলিগুড়ির চা বাগানে উনার জন্ম। ভিসা করলে উনাকে করতে হবে।”

সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়কার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “আমি তো পালাই নাই। সকল এয়ারলাইন্সকে মানা করেছিল। আমাকে কী আটকে রাখতে পেরেছিল?

“দুই ছেলেকে (তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান) অ্যালাউ করলেই উনি (খালেদা জিয়া) চলে যেতেন।”

টেলিভিশনের টক শোতে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপনকারীদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের দেশের অনেক লোকের মধ্যে একটা পতাকা পাবার সুপ্ত আকাঙ্ক্ষা আছে। তারা একটা পতাকা পেতে পারে- অগণতান্ত্রিক কেউ এলে।

“ক্ষমতার খায়েশ থাকলে দল গঠন করুক। জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে আসুক।”  

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, সংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ বাতিল এবং ৩৮ অনুচ্ছেদের কিছু অংশ পরিবর্তন করে জিয়াউর রহমান জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশে রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন।

“বাংলাদেশে সকল অপকর্মের মূল জিয়াউর রহমান। হাই কোর্টও জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা দখলকে অবৈধ ঘোষণা করেছে।”

আরেক প্রশ্নের জবাবে প্রানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার। দুর্নীতি হলে উন্নতি হতে পারে না। 

“আন্তর্জাতিকভাবে আমাদের দুর্নীতিবাজ বানানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। আমি চ্যালেঞ্জ নেই। তারা প্রমাণ করতে পারেনি। আমি পদ্মা সেতুর কথা বলছি।”

তিনি বলেন, “দুর্নীতি হলে বিদ্যুৎ উৎপাদন তিন হাজার দুইশ মেগাওয়াট থেকে ১১ হাজার সাতশ মেগাওয়াট কিভাবে হয়?”

“আমরা ব্যবসা করতে আসিনি। আমরা ব্যবসায়ীদের ব্যবসা করার সুযোগ করে দিয়েছি।”

শনিবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে তার সৌজন্য সাক্ষাৎ হওয়ার কথা রয়েছে বলেও জানান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।

সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হোসেন তৌফিক ইমাম ও মশিউর রহমান, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি এ কে এ মোমেন উপস্থিত ছিলেন।