তাদের বাবার দাবি- হয় হত্যা, নয় প্ররোচনা

সাংবাদিক জয়শ্রী জামানের দুই সন্তানের আত্মহত্যার ঘটনাটি মেনে নিতে নারাজ তাদের বাবা আলীমুল হক টিপু দাবি করেছেন, তাদের হয় হত্যা করা হয়েছে, নয়তো আত্মহননে প্ররোচিত করা হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Sept 2014, 04:24 PM
Updated : 24 Sept 2014, 04:04 PM

গত ১৬ সেপ্টেম্বর উত্তরার বাড়িতে দুই শিশুর মৃত্যুর পর তাদের মায়ের কথার পরিপ্রেক্ষিতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের পক্ষ থেকে প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে চীন থেকে পাঠানো ই-মেইলে এই দাবি করেন টিপু।

টিপুর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর দুই সন্তান নিয়ে উত্তরায় একটি ভাড়া বাড়িতে থাকতেন বাসসের সাংবাদিক জয়শ্রী। তার অনুপস্থিতিতে ওই বাড়িতে দুই সন্তানকে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়।

পুলিশ বলছে, বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ, আত্মসম্মানবোধ, নিজেদের চোখে দেখা মায়ের কষ্ট- এসব থেকে মুক্তি পেতেই আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় চিরশ্রী জামান (১৮) ও মোহাম্মদ বিন আলীম (১৫)।    

বিচ্ছেদের পর টিপু চীন চলে যান, সেখানে তিনি একটি বিয়ে করেছেন এবং ওই ঘরেও তার সন্তান রয়েছে।

সন্তানদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল দাবি করে টিপু বলেন, “বাচ্চারা আত্মহত্যা করেছে বলে আমি বিশ্বাস করি না। ওদের হত্যা করা হয়েছে বা আত্মহত্যা করতে মারাত্মকভাবে প্ররোচিত করা হয়েছে বলেই আমার মন বলে।”

জয়শ্রীর বিরুদ্ধে সন্তানদের নির্যাতনের অভিযোগ এনে তিনি বলেন, “আমি মনমনকে (চিরশ্রী) বলতাম- মা, একটু সহ্য কর। এ লেভেলটা শেষ হলেই তুমি স্কলারশিপ নিয়ে বিদেশে চলে যেতে পারবে।”

তবে এই ‘নির্যাতন’ও আত্মহত্যার কারণ হতে পারে না বলে বলে মনে করেন টিপু।

“কারণ, মায়ের সঙ্গে ঝগড়া করে ওরা অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিল বলে মনমন আমাকে নিজেই বলেছে। বলতে, আর কটা দিন। তারপর আমি বিদেশ চলে যাব।”

জয়শ্রী জামান

সন্তানদের নিয়ে কষ্টের কথা তুলে ধরে জয়শ্রী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “সারা রাত ধরে কাপড় ধুইতাম। সকালে হালকা লিপস্টিক লাগাতাম, যেন বাচ্চারা বুঝতে না পারে সারা রাত কষ্ট করেছি। একটা রাতও কোথাও কাটাইনি তাদের ছাড়া।”

সন্তান দুটি মায়ের আচরণে ‘বিরক্ত’ ছিল দাবি করে টিপু বলেন, “আমার কাছে নানান সময় নানান অভিযোগও করতে। কিন্তু আমি যখন বলতাম যে, তোমরা আমার কাছে চলে আস, তখন আসতে চাইত না। তাদের কথা ছিল, আম্মু বিয়ে করলে তোমার কাছে চলে আসব।”

সন্তানদের বিষয়ে দায়িত্ব এড়িয়েছেন বলে জয়শ্রীর পরিবারের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে  করে টিপু বলেন,“আমি শুধু নিয়মিত বাচ্চাদের খরচ দিয়ে গেছি তা নয়, বাচ্চাদের খোঁজখবর নেওয়া, তাদের বিভিন্ন প্রয়োজন মেটানো ইত্যাদিও করেছি যথাসাধ্য।”

মৃত্যুর কয়েকদিন আগেও মেয়ের সঙ্গে এবং এসএমএস আদান-প্রদান হয়েছিল বলে জানান তিনি।

জয়শ্রীর পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, টিপুর ফেইসবুক পাতায় চিরশ্রীর ছবি ছিল। কিন্তু সম্প্রতি তা পরিবর্তন করে সেখানে বর্তমান স্ত্রীর সন্তানের ছবি তোলা হয়। এটা স্বাভাবিকভাবে নিতে পারেনি চিরশ্রী ও মোহাম্মদ।

এই বিষয়ে সরাসরি কিছু তা বললেও টিপু লিখেছেন, “ওরা (জয়শ্রীর পরিবার) তো আগাগোড়াই মিথ্যাচার করে যাচ্ছে।”

চিরশ্রী ও মোহাম্মদকে নিয়ে আলীমুল হক

টিপুর ফেইসবুক পাতায় এখন চিরশ্রী ও মোহাম্মদের ছবি রয়েছে, তবে তা সম্প্রতি আপলোড করা বলে দেখা যায়।

৭ বছর আগে বিচ্ছেদের জন্য জয়শ্রীকে দায়ী করে টিপু বলেছেন, তিনি ডিভোর্স চাননি,তাকে বাধ্য করা হয়েছে।

“জয়শ্রীই আমাকে ডিভোর্সে বাধ্য করেছে। তারপরও আমি ওকে বলেছিলাম- ডিভোর্স হলেও, বাচ্চাদের কল্যাণের জন্য আমাদের উচিত হবে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া। কিন্তু সে বাচ্চাদের ব্যাপারে অনেক সিদ্ধান্ত নিয়েছে আমাকে না-জানিয়ে, যার ফল পরে ভালো হয়নি।”

বিচ্ছেদের বিষয়ে জয়শ্রীর বক্তব্য- “টিপুর অনেক দোষ ছিল, কিন্তু তাকে আমি ক্ষমা করতাম এই ভেবে, ছোট বেলায় টিপুর মা মারা গেছেন। কিন্তু অন্য নারীর সঙ্গে প্রেম তো আর ক্ষমা করা যায় না। হয়ে গেল বিচ্ছেদ।”

বিচ্ছেদের পর জয়শ্রী আর বিয়ে করেননি। টিপু সাত বছর আগে বিয়ে করে নতুন সংসার পাতেন।

“যেহেতু একসঙ্গে থাকতে পারিনি, তাই দূর থেকে আমার পক্ষে যতটুকু করা সম্ভব, আমি চেষ্টার ত্রুটি করিনি। বাচ্চারা আমার অবহেলা পায়নি, ভালোবাসা আর যত্নই পেয়েছে। আমিই ছিলাম ওদের মূল আশ্রয়,” বলেছেন টিপু।