সাক্ষ্য দিলেন জজ মিয়ার বোন

একুশে অগাস্ট গ্রেনেড হামলার মামলায় জজ মিয়ার মা জোবেদা খাতুনের পর বোন খোরশেদা খাতুনের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Sept 2014, 03:09 PM
Updated : 23 Sept 2014, 03:09 PM

মঙ্গলবার পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডে ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিশেষ এজলাসে দেওয়া সাক্ষ্যে খোরশেদা তার মায়ের বক্তব্যই সমর্থন করেন।

জোবেদা খাতুন সাক্ষ্যে বলেছিলেন,বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে এই মামলায় দোষ স্বীকার করে জজ মিয়ার জবানবন্দির বিনিময়ে তাকে নিয়মিত অর্থ দেওয়ার পাশাপাশি বাড়ি বানিয়ে দেওয়ার প্রলোভনও দেখানো হয়েছিল।

খোরশেদা বলেন, ২০০৪ সালে হামলার পরের বছর জজ মিয়াকে নোয়াখালীর সেনবাগ থেকে ঢাকায় ধরে আনা হয়েছিল। তিনি ও তার মা তাকে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাকে পাচ্ছিলেন না। পরে জানতে পারেন তাকে কাশিমপুর কারাগারে রাখা রয়েছে।

জজ মিয়াকে ওই মামলার তদন্ত সংস্থা সিআইডি জিজ্ঞাসাবাদ করে। তখন জজ মিয়ার দেখা পেয়েছিলেন বলে জানান তার বোন।  

“জজ মিয়ার সঙ্গে তখন আমাদের যোগাযোগ হয়। পরে তার কথামতোই সিআইডি কার্যালয়ে কর্মকর্তা রুহুল আমীন ও আব্দুর রশীদের সঙ্গে দেখা করি। তারা বলেন, জজ মিয়াকে এক বিষয়ে সাক্ষ্য দিতে হবে। সাক্ষ্যের পর তাকে বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।”

ওই সময় সিআইডির ওই দুই কর্মকর্তা প্রতি মাসে ২ হাজার টাকা করে ছয় মাসে মোট সাড়ে ১২ হাজার টাকা দেন বলে জানান খোরশেদা।

“এরপর টাকা আনতে যাওয়ার আগে আমি সাংবাদিকদের কাছে দুই হাজার টাকা করে নেওয়ার কথা বলে দিয়েছিলাম। এ কারণে টাকা আনতে গেলে সিআইডি আর টাকা দেয়নি। সে সময় রুহুল আমিন আমাদের  বলে দিয়েছিলেন, ‘মিডিয়াকে বলে দিয়ে তোমরা তোমাদের রিজিক হারাইছো, আর টাকা পাইবা না’।”

সাবেক সিআইডি কর্মকর্তা রুহুল আমিন ও আব্দুর রশিদ একুশে অগাস্ট মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে মামলার এই দুই তদন্ত কর্মকর্তা বর্তমানে এই মামলারই আসামি। 

সেনবাগের বিরকোট গ্রাম থেকে গ্রেপ্তার জজ মিয়ার ‘স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি’ আদায়ের পর তাকে আসামি করেই চাঞ্চল্যকর এই মামলার অভিযোগপত্র দিয়েছিল পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

কিন্তু পরে অধিকতর তদন্তে দেখা যায়, ওই মামলাকে ‘ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য’ বিগত চারদলীয় জোট সরকারের নির্দেশে সিআইডি জজ মিয়াকে নিয়ে নাটক সাজানোর চেষ্টা করে।

খোরশেদা বলেন, ভাইকে মামলা থেকে বাঁচাতে ভিটেবাড়ি বিক্রি করতে হয়েছে তাদের। পরে সর্বশেষ তদন্ত কর্মকর্তা ফজলুল হককে সব ঘটনা খুলে বললে তিনি জজ মিয়াকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার উদ্যোগ নেন।   

খোরশেদার জবানবন্দি নেওয়ার পর বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন আগামী ২৯ এবং ৩০ সেপ্টেম্বর তাকে জেরার জন্য দিন ঠিক করেছেন।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আবু আবদুল্লাহ ভূঁইয়া জানিয়েছেন, এই মামলায় মোট ৪৯১ জন সাক্ষীর মধ্যে খোরশেদাকে নিয়ে ১০৩ জনের জবানবন্দি নেওয়া হল।

গত ৮ সেপ্টেম্বর জোবেদা খাতুন এই মামলায় জবানবন্দি দেওয়ার পর তাকে জেরা করেন আসামি পক্ষের আইনজীবীরা। খোরশেদার পর জজ মিয়াও আদালতে সাক্ষ্য দেন।

২০০৪ সালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী শোভাযাত্রার আগে ওই গ্রেনেড হামলায় দলের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক আইভি রহমানসহ অন্তত ২৪ জন নিহত ও শতাধিক আহত হন।

আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ওই হামলা চালানো হয়েছিল বলে পরে তদন্তে বেরিয়ে আসে।