ভারতের কুচবিহারে বিএসএফ সেক্টর সদর দপ্তরে স্থাপিত বিশেষ আদালতে সোমবার এ বিচার শুরু হয়।
বিচারিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে মঙ্গলবার দুপুরে ভারতের চৌধুরীহাট সীমান্তের আন্তর্জাতিক সীমান্ত পিলার ৯৪৭ এলাকায় ফেলানী হত্যাকাণ্ডের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন বিচারিক আদালতের একটি প্রতিনিধি দল।
এদিকে ভারতে গিয়ে আদালতে সাক্ষ্য দেয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম ও মামা আবু হানিফ।
কুড়িগ্রাম ৪৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোফাজ্জল হোসেন আকন্দ বিচারিক কার্যক্রম ও প্রতিনিধি দলের ঘটনাস্থল পরিদর্শনের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তবে, আদালতে দ্বিতীয় দিনের কার্যক্রমে কী ছিল এবং ঘটনাস্থলে আসা প্রতিনিধি দলে কারা ছিলেন সে ব্যাপারে কিছু জানা যায়নি।
মোফাজ্জল হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, কুচবিহারের বিএসএফ সদর দপ্তরে স্থাপিত বিশেষ আদালতের স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স কোর্টে এ বিচার কার্যক্রম সোমবার শুরু হয়।
এ আদালতে সাক্ষ্য দিতে ফেলানীর বাবা নুর ইসলাম, মামা আবু হানিফ, তিনি নিজে (লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোফাজ্জল হোসেন আকন্দ) ও পাবলিক প্রসিকিউটর আব্রাহাম লিংকনের চার সদস্যের প্রতিনিধি দল প্রস্তুত রয়েছে।
আদালতের নির্দেশ পেলেই সাক্ষ্য দিতে তারা ভারত যাবেন বলে জানান মোফাজ্জল হোসেন।
ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম দ্বিতীয় দফায় ভারত সরকার বিচার কার্যক্রম শুরু করায় ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, বিচার নিয়ে যেন আবারো তামাশা করা না হয় সে ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারকে সতর্ক থাকার অনুরোধ জানান।
“আমার একটাই চাওয়া, ফেলানীর খুনি বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষের ফাঁসি,” বলেন তিনি।
নুরুল ইসলাম আরো বলেন, ভারতের আদালতে দ্বিতীয় দফা সাক্ষ্য দিতে তিনি প্রস্তুতি নিয়েছেন। ডাক পড়লেই ভারতে যাবেন।
কুড়িগ্রামের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট এসএম আব্রাহাম লিংকন জানান, “মঙ্গলবার পর্যন্ত ভারতীয় কর্তৃপক্ষ বিচারিক আদালতে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানায়নি। আমরা অপেক্ষা করছি খুব শিগগিরই ডাক পড়বে। এবার সম্মানজনক ও কাঙ্ক্ষিত ন্যায় বিচার পাবো আমরা।”
ফেলানী হত্যার পুনর্বিচারের জন্য ২০১৩ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ভারতীয় হাইকমিশনারের মাধ্যমে ভারত সরকারের কাছে আবেদন জানান ফেলানীর বাবা। এতে তাকে সহযোগিতা করেন মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র। এরপর চলে বাংলাদেশ সরকারের কূটনৈতিক তৎপরতা।
পরে বিজিবি-বিএসএফ’র দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে ফেলানী হত্যার পুনর্বিচারে সম্মত হয় বিএসএফ। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার পুনরায় বিচার কার্যক্রম শুরু হয়।
২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি শুক্রবার ভোর সোয়া ৬টার দিকে মই বেয়ে কাঁটাতারের বেড়া পার হওয়ার সময় বিএসএফের গুলিতে মৃত্যু হয় কিশোরী ফেলানীর।
ভারত থেকে কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ীর অনন্তপুর সীমান্ত দিয়ে বাবার সঙ্গে বাড়ি ফিরছিল এই কিশোরী।
এরপর সকাল পৌনে ৭টা থেকে তার মৃতদেহ কাঁটাতাঁরে ঝুলে থাকে দীর্ঘ সাড়ে ৪ ঘণ্টা। পরে বিএসএফ লাশ নিয়ে যায় ভারতে।
এরপর ৮ জানুয়ারি লাশ ফেরত দেয় বিএসএফ। বাংলাদেশে আরেক দফা ময়নাতদন্ত শেষে লাশ দাফন হয়।
দেশ-বিদেশের গণমাধ্যম ও মানবাধিকার কর্মীদের ব্যাপক সমালোচনার মধ্যে কুচবিহারের বিএসএফের বিশেষ আদালতে ২০১৩ সালের ১৩ অগাস্ট বিচারিক কার্যক্রম শুরু করে ভারত সরকার। আদালতে সাক্ষ্য দেন প্রত্যক্ষদর্শী ফেলানীর বাবা নুর ইসলাম ও মামা আবু হানিফ।
২০১৩ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ওই বিচারের রায়ে বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষকে বেকসুর খালাস দেয় বিশেষ আদালত।