ফল পরীক্ষা হচ্ছে ‘বাতাসে ফরমালিন মাপার’ যন্ত্র দিয়ে

বাতাসের ফরমালিন পরীক্ষার যন্ত্র দেশে ফলের ফরমালিন পরীক্ষা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ শিল্প ও বিজ্ঞান গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর)।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Sept 2014, 11:18 AM
Updated : 23 Sept 2014, 11:18 AM

হাই কোর্টের নির্দেশে দেয়া এক প্রতিবেদনে বিসিএসআইআর এই তথ্য জানিয়েছে।

বিসিএসআইআর- এর দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজ্ঞানীর তত্ত্বাবধানে যন্ত্রটি বাজার থেকে সংগ্রহ করে পরীক্ষার পর এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে বলে আদালতকে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

সংশ্লিষ্ট রিটের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ জানিয়েছেন, মঙ্গলবার তিনি বিসিএসআইআর ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. হারুন স্বাক্ষরিত ওই প্রতিবেদন হাতে পেয়েছেন।

প্রস্তুতকারক কোম্পানির ব্যবহারবিধি ও ওয়েবসাইটের তথ্যের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, এনভায়রনমেন্টাল সেন্সর নামের এক কোম্পানির তৈরি করা ‘জেড ৩০০’ মডেলের ‘ফরমালডিহাইড ভ্যাপর মিটার’ যন্ত্রটি পরিবেশ ও বাতাসে ফরমালডিহাইডের বাস্প মাপার ‘সংবেদনশীল’ যন্ত্র। এর মাধ্যমে বাতাসে ফরমালডিহাইড গ্যাসের পরিমাণ সঠিকভাবে নির্ণয় করা সম্ভব।

ওই যন্ত্র ব্যবহার করে খাদ্যে ফরমালডিহাইডের পরিমাণ জানার কোনো ‘অ্যাপ্লিকেশন নোট’ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান দেয়নি বলেও প্রতিবেদনে জানানো হয়।

বিসিএসআইআর জানিয়েছে, নমুনা হিসাবে বাজার থেকে আম, মাল্টা, লাল আঙুর, খেঁজুর ও আপেল সংগ্রহ করেও তারা পরীক্ষা করে দেখেছে।

এতে বলা হয়, সংগ্রহ করা ফলের নমুনা ৫ শতাংশ ফরমালডিহাইড এর দ্রবনে ৩০ মিনিট ভিজিয়ে রেখে কক্ষ তাপমাত্রায় শুকানো হয়। তারপর দ্রবণ মেশানো ফল এবং ‘ফ্রেস’ ফল পলিথিন ব্যাগে ভরে কিছুক্ষণ রেখে ব্যাগের ভেতরের বাতাসে ফরমালডিহাইড পরীক্ষা করা হয়।

‘জেড ৩০০’ ব্যবহার করে এই পদ্ধতিতেই বাজারের ফলের ফরমালিন পরীক্ষা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। 

“নমুনা পরীক্ষায় দেখা যায়, এই যন্ত্রটি ভেজানো ফল ও ফ্রেশ ফলের ফরমালডিহাইডের যে পরিমাণ দেখায় তা সময়, তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার উপর নির্ভরশীল। উষ্ণ তাপমাত্রায় ফ্রেশ ফলেও অধিক ফরমালডিহাইডের পরিমাণ দেখায়। তাই ফল উষ্ণ থাকলে এই যন্ত্র ফরমালডিহাইডের পরিমাণ সম্পর্কে ভুল তথ্য নির্দেশ করতে পারে।”

প্রতিবেদনে বলা হয়, এসিটোন, ফরমিক এসিড, এসিটিক এসিড ও মিথানলের উপস্থিতিতেও যন্ত্রে ফরমালডিহাইডের উপস্থিতি দেখাতে পারে। এসব রাসায়নিক প্রাকৃতিকভাবেই ফরমালডিহাইডের মতো রাসায়নিক উপাদান তৈরি করতে পারে। এ কারণেও ওই যন্ত্র ভুল তথ্য দেখাতে পারে।

“এই যন্ত্র ব্যবহার করে খাদ্যের ফরমালডিহাইড পরিমাপ করতে হলে প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের অ্যাপ্লিকেশন ইঞ্জিনিয়ারের মাধ্যমে যন্ত্রটির উন্নয়ন ঘটিয়ে ফুড অ্যাপ্লিকেশন নোট সরবরাহ করা প্রয়োজন।”

‘বাংলাদেশ ফ্রেশ ফুড ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন’ এর সভাপতি সাধন চন্দ্র দাশ ও সেক্রেটারি সিরাজুল ইসলাম গত ১৩ জুলাই হাই কোর্টে এই রিট আবেদন করেন।

ওই রিটের প্রাথমিক শুনানি পর গত ২১ জুলাই বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি মো. হাবিবুল গণির বেঞ্চ এ বিষয়ে আদেশ দেয়।

আদেশে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর) ও বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউটের (বিএসটিআই) মহাপরিচালক এবং ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবরোটরির পরিচালককে ওই যন্ত্র পরীক্ষা করে আদালতে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেয়া হয়।

মনজিল মোরসেদ বলেন, “আমরা কেবল বিসিএসআইআর এর প্রতিবেদন পেয়েছি। বাকিদের প্রতিবেদন হাতে পাইনি।”

রিট আবেদনে অভিযোগ করা হয়, ‘ফরমালডিহাইড মিটার জেড ৩০০’ নামের যে যন্ত্রটি দিয়ে বাংলাদেশে ফলে ফরমালিন পরীক্ষা করা হচ্ছে, তা যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি করা হয়েছে বাতাসে ফরমালিন মাপার জন্য।

এই মামলার শুনানিতে মনজিল মোরসেদ বলেন, “ফলে ক্ষতিকর রাসায়নিক প্রয়োগ জঘন্য অপরাধ এবং তা বন্ধ করা প্রয়োজন। কিন্তু এই সুযোগে যদি সঠিক যন্ত্র ছাড়া অন্য কিছু দিয়ে পরীক্ষার মাধ্যমে ফরমালিন পাওয়ার অজুহাতে হাজার হাজার টন ফল ধ্বংস করা হয়, তা ব্যবসায়ী, কৃষি ও ভোক্তাদের জন্য হুমকিস্বরূপ। যেহেতু যন্ত্র নিয়েই প্রশ্ন উঠছে, তাই এর পরীক্ষা করা প্রয়োজন।”

এর আগে একটি মামলার রায়ে ফল পাকাতে এবং তাজা রাখতে রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার বন্ধে পাঁচ দফা নির্দেশনা দেয় হাই কোর্ট।

ওই রায়ে বলা হয়, ছয় মাসের মধ্যে দেশের সব স্থল ও সমুদ্র বন্দরে `কেমিকাল টেস্ট ইউনিট' স্থাপন করতে হবে, যাতে আমদানি করা ফল রাসায়নিক পরীক্ষা করে বাজারে ছাড়া হয় এবং রাসায়নিক দ্রব্য মেশানো কোনো ফল দেশের প্রবেশ না করতে পারে।

এছাড়া রাসায়নিক দ্রব্য মিশিয়ে কেউ যাতে ফল বিক্রি করতে না পারে সেজন্য কমিটি করে সারা বছর সব ফলের বাজার ও সংরক্ষণাগারে পর‌্যবেক্ষণ চালানোরও নির্দেশ দেয়া হয়।

ঢাকা সিটি কর্পোরেশন এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মাছ, ফল, সবজিসহ খাদ্যপণ্যে ফরমালিন শনাক্তের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি ‘ফরমালডিহাইড মিটার জেড ৩০০’ ব্যবহার করা হচ্ছে।