‘জালিয়াত’ সচিব প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হওয়ায় সুরঞ্জিতের ক্ষোভ

সচিব পর্যায়ের আমলাদের প্রতারণা ও জালিয়াতির বিরুদ্ধে ‘সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে’ আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফার ডটকমবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Sept 2014, 09:56 AM
Updated : 23 Sept 2014, 01:35 PM

‘চলমান রাজনীতি’ বিষয়ে মঙ্গলবার এক আলোচনা সভায় সংসদ বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত বলেন, “জালিয়াতি করা একজন কর্মকর্তা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র সফর করেছেন। এগুলো আমরা আশা করি না।

“প্রধানমন্ত্রী দিন রাত কাজ করছেন, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, আপনারা আমলারা মজা মারবেন তা তো হয় না। এটি শক্ত হাতে দেখা দরকার।”

সরকারি চাকরির মেয়াদ বাড়াতে ‘অবৈধ প্রক্রিয়ায়’ মুক্তিযোদ্ধা সনদ নেয়ার অভিযোগে স্বাস্থ্য সচিব এম নিয়াজ উদ্দিন মিয়ার মুক্তিযোদ্ধা সনদ ও গেজেট বাতিল করেছে সরকার, যিনি বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী হিসাবে যুক্তরাষ্ট্র সফরে রয়েছেন।

একই কারণে আরো দুই সচিব এবং এক যুগ্ম সচিবের মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিল করা হয়েছে, স্থগিত করা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক সাবেক সচিবের সনদ।

ফাইল ছবি

সুরঞ্জিত ক্ষোভ নিয়ে  বলেন, “স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ এ জাতির গর্ব। মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে প্রতারণা করে আমলা সাহেবরা সেক্রেটারি হয়েছেন। মুক্তিযোদ্ধা লিখলেই দুবছর পাওয়া যায়। তাও আবার একজন, দুজন নয়, ৫ জন। চারজন বাতিল, একজনের সনদ স্থগিত।”

‘জালিয়াত’ কর্মকর্তাদের শাস্তির দাবি জানিয়ে ক্ষমতাসীন দলের এই নেতা বলেন, “প্রতারণার জায়গা রয়েছে। টাকা পয়সার জন্যে গরিব মানুষ এগুলো করে। কিন্তু আমলারা রাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ে থেকে স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে প্রতারণা করবেন! বিষয়টি সহজভাবে না নিয়ে উচ্চতর পর্যায়ে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।”

বঙ্গবন্ধু একাডেমি নগরীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।

বিএনপি-জামায়াতের হরতালের সমালোচনা করে সুরঞ্জিত বলেন, “হরতাল ডেকে মাঠে নেই বিএনপি। এ ধরনের তামাশা না করলেই হতো।”

সংবিধান সংশোধনী নিয়ে ‘কোনো কথা থাকলে’ বা নতুন আইন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক মনে করলে বিএনপিকে আইনের আশ্রয় নেয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

উচ্চ আদালতের বিচারকদের সরানোর ক্ষমতা সংসদকে দিয়ে সংবিধান সংশোধনের প্রতিবাদে সোমবার সারাদেশে হরতাল করে বিএনপি-জামায়াতের ২০ দলীয় জোট। একই দিনে রষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ওই বিলে সই করেন, যার মধ্য দিয়ে বিলটি আইনে পরিণত হন। 

বিএনপি বলছে, এই আইনের ফলে বিচারপতিদের ওপর মনস্তাত্ত্বিক চাপ সৃষ্টি হবে, জনগণ ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হবে।

বিএনপি নেতাদের উদ্দেশ্যে সুরঞ্জিত বলেন,  “হরতালে হবে না, সুপ্রিম কোর্ট বা হাইকোর্টে যান। অরাজক অর্থহীন রাজনীতি মানুষকে বিরক্ত করে। দলের অবস্থানকে খেলো করে।”

ব্যাংক খাতে বিদ্যমান অরাজকতা নিয়ে অর্থমন্ত্রী ও গভর্নরেরও সমালোচনা করেন সুরঞ্জিত।

তিনি বলেন, “এখন তো কিছু আর রাখঢাক নেই, সবকিছু ওপেন হচ্ছে। গভর্নর সাহেব বলছেন- ব্যাংকের পর্ষদে অনেক অযোগ্য, অদক্ষ লোক রয়েছে। এসব অপদার্থ, সুবিধাবাদী লোককে নিয়োগ দেয়ার ক্ষেত্রে আপনারও অনুমোদন রয়েছে।”

পরস্পরের ওপর দোষ না চাপিয়ে দায়িত্বশীলভাবে কাজ করার জন্যে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

স্বতন্ত্র সাংসদ ও মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাজী সেলিমের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে সাবেক প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু, হারুণ চৌধুরী, হুমায়ুন কবির মিজি ও রাজিয়া মোস্তফা এই আলোচনায় অংশ নেন।