টানা বর্ষণে প্লাবিত রাজশাহী নগরী

টানা ভারি বর্ষণে রাজশাহী মহানগরীর নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিএস এম নাদিম মাহমুদ, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Sept 2014, 10:58 AM
Updated : 22 Sept 2014, 03:07 PM

রোববার সন্ধ্যা থেকে শুরু হওয়া এই বৃষ্টি চলে প্রায় ১১ ঘণ্টা। তাই রাতেই শহর জলেমগ্ন হয়ে পড়ে। এরপর সকালেও বৃষ্টিপাত হয়।

জলাবদ্ধতার কারণে দুর্ভোগে পড়েছেন কর্মজীবী নারী-পুরুষ, স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণিপেশার নগরবাসী। সড়কে জলাবদ্ধতার কারণে যানবাহন চলাচলেও বিঘ্ন ঘটে।

রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ আশরাফুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, রোববার সন্ধ্যা ৬টা থেকে সোমবার ভোর ৬টা পর্যন্ত ৩ দশমিক ১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এরপর সকাল ৬টা থেকে সকাল ১০ টা পর্যন্ত ২৫ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়।

এটি এবারের বর্ষার সবচেয়ে বেশি বর্ষণ বলে তিনি দাবি করেন।

নগরে সুষ্ঠু পয়নিষ্কাসন ব্যবস্থা না থাকায় নগরবাসী দুর্ভোগে পড়েছে বলে জানান তিনি।

সকালে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, সাহেব বাজার, নিউমার্কেট, সিএন্ডবি মোড়, বিন্দুরমোড়, মনিচত্বর, উপশহর, বিনোদপুর, মতিহার, বুধপাড়া, ডাশমারি, কাজলা, লক্ষ্মীপুর, ডিঙ্গাডোবা, গুড়িপাড়া ও মহিষবাথান এলাকা জলমগ্ন হয়ে আছে।

সবচেয়ে বেশি খারাপ অবস্থা নগরীর রাজারহাতার হরিজন পল্লী।

এই পল্লী ঘুরে দেখা গেছে এলাকা হাঁটু পানিতে তলিয়ে গেছে। ছোট ছোট বাড়িগুলোর দরজার সামনে দেখা যায় কনক্রিটের দেয়াল, যাতে ঘরে পানি প্রবেশ করতে না পারে। অনেক শিশুকে বৃষ্টির পানিতে দৌড় ঝাপ দিতে দেখা যায়।

হরিজন পল্লীর বাসিন্দা জীবন চন্দ্র বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বর্ষা আসলে আমাদের এই এলাকা পানিতে ডুবে যায়। সিটি কর্পোরেশনকে বারবার জানালেও তারা পানি নিষ্কাষনের কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করে না।

“আমরা খেটে খাওয়া মানুষ, এই বৃষ্টির পানিতে যদি কাজে না যেতে পারি তাহলে আবার ছাঁটাই করে দেয়।”

সত্তরোর্ধ্ব বয়সী লক্ষ্মী রানী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “একটু বৃষ্টিতে আমাদের এখানে বন্যার পানির মতো স্রোত হয়।”

এছাড়া নগরীর প্রধান প্রধান সড়কে পানি জমে কয়েকঘণ্টা যানচলাচলে ব্যাপক বিঘ্ন ঘটে। নগরীর প্রাণকেন্দ্র সাহেব বাজার এলাকায় জমে থাকা বৃষ্টির পানির কারণে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বন্ধ ছিল। 

দুর্ভোগে পরা সুমন মাহমুদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন আগেই থেকে পানি নিষ্কাশনে উদাসীন ছিল, এখনো আছে। আগেও বর্ষার পানি জমেছিল, কিন্তু তারা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

নগরীর ১২ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর দিলদার হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা বিষয়টি নিয়ে মেয়রকে জানিয়েছি, কিন্তু বরাদ্ধ না থাকায় পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা জোরদার করা যাচ্ছে না।”

এই ব্যাপারে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার নগরবাসী সামান্য বৃষ্টিতে সমস্যায় পড়ে যায়। আমি নিজে ড্রেনজ ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য সরকারের কাছে লিখিত আবেদন করেছি। তারা যদি বরাদ্দ না দেয় তাহলে বৃষ্টির কাছে অসহায় হওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই।”

“আমি চাই সরকার দ্রুত পানি নিষ্কাশনের জন্য সিটি কর্পোরেশনে বরাদ্দ দিবেন,” বলেন তিনি।