ওয়াহিদুজ্জামানের সনদ স্থগিত, বাতিল বাকি ৪ জনের

দুর্নীতি দমন কমিশনের সুপারিশে বাতিলের সিদ্ধান্ত হলেও তা না করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব মোল্লা ওয়াহিদুজ্জামানের মুক্তিযোদ্ধা সনদ ও গেজেট ‘স্থগিত’ করা হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Sept 2014, 08:03 AM
Updated : 22 Sept 2014, 08:03 AM

এছাড়া তিন সচিব ও এক যুগ্ম সচিবের মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিল করে গেজেট প্রকাশ করেছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

জাতীয় মুক্তিযুদ্ধ কাউন্সিলের (জামুকা) বৈঠকে সনদ বাতিলের সিদ্ধান্ত হওয়ার নয় দিন পর মন্ত্রণালয় সোমবার এই গেজেট প্রকাশ করল।

সনদ বাতিল হওয়া চারজনের মধ্যে স্বাস্থ্য সচিব এম নিয়াজ উদ্দিন মিয়াও আছেন, যিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্র সফরে তার সঙ্গে রয়েছেন।

বাকি তিনজন হলেন সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) সচিব এ কে এম আমির হোসেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব কে এইচ মাসুদ সিদ্দিকী (বর্তমানে ওএসডি) এবং একই মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব (ওএসডি) আবুল কাসেম তালুকদার।

আর মোল্লা ওয়াহিদুজ্জামান বর্তমানে প্রতিমন্ত্রী মর্যাদায় বেসরকারিকরণ কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন।

তার সনদ বাতিল না করার ব্যাখ্যা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক নিজের দপ্তরে সাংবাদিকদের বলেন, “তিনি (মোল্লা ওয়াহিদুজ্জামান) মুক্তিযোদ্ধার সনদ নেয়ার জন্য পাঁচটি ধাপের চারটিই শেষ করেছেন। যে ধাপটি শেষ করেননি ওই অপরাধ তার নয়।”

মন্ত্রী বলেন, “অতি উৎসাহী কর্মকর্তারা শেষ ধাপ না মেনে তার গেজেট প্রকাশ করেন, যা এনএসআইয়ের তদন্তেও বেরিয়ে এসেছে। তাই তার সনদ বাতিল না করে স্থগিত করা হয়েছে।”

এ বিষয়ে মোল্লা ওয়াহিদুজ্জানকে চিঠি দেয়া হবে জানিয়ে মোজাম্মেল হক বলেন, তাকে শুনানিরও সুযোগ দেয়া হবে।

সরকারের এই পাঁচ কর্মকর্তা ‘অবৈধ প্রক্রিয়ায়’ মুক্তিযোদ্ধা সনদ নেন বলে তদন্তে বেরিয়ে এলে তা বাতিলের সুপারিশ করে দুদক। ওই সুপারিশের পর গত ১৫ সেপ্টেম্বর জাতীয় মুক্তিযুদ্ধ কাউন্সিলের (জামুকা) বৈঠকে সনদ বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়।

সরকারের চার কর্মকর্তার সনদ ও গেজেট বাতিলের চিঠি সোমবারই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে জানিয়ে মোজাম্মেল বলেন, আজই তারা চিঠি পেয়ে যাবেন।

“জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় তাদের বিবেচনা মতো এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে বলে আশা করছি। আমরা অপেক্ষা করছি তারা (জনপ্রশাসন) কি করে। এ নিয়ে অগ্রিম ভাবব না। কারণ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ই ব্যবস্থা নেয়ার অধিকার রাখে।”

তবে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আশ্বাস দেন, জনপ্রশাসনের এই শীর্ষ কর্মকর্তারা জালিয়াতি করে ‘পার পাবেন না’।

দুদকের সুপারিশের আলোকে চার কর্মকর্তার মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিল করাকে ‘অগ্রগতি’ দাবি করে তিনি বলেন, “বাকিটুকুও হবে।”

“কে কোন পর্যায়ের এটা দিয়ে বিচার করি না। কে কি অপরাধ করল সেটাই বিবেচ্য। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা না নিলে তখন ভাবব। পরবর্তীতে আইন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলে পদক্ষেপ নেব।”

মন্ত্রী জানান, এ পর্যন্ত চারশ’র মতো ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ পাওয়া গেছে।  জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, জাতীয় মুক্তিযুদ্ধ কাউন্সিলের বৈঠকে এ দের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।

সচিবদের ভুয়া সদন পাইয়ে দেয়ার সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যেসব কর্মকর্তা জড়িত তাদের বিষয়েও ‘পরে বিবেচনা’ করা হবে বলে মন্তব্য করেন মন্ত্রী।

স্বাস্থ্যসচিব নিয়াজ উদ্দিনকে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী করার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মন্ত্রী বলেন, “চূড়ান্ত শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত কাউকে দোষী বলা যায় না।”