বিলীন হয়ে গেছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিও। এ কারণে বন্যা পরবর্তী চিকিৎসা সেবা ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয়।
যমুনার দুপাড়ে সাতটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার মানচিত্র এখন অনেক ছোট হয়ে গেছে। দেড় লাখ জনসংখ্যা অধ্যুষিত এ উপজেলার আয়তন প্রায় ২১০ বর্গকিলোমিটার, ভোটার সংখ্যা প্রায় ৮৯ হাজার।
উপজেলা কার্যালয় থেকে জানা যায়, নদীর পূর্ব পাড়ের খাসকাউলিয়া, বাগুটিয়া, উমরপুর, খাসপুকুরিয়া ও ঘোড়জান এবং পশ্চিমপাড়ের সোদিয়া ও চাদপুর ইউনিয়ন নিয়ে চৌহালী উপজেলা গঠিত।
গত ২ মাসে নদীর ভয়াবহ ভাঙনের কবলে পড়ে পূর্বপাড়ের উপজেলা সদর হিসেবে পরিচিত খাসকাউলিয়া ইউনিয়ন সম্পূর্ণ এবং বাগুটিয়া ইউনিয়নের অর্ধেক নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। পাশাপাশি তিন শতাধিক ঘরবাড়ি, অসংখ্য গাছপালা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও রাস্তা-ঘাট নদীগর্ভে চলে গেছে।
কলেজের পরিত্যক্ত আবাসিক কোয়ার্টারে রয়েছে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কার্যালয়, প্রকৌশলীর কার্যালয়, হোস্টেলে বিআরডিবি, পল্লী উন্নয়ন প্রকল্প, উপজেলা প্রধান পোস্ট অফিস।
কলেজ ছাত্র সংসদে উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা, খাসকাউলিয়া সিদ্দিকীয়া ফাজিল মাদ্রাসায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও চৌদ্দরশি অধ্যাপক আব্দুর রশিদের বাড়িতে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা, চরজাজুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আনসার ভিডিপি ও নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের কার্যক্রম চলছে।
এছাড়া আজিমুদ্দির মোড়ে অবস্থিত উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে মৎস্য অফিসের কার্যক্রম চলছে। আর চৌহালী ডিগ্রি কলেজে সোনালী ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের শাখা স্থানান্তর করা হয়।
উপজেলার বাগুটিয়া ইউপি চেয়ারম্যান কাহ্হার সিদ্দিকী ও উমারপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হালিম মোল্লা বলেন, যমুনা নদীর ভাঙনে লণ্ডভণ্ড চৌহালী উপজেলার কোন অফিস কোথায় স্থানান্তর করা হয়েছে তা এখনও সবার জানা হয়নি।
চরধীতপুর দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক নুরুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "উপজেলা হেডকোয়ার্টার অনেক সাজানো গোছানো ছিল। পাশেই ছিল থানা পুলিশ ও হাসপাতাল। যমুনার ভাঙনের কারণে এখন অফিসগুলো ছিন্নভিন্ন, যা খুঁজে বের করতেই দিন কেটে যায়। কাজ করব কখন?"
চৌহালী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ শাহাবুদ্দীন বলেন, "সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকারের বিভিন্ন অফিস কলেজে স্থাপনের অনুমতি দেয়া হয়েছে। উপজেলা পরিষদ কলেজের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য দুটি টিনের ঘর তুলে দিয়েছে। সেখানে আপাতত পাঠদান চলছে।"
এদিকে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নদীতে বিলীনের পর খাসকাউলিয়া সিদ্দিকীয়া ফাজিল মাদ্রাসার টিনের ঘরে স্থানান্তর করা হয়েছে। কিন্তু সেখানে এখনও জরুরি বিভাগের কার্যক্রম চালু হয়নি।
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মাঝের চরের মোহাম্মদ আলী ও মমতাজ বেগম বলেন, "বাড়ি থেকে বন্যার পানি নাইমা গেছে, পোলাপাইনদের অসুখ-বিসুখ ঘিরে ধরছে। হাসপাতালই নাই ঔষুধ পাব কোথায়?"
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কাশেম ওবাইদ বলেন, ২০১৩ সালের জুলাই থেকে ছোট্ট একটি কক্ষে শিক্ষা অফিসের কার্যক্রম চলছে। চরাঞ্চলের শিক্ষকরা অফিসিয়াল কাজে এখানে আসলেও তাদের বসার পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেই। স্টাফদের নিয়ে নানা সমস্যায় অফিস করতে হচ্ছে।
চৌহালী থানার ওসি শামছুল হক বলেন, "থানা কমপ্লেক্স নদীতে বিলীনের পর ডিগ্রি কলেজ থেকে অনেক কষ্ট করে জনগণকে আইনি সেবা দিয়ে যাচ্ছি। এভাবে কাজ করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত নানা সমস্যা হচ্ছে। নিজেদের থাকার জায়গা নেই। যেখানে অফিস, সেখানেই থাকতে হচ্ছে। কোনো আসামি ধরলেও তাকে রাখার জায়গা নেই।"
চৌহালী উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুর রহমান বলেন, উপজেলা পরিষদের প্রায় সকল স্থাপনা যমুনা গর্ভে চলে যাওয়ায় অনেকটা ভ্রাম্যমাণভাবেই চলছে অফিসিয়াল সব কার্যক্রম। সকলের ভোগান্তি দূর করতে নিরাপদ স্থানে দ্রুত অবকাঠামো নির্মাণ করা প্রয়োজন।"
চৌহালী উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, "এ উপজেলাটি এখন অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ার উপক্রম। এ অবস্থার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড দায় এড়াতে পারে না। সঠিক নিয়মে কাজ করলে এ অবস্থার সৃষ্টি হতো না। তাদের গাফিলতির কারণে উপজেলা রক্ষা করা সম্ভব হয়নি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের টাঙ্গাইলের (চৌহালী উপজেলা এর আওতাধীন) নির্বাহী প্রকৌশলী জ্যোতি প্রকাশ ঘোষ বলেন, যমুনা নদীর গতি-প্রকৃতি বোঝা মুশকিল। ভাঙন ঠেকাতে চেষ্টা করা হলেও তা রোধ করা যায়নি। দাতা সংস্থার অর্থায়নে এ বছরই যমুনা-মেঘনা মিটিগেশন প্রকল্পের আওতায় যমুনার তীর রক্ষায় পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হবে।
জেলা প্রশাসক বিল্লাল হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, পুনরায় চৌহালী উপজেলা পরিষদ স্থাপনের জন্য উপজেলার খাসকাউলিয়া ইউনিয়নের চরকোদালিয়া মৌজায় ছয় একর জায়গা অধিগ্রহণের জন্য প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে পরবর্তীতে সেখানেই উপজেলা পরিষদ স্থাপিত হবে।