শনিবার ওই কলেজের শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া।
পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালেরও এই অনুষ্ঠানে থাকার কথা ছিল, কিন্তু তিনি উপস্থিত হতে পারেননি। বর্তমান চার মন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর।
উপমহাদেশের বিখ্যাত লোকসাহিত্যিক ও লোকসাহিত্য সংগ্রাহক অধ্যাপক মনসুরউদ্দীনের নামে প্রতিষ্ঠিত এই কলেজে একসাথ হয়েছিলেন তারা।
সকাল থেকে বৃষ্টি ঝরছিল, তাই ঘোষণা থাকলেও এতজন মন্ত্রীকে একসঙ্গে দেখা যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় ছিল হাশিমপুরবাসীর। কিন্তু সব মন্ত্রীই উপস্থিত ছিলেন যথাসময়েই।
১৯৪৯ থেকে ১৯৫১- দুই বছর সিলেটে শিক্ষক হিসেবে মনসুরউদ্দীনকে পেয়েছিলেন মুহিত। তার নামে প্রতিষ্ঠিত কলেজে এসে প্রিয় শিক্ষকের ঋণ কিছুটা হলেও শোধ করতে পেরেছেন বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী।
“তিনি চরিত্র গঠনের শিক্ষা দিতেন, জ্ঞানের শিক্ষা দিতেন। এই শিক্ষক আমার জীবনে অনেক প্রভাব ফেলেছে,” বলেন টানা দ্বিতীয় মেয়াদে বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী।
বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে ঘুরে ৫ হাজার লোকগীতি ও গাঁথা সংগ্রহ এবং সংকলন করে ১৭ খণ্ডের ‘হারামণি’ প্রকাশ করেন ড. মনসুরউদ্দীন।
বাংলা লোকগীতি সংগ্রহের ‘ভোরের পাখি’ হিসেবে খ্যাত এই ব্যক্তি স্বাধীনতা পুরস্কার, একুশে পদকসহ রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ড্ক্টরেট উপাধিও পেয়েছেন।
মন্ত্রীদের পাশাপাশি অনুষ্ঠানে ছিলেন কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন,ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আহসানুল হক চৌধুরীও।
কলেজটির প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম এনবিআর চেয়ারম্যান গোলাম হোসেনও ছিলেন অনুষ্ঠানে, যিনি মনসুরউদ্দীনের জামাতা।
সরকারের কোনো ধরনের অনুদান ছাড়াই প্রতিষ্ঠিত কলেজটিতে ছাত্রীদের শিক্ষার উপকরণসহ অসচ্ছলদের থাকা-খাওয়ারও ব্যবস্থা রয়েছে।
শিক্ষকরা জানান, চাঁদপুরের ৩ থানা মিলিয়ে একমাত্র মহিলা কলেজটিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪০৪। এবারসহ গত ৩ বছর উচ্চ মাধ্যমিকে শতভাগ পাসের কৃতিত্ব দেখিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
কলেজের বাণিজ্য বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী তানহা মজুমদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই কলেজের ফলাফল খুবই ভালো। পরিবেশও ভালো সে কারণে আমি কুমিল্লার চান্দিনা থেকে এই কলেজে পড়তে এসেছি।”
মানবিক বিভাগের হালিমা চৌধুরী বলেন, “শিক্ষকরা খুবই আন্তরিক। যত্ন নিয়ে পড়ালেখা শেখান।”
বিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী আমেনা আকতার বলেন, “আমার বাড়ি প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে। কলেজ হোস্টেলে থেকেই পড়ালেখা করি। কোনো সমস্যা হয় না।”
অজপাড়া গাঁর কলেজটি দেখে উচ্ছ্বসিত বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, “বাংলাদেশকে কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না। তার বড় প্রমাণ কচুয়ার প্রত্যন্ত গ্রামের কলেজে ছাত্রীদের এত উপস্থিতি, এত সাফল্য।”
মহিলা কলেজের অনুষ্ঠানে বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী মুহিত অর্থনীতিতে নারীদের অবদান বাড়ানোর ওপর জোর দিয়ে বলেন, “আমাদের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশ, এটাকে ৮ থেকে ১০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করতে হবে। আর সেজন্য এগিয়ে আসতে হবে নারীদের।
“এদেশের ৫০ শতাংশ নারী। তাই নারীরা পেছনে পড়ে থাকলে বাকি ৫০ শতাংশ পুরুষ কিছুই করতে পারবে না।”