ওই সচিবদের চাকরিচ্যুত করা উচিত: মেনন

সনদ জালিয়াতির জন্য চার সচিব ও একজন যুগ্ম সচিবকে বরখাস্ত করার পক্ষে অবস্থান জানিয়েছেন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Sept 2014, 05:58 PM
Updated : 20 Sept 2014, 05:58 PM

প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ের এই পাঁচ কর্মকর্তার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সনদ ও গেজেট বাতিলের সিদ্ধান্ত এক সপ্তাহ আগে জাতীয় মুক্তিযুদ্ধ কাউন্সিলের সভায় নেওয়ার পর এই বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের গড়িমসির মধ্যে বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী তার অবস্থান জানালেন।

শনিবার বিয়াম মিলনায়তনে বিবিসির সংলাপে মেনন বলেন, “ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, এদের চাকরিচ্যুত করা উচিত। দুদক এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছে; আশা করি, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নেবে।”

দুর্নীতি দমন কমিশনের সুপারিশে জাতীয় মুক্তিযুদ্ধ কাউন্সিলের গত রোববারের সভায় সিদ্ধান্তের পর এই পাঁচ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এখনও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সরকার।

এই কর্মকর্তারা হলেন- স্বাস্থ্য সচিব নিয়াজ উদ্দিন মিয়া, সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) সচিব এ কে এম আমির হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব (বর্তমানে প্রতিমন্ত্রী মর্যাদায় বেসরকারিকরণ কমিশনের চেয়ারম্যান) মোল্লা ওয়াহিদুজ্জামান, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব কে এইচ মাসুদ সিদ্দিকী (বর্তমানে ওএসডি) এবং একই মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব (ওএসডি) আবুল কাসেম তালুকদার।

সরকারি চাকরিবিধি অনুযায়ী এদের বিরুদ্ধে আদৌ ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না, তা স্পষ্ট না করে জনপ্রশাসন সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী গত বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের চিঠির অপেক্ষা করছেন তারা।

সনদ বাতিলের সিদ্ধান্তের পর জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমত আরা সাদেক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “তাদের (পাঁচ কর্মকর্তা) সনদ বাতিল হয়েছে মাত্র, এখন এদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি, হবে না, সেটাও বিবেচনার বিষয়।”

তবে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ব্যবস্থা নিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে ইতোমধ্যেই বলা হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এদের বিরুদ্ধে মামলা না করলে তারা মামলা করবেন।

তবে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এই পাঁচ কর্মকর্তার মুক্তিযোদ্ধার সনদ বাতিল করে আদেশ জারি করেনি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

এ বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “ফাইল রেডি আছে, রোববার এদের সনদ ও গেজেট বাতিল করে আদেশ জারি করা হবে।”

সরকারের এই পাঁচ কর্মকর্তা অবৈধ প্রক্রিয়ায় মুক্তিযোদ্ধার সনদ নেন বলে দুদকের এক তদন্তে বেরিয়ে আসার পর তাদের সনদ বাতিলের সুপারিশ করে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।

’৮১ ব্যাচের কর্মকর্তা মোল্লা ওয়াহিদুজ্জামান গত জানুয়ারিতে পিআরএল-এ যাওয়ার পর গত ১৯ জানুয়ারি প্রতিমন্ত্রী মর্যাদায় বেসরকারিকরণ কমিশনের চেয়ারম্যান হিসাবে চুক্তিতে নিয়োগ পান।

’৮২ ব্যাচের কর্মকর্তা মাসুদ সিদ্দিকী আগামী ৩০ অক্টোবর অবসরোত্তর ছুটিতে (পিআরএল) যাবেন।

আর ’৮২ বিশেষ ব্যাচের কর্মকর্তা নিয়াজউদ্দিনের আগামী ৩০ ডিসেম্বর অবসরত্তোর ছুটিতে (পিআরএল) যাওয়ার কথা রয়েছে।

এছাড়া মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক যুগ্ম-সচিব আবুল কাশেমকে বিদেশি বন্ধুদের দেওয়া ক্রেস্টে স্বর্ণ জালিয়াতির অভিযোগে গত গত ২১ এপ্রিল ওএসডি করা হয়েছে।

এদিকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, জালিয়াতি করে সনদ নিলেও মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে চার সচিব ও এক যুগ্ম-সচিব চাকরির মেয়াদ এখনো বাড়েনি।

২০১১ সালের ১৯ ডিসেম্বর মন্ত্রিসভার অনুমোদন নিয়ে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের চাকরির বয়স ৫৭ থেকে ৫৯ বছর করা হয়। তবে অধ্যাদেশ জারির কারণে তা ২০১১ সালের ২৬ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হচ্ছে।

এর আগে ২০১০ সালে মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বয়স ৫৯-এ উন্নীত করা হয়। গত বছরের ২১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাদের অবসরের বয়সসীমা এক বছর বাড়িয়ে ৬০ বছর করার ঘোষণা দেন।

জালিয়াতি করে মুক্তিযোদ্ধার সনদ নেয়া পাঁচ শীর্ষ কর্মকর্তা কর্মজীবনের শেষ সময়ে এসে চাকরির মেয়াদ এক বছর বাড়াতেই মুক্তিযোদ্ধার সনদ নেন বলে অভিযোগ।

মাসুদ সিদ্দিকী মুক্তিযোদ্ধার সনদ নেওয়ার সময় ওই মন্ত্রণালয়েরই সচিবের দায়িত্বে ছিলেন।

সরকারি কর্মচারী বিধি অনুযায়ী, এই পাঁচ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা-ভঙ্গের অভিযোগে বিভাগীয় মামলা ছাড়াও প্রতারণার মামলা হতে পারে।